আজকাল পাঁচ-সাত লাখ টাকার দেনমোহর ছাড়া বউ শব্দটা মুখে তোলাও যেন পাপ! জাহেলি যুগের মতোই মোহরানা নিয়ে কনেপক্ষ ও বরপক্ষের মধ্যে চলে ব্যাপক দর কষাকষি!
শুধুমাত্র আকাশচুম্বী দেনমোহরের কারণে কিছু মিসকিন ভাইরা আছে যারা বিয়ে করা তো দূরে থাক, বিয়ের নামটি পর্যন্ত মুখে তুলতে ভয় পায়!
একপ্রকার অবুঝ অভিভাবকবৃন্দ বিয়ে নামক এতো অপূর্ব চন্দ্রালোককে দেনমোহরের কঠিনতম ঘনায়িত মেঘ দিয়ে এমনভাবে ঘিরে নিয়েছে যে, বিয়ের রমরমা সিজনেও মিসকিন ভাইদের পথে পথে হারিকেন নিয়ে ঘুরতে হয়! ঘোর অমাবস্যায় তাদেরকে ঠিক পথ হারানো শীতের কর্কশ-কুয়াশায় সাদা কাফনে মোড়ানো আধমরা লাশের মতো ঠেকে!
আহা! বেচারাদের মর্মব্যথা বোঝার মতো কেউ নেই।
একে তো সামাজিক সিস্টেমের জাতাঁকলে পড়ে রুটিরুজির বন্দোবস্তো করতে গিয়ে মাথার চুল অব্দি পেকে সাদা হওয়ার জোগাড়, তারউপর আবার দেনমোহরের এমন উঁচু বাজারদর দেখে বিয়ে করার সব স্বাদ-আহ্লাদ চাঙ্গে তুলে বসে থাকতে হয়!
কিন্তু বেচারা মিসকিন বিয়ে না করেই-বা যাবে কোথায়?
মধ্যরাতে শেয়ালের হাঁক শুনে কলিজা কেঁপে ওঠা মিসকিন ভাইটি যখন দেখে তার পাশে কল্পনার সেই রাজকন্যাটি নেই! চারদিকে একাকীত্বের বীভৎস মিসিলে কারাগারে সে বন্দী! তখন সে দৃশ্য যে কতখানি বিষাদময় ট্র্যাজেডিতে রূপ নেয় তা সাংকেতিক বর্নমালায় ব্যক্ত করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
বিশেষ করে শীতকাল আসলে এই দৃশ্য এতোটাই বেদনার্ত উপাখ্যানে পরিনত হয় যে তা দেখার মতো দুঃসাধ্য বোধকরি কারুর নেই। একদিকে দেনমোহর জোগাড়ের দুঃশ্চিন্তা মিশ্রিত বিয়ের চাপ অন্যদিকে হাড় হিম করা ঠান্ডার চাপ! এই দুই দিকের দুই পিস্টনের চাপে প্যাসকলের সূত্রে অবরুদ্ধ অবর্ণনীয় মিসকিন জীবন এক দুর্বিষহ পান্ডুলিপি!
তাই যখন ব্যাড়ার ফাঁক দিয়ে গলে পরা চাঁদের আলোর সাথে হুহু করে ঢোকে শৈত্য প্রবাহ! ঠিক তখুনি যেন মনে হয় বালিশের তলায় জমিয়ে রাখা দেনমোহরের বাকি সম্বলটুকু দিয়ে তারচে বরং আরেকটা কম্বল কেনাই ভালো!
পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়ায়; “আঙ্গুরফল টক!”
হ্যাঁ ছেলের সাধ্যে কুলালে কোটি টাকা দিক সে কথা বলছি না। কিন্তু একজন মধ্যবিত্ত ছেলে যখন পছন্দমত দ্বীনদার মেয়ে বিয়ে করতে যায় তখুনি বাঁধে বিপত্তি!
কন্যার বাবা মনে করে যতবেশি দেনমোহর নির্ধারণ হবে বিয়ের বন্ডিংটাও ততো শক্তপোক্ত হবে! কিন্তু বর্তমান সময়ে একজন ছেলের সামর্থ্য কতোটুকু সেটা আর বুঝতে চায় না!
অনেকে আবার এটা প্রথাগত ব্যাপার বলে মনে করে। বিরাট অঙ্কের মোহর দাবি করে তারা এটাকে সামাজিক মান-সম্মানের বিষয় কিংবা তালাকের প্রতিবন্ধক হিসেবে ভেবে থাকে। প্রকৃতপক্ষে ইসলামে মোহরের সাথে বংশীয় মানমর্যাদা ও তালাকের কোনো সম্পর্ক নেই। আবার যারা মনে করেন কেবল বিয়েবিচ্ছেদ হলেই দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন।
আল্লাহ তাআলার এরশাদ করেন; “আর তাদের ন্যায়সঙ্গত মোহর আদায় করো”- (সূরা নিসা : ২৫)। যেহেতু আল কুরআনের ভাষা ‘ন্যায়সঙ্গত মোহর’ সেহেতু এ ব্যাপারে স্বামীর অর্থনৈতিক শক্তি-সামর্থ্য বিবেচনা করে যৌক্তিকভাবে মোহর নির্ধারণ করা বাঞ্ছনীয়।
রাসূল (স) বলেন;
“নিশ্চয় বরকতের দিক দিয়ে সর্বোত্তম ও গ্রহণযোগ্য বিয়ে হলো, যে বিয়ে সবচেয়ে স্বল্প খরচে সম্পাদিত হয়।”
(বায়হাকি শোয়াবুল ঈমান)।
মনে রাখবেন, মোহর কোনো অর্থ-বিত্তের প্রতিযোগিতা কিংবা নাম ফোটানোর লৌকিকতাও নয়, এটি স্বামীর প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে অবধারিত কর্তব্য। এই কর্তব্যকে কাঠিন্যের চাদরে ঢেকে বিয়েকে আকাশকুসুম স্বপ্ন বানাবেন না!