ইউরোপের সাইপ্রাসে নারী সাহাবীর কবর

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হঠাৎ হাসতে হাসতে ঘুম থেকে উঠেন। উম্মু হারাম বিনতে মিলহান বেশ অবাক হোন। তিনি জানতে চাইলেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার হাসির কারণ কী?”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর হাসির কারণ জানালেন। তিনি স্বপ্ন দেখেন এবং বলেন-

“আমার উম্মতের কিছু লোককে যুদ্ধরত অবস্থায় আমার সামনে পেশ করা হলো। তারা এ সমুদ্রের মাঝে এমন অবস্থায় আরোহী, যেমন বাদশাহ তখতের উপর।”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই স্বপ্ন একটি ভবিষ্যৎবাণী। মুসলিমদের তখন কোনো নৌবাহিনী ছিলো না। এমনকি আবু বকর, উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমার খেলাফতকালেও মুসলিমদের নৌবাহিনী ছিলো না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন একটি ভবিষ্যৎবাণী করেন, যা সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে বিস্ময়কর।

উম্মু হারাম বিনতে মিলহান রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী শুনে অনুরোধ করেন-

“ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর কাছে দু’আ করুন, আমাকে যেন সেই দলের অন্তর্ভুক্ত করেন।”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর খালার জন্য দু’আ করেন। আবার তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। আবারও হাসতে হাসতে ঘুম থেকে উঠলেন। উম্মু হারাম বিনতে মিলহান হাসির কারণ জিজ্ঞেস করলে পূর্বের মতো বললেন এবং জানালেন যে-

“তুমি প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত হবে।”
[সহিহ বুখারি: ২৭৮৮]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর খালা উম্মু হারাম বিনতে মিলহান রাদিয়াল্লাহু আনহাকে শাহাদাতের সুসংবাদ দেন। ফলে, উম্মু হারাম জীবিত থাকাবস্থায় ‘শহীদা’ (মহিলা শহীদ) উপাধি লাভ করেন। কেউ কেউ তাঁকে এই নামে ডাকতো। [ডক্টর আব্দুল মাবুদ, আসহাবে রাসূলের জীবনকথা: ৬/১৫১]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তেকাল করেন। আবু বকর, উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা ইন্তেকাল করেন। উম্মু হারাম বিনতে মিলহান আশায় বসে আছেন, কবে সেই সুবর্ণ সুযোগ আসবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভবিষ্যৎবাণীর প্রায় ২০-২৫ বছর পরের ঘটনা। উসমান ইবনে আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফতকালে মুআবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু নৌ-অভিযানের প্রস্তাব দেন। এর আগে অনেকবার নৌ-অভিযানের প্রস্তাব আসলেও ক্ষতির আশঙ্কায় সেটা কার্যকর হয়নি। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুও এই আশঙ্কায় অনুমতি দেননি। তবে এবার উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু মুআবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুকে অনুমতি দেন।

মুআবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু অভিযান চালান বর্তমান ইউরোপের সাইপ্রাসে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কয়েকজন সাহাবি সেই অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন উবাইদা ইবনে আস-সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু; উম্মু হারাম বিনতে মিলহান রাদিয়াল্লাহু আনহার স্বামী

মুসলিম বাহিনীর প্রথম নৌ-অভিযানে স্বামীর সাথে উম্মু হারাম বিনতে মিলহান রাদিয়াল্লাহু আনহাও অংশগ্রহণ করেন। মুসলিম বাহিনী যুদ্ধ ছাড়াই সাইপ্রাস জয় করে। বিজয়ের পর মুসলিম বাহিনী বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন একদিন উম্মু হারাম বিনতে মিলহান তাঁর ঘোড়া থেকে পড়ে যান এবং ঘাড়ে আঘাত পান। সেই জখমের ফলে তিনি ইন্তেকাল করেন। [সহিহ বুখারি: ২৭৮৮, ৭০০২]

উম্মু হারাম বিনতে মিলহান প্রথম মুসলিম নৌ-যোদ্ধা নারী। মদীনায় জন্মগ্রহণ করা একজন নারী সাহাবির কবর ইউরোপের সাইপ্রাসে। তখনকার যুগের প্রেক্ষাপটে এটা বিস্ময়কর।

লিখেছেন

আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

Exit mobile version