দৃষ্টি হেফাজত
কলেজ মসজিদে যোহরের নামাজ শেষ করে বের হলাম। রিদম এক দৃষ্টিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ডিপার্টমেন্টের একটা মেয়ের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। আমি কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম…
– কি রে এমন করে কি তাকিয়ে দেখিস?
– ওই মেয়েটাকে দেখছি দোস্ত। এরকম জোস মেয়ে জীবনেও দেখিনাই আমি। আমাদের কলেজে পরীর মতো এমন অপূর্ব একটা মেয়ে আছে জানতামই না। নামটাও সুন্দর। ইলিতা। আহ…
“কোরবান হো যায়্যুংগি তেরা নাম পার।”
দেখ, দেখ একবার দেখ না … কি অপুর্ব হরিণটানা চোখ, গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁট, মেঘের মতো চুল, মধু মাখা শরীর! ইচ্ছে করছে এখুনি গিয়ে i love u বলে ফেলি।
– আমার দিকে তাকা।
রিদম চোখ মুখ অন্ধকার করে আমার দিকে তাকালো। ও জানে আমি এখন লম্বা একটা লেকচার দিবো।
– তাকালাম। বল এখন। জানি তো কি বলবি। বেগানা মেয়েকে দেখা যাবে না। কবিরা গুনাহ হয়.. ইত্যাদি ইত্যাদি।
– তাতো অবশ্যই। এর সাথে তোকে এমন এক মেয়ের কথা বলবো, যার রূপের ছটা যদি এখুনি দেখিস তাহলে কলিজা ফেটে মারা যাবি, এতোটাই সুন্দর সেই মেয়ে!
– বলিস কি! এর থেকেও সুন্দর?
– আরে এ আর কি! কার সাথে কার তুলনা করিস। এই মেয়ে তো এক ফোঁটা নাপাক পানি থেকে এসেছে, আবার মরে গেলেই এই মেয়ের শরীর পোকা মাকরের আস্তানা হয়ে যাবে, এই মেয়ে যেখানেই যায়, পেটে প্রসাব পায়খানার থলি নিয়ে যায়।
– ধুর! কি বলিশ এসব। এতো সুন্দর পরীর মতো একটা মেয়েকে নিয়ে!
– হাহাহা..। পরী! এই মেয়ের তো এমনই হাজারো রকমের সমস্যা সমস্যা আছে যেটা শুনলে আর পরী বলতে পারবি না।
– কিরকম সমস্যা?
– শুন তাহলে। তুই যেটা হরিণ টানা চোখ বলে আবেগে ভেঙে পরছিস, সেই হরিণ টানা চোখে যদি সে নিয়মিত পানি দিয়ে পরিষ্কার না করে তাহলে সেটা ময়লায় জমে যাবে। কিলবিল করতে থাকবে লক্ষ লক্ষ জীবাণু। সেই চোখ দিয়ে যখনই পানি ঝরবে তখন সেখানে কোটি কোটি লাইসোজোম নামক ব্যাকটেরিয়ারা কিলবিল করতে থাকবে। যেই ঠোঁটকে তুই গোলাপের পাপড়ির মতো বলছিস, সেই ঠোঁটের যদি সে যত্ন না নেয় তাহলে সেটা প্রচন্ড রৌদ্রের ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়া মরুভূমির মতো হয়ে যাবে। যেই চুলকে তুই মেঘের মতো বলছিস, সেই চুলের সে যদি যত্ন না নেয়, চিরনি না করে, তবে সে চুল হয়ে যাবে উকুন উৎপাদনের শ্রেষ্ঠ কারখানা। যে শরীরকে তুই মধু মাখা বলছিস, সেই শরীরে সে যদি সুগন্ধি ব্যবহার না করে তাহলে তার শরীর থেকে দূর্গন্ধ বের হতে থাকবে। তার ওই মধু মাখা শরীরটাকে কয়েকদিন গোসল না করালে যে কেউ ঘামের দূর্গন্ধে বমি করে ফেলবে।
শুধু তাই না। এই মেয়ে যদি দাঁত পরিষ্কার না করে তবে মুখ হতে দূর্গন্ধ আসতে শুরু করবে। যদি মাথা ধৌত না করে তবে মাথা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াবে। সামান্য বয়স হলেই এই মেয়ে বুড়ি হয়ে যাবে তখন তাকিয়ে দেখে থাকার উপযুক্ত থাকবে না। পরীর মতো সুন্দর এই মেয়েটাই কোমর বাঁকা এক জুলজুলে বুড়িতে পরিনত হয়ে যাবে। এই মেয়ে আবার পেশাব- পায়খানাও করে, আর সব রকমের দুর্গন্ধময় জিনিস ( থুথু, শ্লেষ্মা, লালা, নাকের ময়লা ইত্যাদি) তার ভেতর মজুদ আছে।
দুঃখ-কষ্ট, দুশ্চিন্তা, অসুখ-বিসুখ, মসীবত তো এর উপর কিছুদিন পর পর গ্রাস করে৷ তাকে যদি এখনই i love u বলিস। তবে কেবল নিজের আরাম ও সুবিধার জন্যই সে ভালোবাসা দেখাবে। ভীষণ স্বার্থপর। আর যদি তোর দ্বারা কোন রকম কষ্ট পায়, সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত ভালোবাসা শেষ হয়ে যাবে। ব্রেকাপ করতে এক সেকেন্ডও দেরি করবে না। চরম অকৃতজ্ঞ, কোন কথা বা ওয়াদা পূরণ করে না। তার ভালোবাসা মিথ্যা বলে প্রমানিত হবে, যদি তুই মরে যাস বা তার থেকে দূরে সরে যাস, তখন সে অন্য কারো পাশে বসবে এবং তাকেও এরূপ ভালোবাসার দাবী করবে। যেটা তোর সাথে করেছিলো।
আজ যে মেয়ের রূপ যৌবনে আত্মহারা পাগল হয়ে বলছিস – ” কোরবান হো যায়ুংগি তেরি নাম পার”
কাল যদি সেই মেয়েরই লাশ কবরে দেখিস, দেখতে পাবি কেমন পঁচা,দূর্গন্ধ আর পোকায় কিলবিল করা হাড়-হাড্ডি মাংসের স্তুপ, তখন ঠিকি বলবি-
“ওয়াক থু, কি দূর্গন্ধ! আর থাকা যাচ্ছে না।”
এবার বুঝেছিস কি কি সমস্যা এই মেয়ের?
রিদম মন ভার করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো-
– হু বুঝেছি।
– এবার যেই মেয়ের কথা বলতে চেয়েছিলাম তোকে শুনবি তার কথা ?
– হুম বল।
– সেটা এমন এক মেয়ে যাকে বানানো হয়েছে কার্পুরের উপাদান দ্বারা, তাতে মেশক ও জাফরানের সংমিশ্রণ দেয়া হয়েছে, তার উপর মুক্তা ও নূর জড়ানো হয়েছে, যদি সমুদ্রের লবনাক্ত পানিতে সেই মেয়ে মুখের লালা ফেলে, তবে সমুদ্রের পানি মিঠা হয়ে যাবে। যদি সে মৃত ব্যক্তির সাথে কথা বলে, তবে মৃত ব্যক্তিও জীবিত হয়ে যাবে। যদি তার হাতের কব্জি সূর্যের সম্মুখে ধরা হয়, তবে সূর্য আলোহীন হয়ে যাবে।
যদি সে অন্ধকারে এসে উপস্থিত হয় সমস্ত ঘর আলোকিত হয়ে যাবে এবং ঝলমল করে উঠবে। যদি সে তার সাজসজ্জা সহকারে পৃথিবীতে এসে পড়ে, তবে সারা জাহান ঘ্রাণে মোহিত হয়ে যাবে, উজ্জল হয়ে যাবে। সে মেশক ও জাফরানের বাগিচায় লালিতপালিত হয়েছে। ইয়াকুত ও মারজানের শাখাসমূহে খেলেছে। সর্বপ্রকার নেয়ামত সমূহের তাঁবুতে তার মহল রয়েছে। সে তো তাসনীম (জান্নাতের ঝর্ণাসমূহের মধ্য হতে একটি ঝর্ণা) এর পানি পান করে। কখনো ওয়াদা ভঙ্গ করে না। ভালোবাসা পরিবর্তন করে না (অন্যের প্রেমে মজে না)।
এখন বল, মূল্য হিসেবে কোন মেয়ের মূল্য বেশি। রাষ্ট্রবিজ্ঞান ডিপার্টমেন্টের ওই মেয়ে নাকি আমি যে মেয়ের কথা বললাম সেই মেয়ে!
– অবশ্যই, তুই যে মেয়ের কথা বললি তার মূল্য বেশি। কিন্তু তাকে পাবো কিভাবে দোস্ত?
উত্তেজনায় চকচক করে উঠলো রিদমের চোখ।
– যদি দুনিয়ায় কোনো বেগানা মেয়ে থেকে পর্দা করিস, তাহলে আল্লাহ পাক জান্নাতে তোকে এর বদলায় হুর দান করবে, যার বর্ননা করলাম এতক্ষণ।
দুনিয়ার এই মাটির তৈরি মেয়ের ভিতর কি আছে তুই বল! স্রেফ মাটির উপর ডিসটেম্পার লাগিয়ে দিয়েছেন আল্লাহ পাক।
তুই একজন বেগানা মেয়ের যতো রূপ সৌন্দর্য দেখিস না কেনো তা শুধু চামরার উপরই, এখুনি ৪০০ গ্রামের ফর্সা চামড়াটা কেটে তুলে নে, দেখবি রূপ সৌন্দর্য উধাও হয়ে গেছে।
এজন্য কবি বলেছেন –
“মাটি করোনা মাটির তরে,
তোমার মহৎ জীবনটারে,
জীবন-যৌবন দাতা যিনি,
জীবন বিলাও তাহার তরে।
আর রাসুল (সঃ) বলেছেন, যে ব্যাক্তি বেগানা নারী থেকে তার দৃষ্টিকে হেফাজত করবে। আল্লাহ পাক তার অন্তরে ইমানের স্বাদ দান করবেন, যেটা সে অনুভব করতে পারবে।
– সুবহানাল্লাহ। আমি আজ থেকে আর কোনো বেগানা মেয়েকে দেখবো না দোস্ত।
– আলহামদুলিল্লাহ।