ফজরে মৃত্যু!
আজকের পর্বে আবদুল্লাহ ইবনে আবি সারহ-এর একটি দুয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে জীবনের সুন্দর সমাপ্তি চাওয়ার সৌন্দর্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
اللَّهُمَّ اجْعَلْ خَاتِمَةَ عَمَلِيْ صَلاةَ الفَجْرِ
মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজাআ’ল খা-তিমাতা আমালী- স্বালাতাল-ফাজরি
অর্থ: হে আল্লাহ! আমার জীবনের শেষ আমল যেন হয় ফজরের নামাজের পরিসমাপ্তিতে।
পুণ্যবানদের প্রার্থনার মধ্যে একটি প্রবনতা লক্ষ্য করা যায় এবং তা হল আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালার কাছে জীবনের একটি সুন্দর পরিসমাপ্তি প্রার্থনা। রাসুল (ﷺ) নিজেই আমাদেরকে আল্লাহর কাছে জীবনের সুন্দর সমাপ্তি চাইতে শিখিয়েছেন। মানুষের জীবনে অনেক উত্থান পতন থাকতে পারে, এবং কেউ চায় না যে আল্লাহ তার জীবনের নিচু অবস্থায় তার কাছে মৃত্যুর ফেরেশতা পাঠাক। আল্লাহর কাছে জীবনের ভাল সমাপ্তি চাওয়ার অনেক উপায় রয়েছে। যারা ধার্মিক মৃত্যু পথযাত্রীর শেষ দিনগুলোতে তার আশেপাশে থাকেন, তাদের কাছে মনে হতে পারে যে মৃত্যুর বার্তা যেন ধার্মিক লোকটিকে জানানো হয়েছে, তার যে মৃত্যু হতে যাচ্ছে এটা যেন সে জানে।
এটা একটা অনুভূতির ব্যাপার, সুবহানাল্লাহ, এবং বিষয়টি ব্যাখ্যার অতীত। এমন নয় যে মানুষের সাথে এর সুস্পষ্ট সংযোগ রয়েছে, এটি এমন কিছু যা অনেক সালাফ এবং ধার্মিক পূর্বসূরিদের পক্ষ থেকে বর্ণিত হয়েছে। আজকের বিশেষ এই দু’আটি এমন একজনের যিনি হুযায়ফাহ ইবনুল ইয়ামানের (রা:) মত জানতেন যে তার সময় ঘনিয়ে এসেছে। তাই তিনি খুব সাধারণ এই দু’আটি করেছিলেন। এক রাতে, আবদুল্লাহ ইবনে আবী সারহ (রা.) তার রাতের সালাত আদায় করছিলেন এবং সেই কিয়ামে তিনি এতটাই আনন্দিত হয়েছিলেন যে তিনি সরাসরি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন এই ফজরের সালাত যেন হয় তার শেষ আমল।
যেহেতু তিনি রাত জেগে নামাজ পড়তেন, সেই রাতে তিনি আল্লাহর নৈকট্য অনুভব করেছিলেন। যারা রাত জেগে নামাজ পড়েন, তারা জানেন ফজর যতটা না দিনের শুরু, তার চেয়ে বেশি রাতের উপসংহার। তিনি তার রাতের কিয়াম শেষ করলেন, অজু করলেন, এরপর ফজরের সালাত আদায় করলেন, এবং ফজরের সালাত শেষে মৃত্যুবরণ করলেন। সুবহানাল্লাহ!
এই মৃত্যু কোন যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যু নয়, ছুরিকাঘাতে মৃত্যুও নয়, বা অতিনাটকীয় কোন ঘটনাও নয়। এমন কিছু লোক আছে যারা সেই বিশেষ মুহূর্তটি অনুভব করে এবং তারা সেই শেষ শুভ সমাপ্তির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। উরওয়াহ (রা:) সেজদায় মৃত্যুবরণ করার জন্য আল্লাহর দু‘আ করতেন।
এটা অবশ্যই উত্তম একটি দু’আ যে নামাজরত অবস্থায় যেন আমাদের মৃত্যু হয়, নামাজই যেন হয় আমাদের জীবনের শেষ আমল। তাই আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদেরকে সেই সময়ে, সেই বিনম্র অবস্থায় ফিরিয়ে নেন যা তাঁর কাছে সবচেয়ে প্রিয়। আল্লাহ যেন আমাদের এমন জীবন দান করেন যা তাঁর কাছে আনন্দদায়ক, এবং আমাদের জীবনের সবচেয়ে আনন্দঘন সময়ে আমাদের মৃত্যু দান করেন, এবং তাঁর সাথে সাক্ষাতের দিনটি যেন হয় আমাদের জীবনের সবচেয়ে সেরা দিন।
আল্লাহুম্মা আমীন!