দৃশ্যমান মৃত্যু
কিছুক্ষণ আগে ট্রেনের সাথে ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষের একটা ঘটনার কিছু ছবি দেখছিলাম।একটা ছবি দেখে মনে হলো আমাদের অবস্থা সত্যিই অতি দুঃখজনক। দৃশ্যটা বর্ণনা এরকম যে, একটা লাশ দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া রেল ইঞ্জিনের সামনে আটকে আছে, দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো পুতুল কিন্তু লাশ। তার সামনে জনা পঞ্চাশেক লোক জড়ো হয়েছে। সবার হাতেই মোবাইল ফোন, সবাই ছবি তুলতে ব্যস্ত! অথচ কারো মনে হচ্ছে না এখানে কিছুক্ষণ আগে একটা মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। লাশটাও তাদের মনে ভয় ধরাতে পারছে না!
নবীজি ﷺ যেখানে কবর জিয়ারত করার মাধ্যমে আখিরাতের স্মরণ করতে বলেছেন সেখানে জীবদ্দশায় সদ্য মৃত ব্যক্তির কষ্টদায়ক মৃত্যু ও আমাদের সতর্ক করতে পারছে না! স্মার্ট হতে হতে জড় পদার্থের গুণ আমাদের মধ্যে ভর করেছে অথচ আমরা বেখেয়াল! অথচ এই মৃত্যু, মৃত্যুর পর কবর আর কবরে মুসলিম, অমুসলিম সবার জন্য অপেক্ষা করছে সংকোচন-যার ফলে শরীরের একপাশ আরেকপাশে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে,যার যান্ত্রণা থেকে কেউ মুক্ত নয়। নবীজি ﷺ কবরের চাপের বর্ণনা দিতে গিয়ে সাদ বিন মুয়াজ রা: এর কথা পর্যন্ত উল্লেখ করেছিলেন-
“এ সেই ব্যক্তি যার জন্য আরশ কেঁপে উঠেছে, আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়েছে এবং সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জানাজায় অংশগ্রহণ করেছে, তবুও তাকে কবরের একটি চাপ দেওয়ার পর তা সরিয়ে নেওয়া হয়।”
[সুনানে নাসায়ি : ৪/১০০]
সেখানে আমরা তো তুচ্ছ, নগন্য, আমাদের ঈমান, আমল তো বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ! এরপর তো বাদবাকি হিসাব নিকাশ বাকিই থাকে। অথচ আমাদের তো আমাদের সালাফদের অনুসরণের কথা ছিলো যারা মৃত্যুভয়ে সবসময় তটস্থ থাকতো।
আবদুল্লাহ ইবনুল মোবারক রাহি. বলছিলেন, “মৃত্যু এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতি নাও।” এ কথা বলে চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলেন। এবং সারারাত তাঁর জ্ঞান ফিরে নি।
[আবু নুআইম,হিলইয়াতুল আউলিয়া,৮/১৬৮]
সেখানে স্মার্ট ফোন হাতে আমাদের কথা চিন্তা করুন! সারাদিন রাতে কতো মাইকিং হচ্ছে, জানাজা হচ্ছে, দাফন হচ্ছে, মুখের সামনে দুর্ঘটনা ঘটছে ও জীবন্ত মানুষ লাশ হচ্ছে কিন্তু আমরা উদাসীন।
ইবরাহীম ইবনু আদহাম রহ. ইবরাহিম ইবনু বাশারকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
“ইবনু বাশশার! সবসময় মনে করবে যে, মৃত্যুর ফেরেশতা এবং তার সহযোগীরা তোমার আত্মা কবজ করার জন্য উপস্থিত হয়ে আছে। এজন্য তোমাকে কী অবস্থায় থাকতে হবে, সেটা ভেবে নাও। অন্তরে সব সময় উপস্থিত রেখো কবরের বিভীষিকাময় দৃশ্য এবং মুনকার-নাকিরের সাওয়াল- জওয়াবের বিষয়গুলো। এজন্য তোমার প্রস্তুতি কেমন হওয়া দরকার, ভেবে দেখো। অন্তরে সবসময় প্রস্তুত রাখো কিয়ামাতের বিভীষিকাময় দৃশ্য, হিসাব- নিকাশ এবং সে জন্য দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার ভয়ানক বিষয়গুলো। এজন্য তোমার প্রস্তুতি কেমন হওয়া দরকার, সেটা ভেবে দেখো।”
এরপর ইবরাহীম ইবনু আদহাম চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যান।
[ আবূ নুআইম, হিলইয়াতুল আউলিয়া, ৮/৩৩ ]