সাধারণত ঘুম নিয়ে আমাদের বেশি ভাবতে হয় না। এটাকে জীবনের একটি স্বাভাবিক অঙ্গ বলেই আমরা মনে করি। আমাদের শরীর এবং মন সুস্থ রাখতে ঘুমের প্রয়োজন। একজন মানুষ তার দিন কতোটা সতেজভাবে কাটাবে তা নির্ভর করে ব্যক্তি রাতে কতোটা আরামদায়কভাবে ঘুমিয়েছে। একজন মুমিন ব্যক্তি রাতে ঘুমোতে যাবার আগে নির্দিষ্ট কিছু কাজের মধ্যে দিয়ে তার রাতের শুরু করতে পারে, যেমন-
সে খুব ক্লান্ত সাথে সাথে ঘুমাতে পারে!
সে হয়তো ওযু করে, যিকির আযকার করতে পারে কেনোনা এটি ঘুমোতে যাবার সময়ের একটি সুন্নাহ!
সে হয়তো শুয়ে তার ফোনে সময় কাটাতে পারে।
ঘুমোতে যাবার পূর্ব মুহূর্তে একজন মানুষ চাইলেই ভিন্ন ভিন্ন কাজ করে তার সময়কে কাজে লাগাতে পারে। আপনি যদি হাদিসের দিকে তাকান তাহলে দেখতে পারবেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
যখন একজন ব্যক্তি রাতে ঘুমোতে যায় তখন তার কাছে একজন ফেরেশতা এবং একজন শয়তান আসে। ফেরেশতা বান্দাকে বলে- কল্যাণ দিয়ে দিনের সমাপ্তি করো, কল্যাণ দিয়ে দিনের সমাপ্তি করো, কল্যাণ দিয়ে দিনের সমাপ্তি করো। এবং শয়তান বান্দাকে বলে- অকল্যাণ দিয়ে দিনের সমাপ্তি করো, অকল্যাণ দিয়ে দিনের সমাপ্তি করো, অকল্যাণ দিয়ে দিনের সমাপ্তি করো।
(সহীহ ইবনে হিব্বান-৩৪৩)
বলা হয়ে থাকে, আমাদের কাজের ফল নির্ভর করে তার সমাপ্তি দিয়ে। কুরআনে ঘুমের জন্য ‘ওয়াফাত’ তথা ‘ক্ষণিকের মৃত্যু’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ, রাতে ঘুমিয়ে পরা মানুষ জানে না পরদিন দেখার সৌভাগ্য তার আদৌ হবে কি না! আর এজন্যই একজন ফেরেশতা শয়নকালে বান্দাকে ওয়াসওয়াসা দিতে থাকে যাতে করে সে তার রাতের শুরু এবং দিনের শেষ কিছু যিকির-আযকার রবের স্মরণে মধ্যে দিয়ে করে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘তোমরা তোমাদের শরীরকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন কর, তাহলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তোমাদেরকে পরিচ্ছন্ন করে দেবেন। আর যখন আল্লাহর কোনো বান্দা ওজু করে বিছানায় ঘুমাতে যায়, আল্লাহ ওই ব্যক্তির সঙ্গে (তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনায়) একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করে দেন।
ঘুমের মধ্যে ওই বান্দা যখনই নড়াচড়া করে কিংবা এপাশ-ওপাশ করে তখনই ওই ফেরেশতা তার জন্য এ বলে দোয়া করে- আল্লাহুম্মাগফির লি-আবদিকা, অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনার এ বান্দাকে ক্ষমা করে দিন। কেননা সে পবিত্রতা অর্জন করে ঘুমিয়েছে।’
(তাবারানি)
অন্যান্য হাদিস থেকে এসেছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি রাতে শয়নের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করে আল্লাহ সে ব্যক্তির জন্য একজন প্রহরী নিয়োগ করেন এবং সে প্রহরী সারারাত ব্যক্তির রক্ষণাবেক্ষণ করেন।’
(বুখারী-৪০০৮)
অর্থাৎ, শুধুমাত্র তিন মিনিটের ওযু করার মাধ্যমে কিংবা পাঁচ দশ মিনিট যিকির-আযকার করার মাধ্যমে আপনি একজন ফেরেশতাকে প্রহরী স্বরূপ নিযুক্ত পাবেন যিনি সারারাত আপনার হয়ে প্রার্থনা করবেন।
উপরন্তু আপনি সে রাতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লে আপনার রূহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে পবিত্র অবস্থায় যাবে; এমন এক অবস্থা যেখানে আপনার রূহ সাক্ষ্য দিবে আপনি আপনার দিনের শেষ এবং রাতের শুরু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার স্মরণে কাটিয়েছেন। আর যদি জীবিত অবস্থায় থাকেন তাহলে ইতোমধ্যে আপনি রবের সন্তুষ্টির চাদরে আচ্ছাদিত থাকবেন বি’ইযনিল্লাহ।
ফেরেশতাদের বিচরণ
মূলঃ ওমর সুলাইমান