এক বছর থাকলেও এক আয়াত নিয়েই কথা বলতেন!
আমাদের দেশে শীতকাল এলে আমরা অনেক ওয়ায-মাহফিল শুনে থাকি। ওয়াযে যারা আলোচনা করেন তাদেরকে বলা হয় ওয়ায়েয। আগের দিনেও এমন অনেক ওয়ায়েয ছিলেন। তেমনই একজন ওয়ায়েয ছিলেন শাইখুল ইসলাম ইমামুল আল্লামাহ সাবূনী রহিমাহুল্লাহ। শুনলে অবাক হতে হয়, তিনি একশো ছাব্বিশ (১২৬) বছর বেঁচে ছিলেন। এর সত্তর (৭০) বছরই কাটিয়েছেন ওয়ায করে।
জুম’আর খুতবা ও ইমামতিতেও কাটিয়েছেন বিশ (২০) বছর। বাকী জীবনে অনেক লেখালেখিও করেছেন। [সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, যাহাবী, ১৮/৪১; যাইলু তারীখু মাওলিদুল উলামায়ি ওয়া ওয়াফাইয়াতিহিম, কাত্তানী, পৃঃ ২০৩]
একবার হজ্ব শেষ করে তিনি সিলমাস নামে এক এলাকায় যান। কয়েকটি মাস সেখানে বসবাস করেন। প্রতিদিনই সেখানে ওয়ায করতেন। লোকেরা মন দিয়ে তাঁর আলোচনা শুনতো। তাঁর সাথে তাঁর ভাই আবূ ইয়া’লাও ছিলেন। তাঁর ভাই তাঁর সাথে এগুলো নিয়ে হাসি-মজাক করতেন। ইমাম ইসমাঈল আস-সাবূনী চলে যাওয়ার সময় সিলমাসবাসীকে বলেন,
“হে সিলমাসবাসী, আমি আপনাদের মাঝে কয়েকটি মাস থাকলাম। এ সময়ে আমি শুধু একটি আয়াত এবং এই আয়াতেরই বিভিন্ন বিষয়-আষয় নিয়ে ওয়ায-নসীহত করেছি। পুরো এক বছর থাকলেও এ আয়াত বাদ দিয়ে অন্য কোনো আলোচনায় আমি যেতাম না। আলহামদুলিল্লাহ (সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য)!” [সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, যাহাবী, ১৮/৪২]
কুরআনের একটা বড় আয়াতও যদি ধরি, সেটা আর কতোই বা বড়, কিন্তু এই আয়াত নিয়ে এতো আলোচনা করতে পারা শুধু ইমাম সাবূনী অনেক জানেন এটাই বুঝায় না, এতে কুরআনের অলৌকিকতাও বোঝা যায়। কুরআন আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে বলেই কুরআন এমন।
এক বছর এক আয়াত নিয়ে কথা বলতে গেলে তো অনেক কিছুই জানতে হবে, এতো কিছু তিনি কিভাবে জানলেন? তাঁর ছাত্র আব্দুল আযীয আল-কাত্তানী (৩৮৯-৪৬৬ হি) রহিমাহুল্লাহ বলেন,
“আমার শাইখ (ইল্মের) এদিক-ওদিক সব মুখস্ত করে ফেলতেন, পুনরায় এগুলো নিয়ে আর বসতেন না। তিনি কুরআন এবং কুরআনের তাফসীরের বই থেকেও অনেক কিছুই মুখস্ত করেছেন। তিনি হাদীসেরও হাফিয ছিলেন (লাখ খানেক হাদীস মুখস্ত থাকলে হাদীসের হাফিয বলা হয়)।” [যাইলু তারীখু মাওলিদুল উলামায়ি ওয়া ওয়াফাইয়াতিহিম, কাত্তানী, পৃঃ ২০৩]
আসলে আল্লাহ যদি কাউকে অনেক কিছু দেন তাঁকেও আল্লাহর জন্য অনেক কিছু দিতে হয়, অনেক কিছু ছাড়তে হয় এবং অনেক কষ্টও করতে হয়, তিনি নিজেই বলেন,
“আমি তাহারাত (অযু বা এরকম কিছু করা) ছাড়া কখনো কিতাবঘরেও ঢুকিনি, কখনো হাদীসও বলিনি, কোনো (ওয়াযের) মজলিসও বসাইনি, কখনো পড়াতেও বসিনি।” [তারীখু দিমাশক, ইবনু আসাকীর, ৯/৯]
ইমাম সাবূনী যেই আয়াত নিয়ে আলোচনা করেছিলেন সেটি কোন আয়াত ছিলো তা কোনো ইতিহাসের বই থেকে আমরা জানতে পারিনি।