দু’আ সর্বোত্তম ইবাদত। দু’আ এমনই একটি বরকতময় কাজ যে নবী কারিম (সা:) এটিকে ইবাদতের সমতুল্য বলেছেন।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘দুআও একটি ইবাদত। অতঃপর তিনি তেলাওয়াত করলেন, তোমাদের রব বলেনঃ তোমরা আমার নিকট দু’আ কর আমি তা কবুল করব। [তিরমিযী, ইবন মাজাহ, আবু দাউদ:১৪৭৯]
এটি ইবাদতের সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। অন্যান্য ইবাদতের মতো দু’আ করার জন্য কোনো পূর্বশর্ত নেই। উদাহরণস্বরূপ, নামাজ পড়ার আগে আপনাকে ওজু করতে হবে, আপনার কাপড় এবং নামাজের স্থান পরিষ্কার হতে হবে এবং আপনাকে কেবলামুখী হতে হবে। রোজা রাখার জন্য আপনাকে নিয়ত করতে হবে এবং দিনের নির্দিষ্ট সময়ে (সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত) রোজা রাখতে হবে। দু’আর জন্য, নির্দিষ্ট কোন সময় বা স্থানের প্রয়োজন নেই, আপনি যে কোন পরিস্থিতিতে দু’আ করতে পারেন। তবে, কিছু জিনিস রয়েছে যা দুআকে কার্যকর হতে বাধা দেয়, যেমন হারাম উপার্জন।
দু’আ ইমানের শক্তির নিদর্শন। আপনি যদি নিশ্চিতভাবে জানেন যে আপনার বস আপনাকে পছন্দ করেন এবং তার ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাহলে আপনি তাকে বেতন বৃদ্ধির জন্য অনুরোধ করবেন, তাই না? আপনি যখন আপনার প্রভুর অস্তিত্বে এবং কুরআন ও রসূলের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখেন, তখন আপনি অবশ্যই দু’আ করবেন। জেনে রাখুন যে একমাত্র আল্লাহই আপনার প্রয়োজন পূরণ করতে পারেন, তিনি সর্বশক্তিমান, তাঁর পক্ষে সবকিছুই সম্ভব।
এটা আল্লাহর নির্দেশ। মহান আল্লাহ বলেন –
وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِىٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَسۡتَكۡبِرُونَ عَنۡ عِبَادَتِى سَيَدۡخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ
আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহঙ্কার বশতঃ আমার ইবাদাত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’
[সূরা গাফির:৬০]
দু’আ নম্রতার লক্ষণ। এর প্রমাণ উপরের উদ্ধৃত আয়াতটি। যারা দু’আ করে না আল্লাহ তাদেরকে অহংকারী বলে অভিহিত করেছেন।
যে দু’আ করে আল্লাহ তার নিকটবর্তী। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা বলেছেন-
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِى عَنِّى فَإِنِّى قَرِيبٌۖ أُجِيبُ دَعۡوَةَ ٱلدَّاعِ إِذَا دَعَانِۖ فَلۡيَسۡتَجِيبُواْ لِى وَلۡيُؤۡمِنُواْ بِى لَعَلَّهُمۡ يَرۡشُدُونَ
আর যখন আমার বান্দাগণ তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, আমি তো নিশ্চয় নিকটবর্তী। আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার প্রতি ঈমান আনে। আশা করা যায় তারা সঠিক পথে চলবে।
[সূরা আল-বাকারাহ: আয়াত-১৮৬]
দু’আ আল্লাহর সুন্দর নাম ও গুণাবলীর প্রকাশ। আমরা যখন কোন প্রয়োজনে আল্লাহকে ডাকি তখন আমরা তাঁর নাম ও গুণাবলীর দাবি নিয়ে তাকে ডাকি। যখন আমরা আমাদের রিজিকের প্রয়োজনে তাঁকে ডাকি তখন আমরা আমাদের দু’আয় জোর দিয়ে বলি আর-রাজ্জাক। নীচে বসে আমরা আসমানের উপর যিনি আছেন তাঁকে ডাকছি এবং জোর দিয়ে বলছি আল-আলীম (সর্বজ্ঞ), আল বাসির (সর্বদ্রষ্টা), আস-সামি(সর্বশ্রোতা)…
দু’আ নবী এবং ধার্মিক পূর্বসূরিদের একটি সুন্নত। নবীজীর (সা:) জীবন থেকেও স্পষ্ট বোঝা যায় যে, তিনি প্রতিটি পরিস্থিতিতে কতটা দু’আ করতেন। এছাড়াও, কুরআনে নবীদের দু’আ করার অনেক উদাহরণ রয়েছে, কিছু উদাহরণ হল:
ইউসুফের দু’আ (আ:):
رَبِّ ٱلسِّجۡنُ أَحَبُّ إِلَىَّ مِمَّا يَدۡعُونَنِىٓ إِلَيۡهِۖ وَإِلَّا تَصۡرِفۡ عَنِّى كَيۡدَهُنَّ أَصۡبُ إِلَيۡهِنَّ وَأَكُن مِّنَ ٱلۡجَٰهِلِينَ হে আমার রব, তারা আমাকে যে কাজের প্রতি আহবান করছে তা থেকে কারাগারই আমার নিকট অধিক প্রিয়। আর যদি আপনি আমার থেকে তাদের চক্রান্ত প্রতিহত না করেন তবে আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং আমি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হব’। [সূরা ইউসুফ:৩৩]
মুসার (আ:) দু’আ:
رَبِّ إِنِّى لِمَآ أَنزَلۡتَ إِلَىَّ مِنۡ خَيۡرٍ فَقِيرٌ
হে আমার রব, নিশ্চয় আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহই নাযিল করবেন, আমি তার মুখাপেক্ষী’।
[সূরা কাসাস:২৪]
ইয়াকুবের (আ:) দু’আ:
إِنَّمَآ أَشۡكُواْ بَثِّى وَحُزۡنِىٓ إِلَى ٱللَّهِ আমি আল্লাহর কাছেই আমার দুঃখ বেদনার অভিযোগ জানাচ্ছি। [সূরা ইউসুফ:৮৬]
আল্লাহর কাছে দু’আ করা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ জাকারিয়াকে (আ:) প্রশংসা করেছেন তাঁর দু’আর জন্য।
فَٱسۡتَجَبۡنَا لَهُۥ وَوَهَبۡنَا لَهُۥ يَحۡيَىٰ وَأَصۡلَحۡنَا لَهُۥ زَوۡجَهُۥٓۚ إِنَّهُمۡ كَانُواْ يُسَٰرِعُونَ فِى ٱلۡخَيۡرَٰتِ وَيَدۡعُونَنَا رَغَبًا وَرَهَبًاۖ وَكَانُواْ لَنَا خَٰشِعِينَ
অতঃপর আমি তার আহবানে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে দান করেছিলাম ইয়াহইয়া। আর তার জন্য তার স্ত্রীকে উপযোগী করেছিলাম। তারা সৎকাজে প্রতিযোগিতা করত। আর আমাকে আশা ও ভীতি সহকারে ডাকত। আর তারা ছিল আমার নিকট বিনয়ী।
[সূরা আম্বিয়া:৯০]
দু’আ নিপীড়িতদের অস্ত্র। ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুআয (রাঃ)-কে ইয়ামানে প্রেরণের সময় বলেনঃ ‘অত্যাচারিতের বদ-দু’আকে ভয় কর। কেননা, তার বদ-দুআ এবং আল্লাহ তা’আলার মাঝখানে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই।’
[তিরমিজি:২০১৪]
দু’আ হলো দুশ্চিন্তা প্রশমনকারী। আপনি যখন আপনার সমস্যা এবং দুঃখ-কষ্ট আল্লাহর কাছে প্রকাশ করেন, তখন আপনি তাঁর সাথে একটি সংযোগ তৈরি করেন। আপনি তখন উপলব্ধি করতে পারেন যে আপনার দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই, কারন আপনি আপনার প্রভুকে সব খুলে বলেছেন এবং এবং আপনি জানেন যে তিনি এর যত্ন নেবেন।