সরকার তাদের পছন্দের লোককে দিয়ে তাঁর জানাযা কার্যক্রম সম্পন্ন করলো। কিন্তু, জনগণ এতে সন্তুষ্ট ছিলো না।
তাঁর জানাযা পড়ান মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে তাহের। মানুষজন তাকে তেমন পছন্দ করতো না। ফলে, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহিমাহুল্লাহকে দাফন করার পরদিন থেকে মানুষজন তাঁর কবরের কাছে গিয়ে যিয়ারত করতো। এভাবে কয়েকদিন যিয়ারত চলে।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ কারাগারে ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যুর খবর শোনামাত্র দলে দলে মানুষ কারাগারে (দুর্গ) আসতে লাগলো। এতো মানুষের ঢল দেখে কারা কর্তৃপক্ষ দুর্গের গেইট খুলে দিতে বাধ্য হলো। হুড়মুড় করে মানুষ দুর্গে ঢুকলো। সেখানে ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহর প্রথম জানাযা হয়। জানাযা পড়ান শায়খ মুহাম্মদ ইবনে তামাম।
জামে উমাবিতে হাজারো মানুষের ঢল। মানুষের ঢল নিয়ন্ত্রণের বাইরে। লাশ নিয়ে বের হবার মতো অবস্থা ছিলো না। শেষপর্যন্ত পুলিশী নিরাপত্তায় লাশ নিয়ে আসা হয় জামে উমাবিতে। দোকানপাট, হোটেল, রেস্টুরেন্ট সব বন্ধ ছিলো। দূর-দূরান্ত থেকে আগত লোকদের খাবারের কোনো সুযোগ ছিলো না। অনেকেই ঐদিন রোযা রাখার নিয়্যত করে।
যুহরের নামাজের পর তাঁর দ্বিতীয় জানাযা হয় জামে উমাবিতে। এই জানাযায় পড়ান শায়খ আলাউদ্দিন খাররাত্ব। সবচেয়ে বেশি মানুষ হয় এখানে। ধারণা করা হয় ৬০ হাজার থেকে ১ লক্ষ মানুষ তাঁর জানাযায় অংশগ্রহণ করে। সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে জানাযায় উপস্থিতির সংখ্যা ছিলো অনেক বেশি। যার মধ্যে ধারণা করা হয় ১৫ হাজার নারী তাঁর জানাযায় উপস্থিত ছিলো!
কবরস্থানে নিয়ে যাবার সময় শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহর তৃতীয় জানাযা পড়ানো হয়। এই জানাযা পড়ান তাঁর ছোটো ভাই যাইনুদ্দিন আব্দুর রহমান।
ইমাম ইবনে তাইমিয়ার ইন্তেকালের খবর ছড়িয়ে পড়ে তৎকালীন মুসলিম দেশগুলোতে। নিকট ও দূরের অনেকগুলো দেশে তাঁর গায়েবানা জানাযা পড়া হয়। যেমন: ইয়েমেন, চীন।
মুসলিম ইতিহাসে অন্যতম নির্ভীক আলেম ছিলেন ইযযুদ্দীন ইবনে আব্দিস সালাম রাহিমাহুল্লাহ। তিনি শাসকের সামনে সত্য কথা বলায় সোচ্চার ছিলেন। যার ফলে তাঁকে নির্বাসনে পাঠানো হয়। তাঁর যুগের অন্যতম জনপ্রিয় আলেম ছিলেন তিনি। অনেকক্ষেত্রে মানুষজন সরকারের নির্দেশের চেয়ে তাঁর ফতোয়াকে প্রাধান্য দিতো। তাঁর ইন্তেকালের পর পুরো মিশর ও সিরিয়ায় তাঁর গায়েবানা জানাযা পড়া হয়। এছাড়াও মক্কা, মদীনা এবং ইয়েমেনে তাঁর গায়েবানা জানাযা হয়।
মুসলিম ইতিহাসের অন্যতম পলিম্যাথ ছিলেন ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ। ইন্তেকালের পরদিন তাঁর প্রথম জানাযা হয় জামে উমাবিতে। দ্বিতীয় জানাযা হয় জামে জাররাহ মসজিদে।
জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহিমাহুল্লাহ ইন্তেকালের পর তাঁর দুটো জানাযা হয়। এমনকি দামেস্কের উমাবি মসজিদে তাঁর গায়েবানা জানাযাও পড়া হয়েছিলো।
আলেমগণের জানাযা পড়ার জন্য সাধারণ মানুষের আগ্রহ সব যুগেই দেখা যায়। তৎকালে (বলতে গেলে) যুদ্ধ ছাড়া মানুষের সমাবেশের সুযোগ ছিলো না। রাজনৈতিক ‘মহাসমাবেশ’ বলতে কিছু ছিলো না। একেকটি অঞ্চলের সাধারণ মানুষ একত্রিত হবার উপলক্ষের মধ্যে অন্যতম উপলক্ষ ছিলো আলেমগণের জানাযা। ঈদের নামাজের জন্য তো মানুষ সফর করতো না, কিন্তু জানাযার জন্য করতো।
মিসর, সিরিয়া অঞ্চলগুলো ছিলো শাফেয়ী মাজহাব অধ্যুষিত। একাধিক জানাযা এবং গায়েবানা জানাযা শাফেয়ী মাজহাব অনুযায়ী অনুমোদিত ছিলো। ফলে, মধ্যযুগের অসংখ্য আলেমের একাধিক জানাযা এবং গায়েবানা জানাযার ঘটনা তাঁদের জীবনী পড়তে গেলে পাওয়া যায়। কিন্তু, হানাফী মাজহাবে এগুলো অনুমোদিত না; সেটার পক্ষে আলেমগণের দলিল এবং যুক্তি আছে।