দু’আর আদব – দু’আ কবুলের নিশ্চয়তা শেষে ও শুরুতে দরুদপাঠ।
দু’আ কবুল হওয়ার অন্যতম মাধ্যম হলো রাসূল ﷺ এর উপর দরুদ পাঠ করা।
হাদিসে এসেছে,
“সকল দু’আ পর্দার আড়ালে থাকবে (অর্থাৎ আল্লাহর দরবারে গৃহীত হবে না) যতক্ষণ না নবীর ﷺ উপর দরুদ পাঠ করবে”।
Table of Contents
কিবলামুখী হওয়া
অজু বা অজুহীন অবস্থায়, যেকোনো দিকে মুখ করে দাড়ানো, বসা বা শোয়া অবস্থায় মুমিন যিকির করতে পারেন। তবে কিবলার দিকে মুখ করে দু’আ করা উত্তম। বিশেষত যখন বিশেষভাবে আগ্রহ নিয়ে কোন দু’আ করা হয়।
রাসূল ﷺ বৃষ্টির জন্য, যু-দ্ধের ময়দানে আল্লাহর সাহায্যের জন্য দু’আ করার সময় অথবা কোন বিশেষ আবেগ বা বেদনার সময় অন্য অবস্থা থেকে ঘুরে কিবলামুখী হয়ে দু’আ করতেন। আবার অনেক সময় যে অবস্থায় আছেন ঐ অবস্থায় দু’আ করতেন।
এছাড়া সারারণ ভাবে সর্বাবস্থায় কিবলামুখী হয়ে বসার জন্য হাদীসে উৎসাহ দেয়া হয়েছে।
” প্রত্যেক বিষয়ের সাইয়্যেদ বা নেতা আছে। বসার নেতা কিবলামুখী হয়ে বসা”।
(তাবারানী,আল-মুজামুল আউসাত ৩/২৫)
দু’আর সময় হাত উঠানো
দু’আর একটি বিশেষ আদব হলো দুই হাত বুক পর্যন্ত বা আরো উপরে এগিয়ে নিয়ে, হাতের তালু মুখের দিকে রেখে দু’আ করা।
রাসূল (ﷺ) বলেছেনঃ
” আল্লাহ লাজুক, দয়াবান। যখন কোন মানুষ তাঁর দিকে দু’খানা হাত উঠায় তখন তিনি তা ব্যর্থ ও শূন্যভাবে ফিরিয়ে দিতে লজ্জা পান।”
(তিরমিযী ৪৯-কিতাব দাআওয়াত)
তবে রাসূল ﷺ ও তাঁর সাহাবীরা কখনো কখনো হাত তুলে দু’আ করতেন, কখনো হাত না তুলে দু’আ করতেন। তাই হাত না উঠানোর কারণে বাড়াবাড়ি করলে বা এতে খারাপ কিছু হলো ভাবলে তা খেলাফে সুন্নাত হবে।
এখানে উল্লেখ্য যে ; “মুনাজাত” মানে শুধু হাত তুলে প্রার্থনা করা না। “মুনাজাত” শব্দের অর্থ হচ্ছে “চুপিচুপি কথা বলা বা Whisper to each other”। এই শব্দ দ্বারা সকল প্রকার যিকির বা দু’আ বুঝানো হয়।সেটা হোক হাত উঠিয়ে বা নামিয়ে,শুয়ে বসে, হাঁটতে চলতে অথবা বান্দা যখন আল্লাহ কে স্মরণ করে, সব কিছুই মুনাজাত এর অন্তর্ভুক্ত।
নিজের জন্য নিজে দু’আ করা
আমরা সাধারণত ভেবে থাকি আমরা গুনাহগার বান্দা, আল্লাহ হয়তো আমার দু’আ কবুল করবেন না। নিজের জন্য নিজে না চেয়ে কোন বুজুর্গের কাছে চাওয়াকেই বেশি উপকারী মনে করি। কিন্তু নিজের চাওয়া, আকুতি বা ব্যথা গুলো আমরা রবের কাছে যেভাবে জানাতে পারব সেটা অন্য কেউ কখনোই জানাতে পারবেন না।
আয়েশা (রা) বলেন; আমি প্রশ্ন করলাম “হে আল্লাহর রাসূল, সর্বোত্তম দু’আ কী?” তিনি বলেন, “মানুষের নিজের জন্য নিজে দু’আ।” (মাজমাউজ যাওয়াইদ ১০/১৫২)
এছাড়া রাসূল (ﷺ) যখন কারো জন্য দু’আ করতেন তখন তিনি নিজেকে দিয়ে শুরু করতেন। এটাও একটা সুন্নাত আমল।
সর্বদা দু”আ করা
মুমিনের উচিত সকল অবস্থায় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা। হোক সেটা ভালো বা খারাপ সময়। যদি কেউ নিয়ামতের মধ্যে থাকে তাহলে সে সেই নিয়ামতের স্থায়িত্ব চাইবে এবং আল্লাহর শুকর আদায় করবে। আর যদি সে অকল্যাণের মধ্যে তাহলে তা থেকে থেকে পরিত্রাণের জন্য দু’আ করবে। কিন্তু আমরা সবাই সুখের সময়ে দু’আ করতে ভুলে যাই।কুরআনের বিভিন্ন স্থানে এই স্বভাবের ভীষণ ভাবে নিন্দা করা হয়েছে।
আল্লাহ বলেন ;
“যখন আমি মানুষকে নিয়ামত প্রদান করি তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও দূরে সরে যায়। আর যখন কোন অমঙ্গল বা কষ্ট তাকে স্পর্শ করে সে লম্বা চওড়া দু’আ করে।”
(সূরা ফুসসিলাত:৫১)
তাই আমাদের ভালো-মন্দ সব সময় দু’আ চাইতে হবে এবং সেটা বার বার (বিশেষত তিনবার) চাইতে হবে।
“নবীজী ﷺ যখন দু’আ করতেন তখন তিনবার দু’আ করতেন এবং তিনি যখন চাইতেন তখন তিনবার করতেন”। (মুসলিম ৩২-কিতাবুল জি-হা-দ)
ফলাফলের জন্য ব্যস্ত না হওয়া এবং কবুলের দৃঢ় আশা রাখা।
দু’আ চাওয়ার পর সেটা কবুল হচ্ছেনা ভেবে কখনোই হতাশ হওয়া যাবেনা। এই হতাশা ক্ষতি ও গুনাহের কারণ। আমাদের মনে রাখতে হবে দু’আ করাও একটা ইবাদাত এবং সওয়াব এর কাজ। আমরা যতই দু’আ করব আমাদের সওয়াব বৃদ্ধি পাবে। বিশ্বাস রাখতে হবে আল্লাহ আমার দু’আ অবশ্যই কবুল করবেন। তবে কীভাবে ফল দিলে আমাদের কল্যান হবে সেটা আল্লাহই ভালো জানেন। তাই কখনো নিরাশ হওয়া যাবেনা।
“রাসূল ﷺ বলেছেন তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দু’আ কবুল হয়ে থাকে যদি না সে তাড়াহুড়ো করে আর বলে আমি তো দু’আ করলাম,কিন্তু আমার দু’আ তো কবুল হলো না।”
(বুখারী:৬৩৪০)
রাসূল (ﷺ) বলেছেন ;
“তোমরা কবুল হওয়ার পূর্ণ আস্থা নিয়ে আল্লাহর কাছে দু’আ করো। তোমরা জেনে রাখো যে আল্লাহ নিশ্চয় অমনোযোগী ও অসাড় মনের দু’আ কবুল করেন না।” (তিরমিজি:৩৩৭৯)
তাই আমরা সর্বদা দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে দু’আ করব যে আল্লাহ অবশ্যই আমার দু’আ কবুল করবেন অথবা এর চেয়ে ভালো কিছু দিবেন।
শয়তান দু’আ করেছিল তাকে যেন পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবকাশ দেয়া হয়। মহান আল্লাহ তা’য়ালা তার দু’আ কবুল করেছেন।
আর তিনি আপনার আর আমার দু’আ কবুল করবেন না এটা আমরা কীভাবে ভাবতে পারি?
অনুপস্থিত ব্যক্তির জন্য দু’আ করা
আমাদের উচিত নিজেদের জন্য চাওয়ার পাশাপাশি যাদেরকে আমরা আল্লাহর জন্য ভালোবাসি, যারা কোন বিপদে আছেন তাদের জন্য দু’আ করা। বিশ্বের সকল নির্যাতিত মুসলিমদের জন্য দু’আ করা।
কারো অনুপস্থিতিতে তার জন্য জন্য দু’আ করলে সেই দু’আ আল্লাহ কবুল করেন এবং যিনি প্রার্থনা করছেন তাকেও উক্ত নেয়ামত দান করেন। এই ব্যাপারে বিভিন্ন সহীহ হাদীস বর্নিত আছে।
রাসূল ﷺ বলেছেন;
” যখন কোন মানুষ তার কোন অনুপস্থিত ভাইয়ের জন্য দু’আ করে,তখন ফিরিশতাগণ বলেনঃআমীন এবং আপনার জন্যও অনুরুপ।”
(মুসলিম:৭১০৫)
অতি উচ্চ স্বরে দু’আ না করা
অনেক দেখা যায় দু’আর সময় বেশ উচ্চ স্বরে আওয়াজ করে কান্নাকাটি করেন যা পুরোপুরি সুন্নাতের পরিপন্থী একটি বিষয়। আমাদের সব সময় নম্র এবং বিনীতভাবে আল্লাহর কাছে চাইতে হবে।
আল্লাহ বলেন;
“তোমরা বিনীতভাবে ও সংগোপনে তোমাদের প্রতিপালককে ডাক, নিশ্চয় তিনি সীমালংঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না।”
(সূরা আল আরাফ:৫৫)
তাই আমরা সর্বদা বিনীত ভাবে আল্লাহর কাছে চাইব এবং কখনোই সীমালঙ্ঘন করবো না।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক জ্ঞান দান করুন এবং সঠিকভাবে উত্তম দু’আ করার তাওফিক দিন।