এখন জ্যৈষ্ঠ মাস। বাইরে প্রচণ্ড গরম। তাপমাত্রা ৩২-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। দুপুরবেলা বাজারে গেলেন। কেনাকাটা শেষে রিক্সায় চড়ে বাসায় যাবেন। দোকান থেকে ২৫০ এম.এল ঠাণ্ডা পানির বোতল কিনুন। বাসায় নেমে রিক্সা ভাড়া দিয়ে রিক্সাওয়ালাকে বলুন, “মামা, এটা আপনার জন্য। ঘামে দেখি ভিজে গেছেন।”
পারলে একটা টিসু দিয়ে বলুন, “মামা, মুখ মুছুন।”
অথবা আরেকটা জিনিস করতে পারেন। রিক্সা চলতে চলতে রাস্তার পাশের কোনো জুসের দোকান, ডাবের ভ্যান বা লেবুর শরবতের ভ্যানের সামনে রিক্সা থামাতে বলেন। আপনি যেটা খান আরকী, পকেট মানিতে যা হয়। ডাব, লেবুর শরবত বা পেঁপে/বেলের জুস আপনিও খান, রিক্সাওয়ালা মামাকেও দিতে বলেন জুশওয়ালাকে/ডাবওয়ালাকে।
২। রাস্তার পাশে ছোটো ছেলে-মেয়েরা ফুল, বেলুন, চকলেট বিক্রি করে। একটি বেলুনের দাম ৫০ টাকা, একটি ফুলের দাম ২০ টাকা। তার সাথে সুন্দর করে কথা বলুন। যেমন:
“আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছো?”
সে সালামের জবাব দিতে অস্বস্তিবোধ করবে। কারণ, তাকে এভাবে কেউ সালাম দেয় না। সে সালাম পেয়ে অভ্যস্ত না। তখন আপনি তাকে মনে করিয়ে দিন, “সালাম শুনলে সালামের জবাবে ‘ওয়ালাইকুমুস সালাম’ বলতে হয়। দেখি বলো তো…।”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম।”
“এই তো, মাশাআল্লাহ। বেলুন/ফুল কতো করে?”
“৫০ টেকা পিস।”
“৫০ টাকা তো কম হয়ে যায়। দাম আরো বাড়াও।”
দেখবেন সে হাসবে। সে ভাববে আপনি মজা করছেন। তার সাথে এভাবে কিছুক্ষণ কথা বলুন।
“সত্যি সত্যি দাম বাড়ালে কিন্তু আমি কিনবো।”
তখন হয়তো সে আস্তে আস্তে দাম বাড়াবে। ১০০, ২০০, ৩০০ টাকা বলবে। আপনি তখন ১০০০ টাকা দিয়ে তার কাছ থেকে দুটো বেলুন কিনুন। এসব শিশুদের কেউ কেউ ছোটোবেলা থেকেই নেশাসক্ত হয়ে পড়ে। আপনি একটু খেয়াল রাখুন, একটু জেনেবুঝে টাকা দিন। বিশেষত মেয়ে শিশুদের টাকা দিলে সেটা নেশার পেছনে ব্যয় হবার সম্ভাবনা কম। আর ছেলে শিশুদের দেখলে মোটামুটি বুঝার কথা সে ইনোসেন্ট কিনা। দেখে ভালো লাগলে ছেলে শিশুর হাতেও দিন।
৩। বয়স্ক রিক্সাচালক বা মধ্যবয়সী একজন রিক্সাচালককে বলুন, “মামা, আমাকে একটা হেল্প করবেন?”
“কী করবো?”
“আমি মাছ দরদাম করে কিনতে পারি না। আমাকে একটা মাছ কিনে দিবেন।”
আশেপাশে রিক্সাওয়ালার পরিচিত কেউ থাকলে সে রিক্সা রেখে যেতে রাজী হবে। আপনিও তার সাথে মাছ কিনতে যান। তাকে মাছের ফিচার বলে দিন। যেমন: “বাজারের সবচেয়ে বড়ো মাছটি কিনে দিন।” বা “দুটো ইলিশ মাছ/মৃগেল মাছ কিনে দিন।”
দুই-চার হাজার টাকা দিয়ে মাছ কিনুন। মাছের বাজার থেকে বের হয়ে রিক্সার কাছাকাছি আসবেন। তাকে ধন্যবাদ জানান। দেখবেন লোকটি হাসবে। সে হাসবে এই কারণে, সে ভাববে যে, সে আপনার উপকার করেছে।
ঠিক সেই মুহুর্তে আপনি মাছের ব্যাগ তাকে দিয়ে বলুন, “মামা, এটা আপনি নিয়ে যান, আপনার জন্য কিনেছি।”
লোকটি যখন বুঝবে আসলেই সেটা তার জন্য কেনা, তখন কী হবে জানেন? সেই দৃশ্য দেখার জন্য কি আপনি প্রস্তুত? যদি প্রস্তুত থাকেন, তাহলে সাথে টিসু রাখুন।
কারণ, লোকটি কান্না করে তার চোখমুখ গামছাতে মুছবে। আপনার কান্না মুছার জন্য টিসু লাগতে পারে।
এখানে আমি রিক্সার কথা বললাম। ফিরোজ ভাইয়ের ভিডিওতেও রিক্সাওয়ালাকে দেখলাম। আপনি চাইলে অন্য যেকোনো পেশার কাউকে মাছ কিনতে নিয়ে যেতে পারেন। যেমন: ভ্যানের সবজি বিক্রেতা, দরিদ্র কোনো ব্যক্তি।
৪। একজন বয়স্ক গরবী লোককে বলুন, “চাচা, আমার আব্বার জন্য দুটো পাঞ্জাবি কিনবো। কিন্তু, পাঞ্জাবির সাইজ জানি না। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আব্বার পাঞ্জাবির সাইজ আপনার মতো। আমার সাথে কাপড়ের দোকানে একটু যাবেন। ঐ যে দোকান, ঐ দোকানে।”
লোকটি একটু ইতস্ততবোধ করতে পারে। তারপর আপনার সাথে যাবে। আপনি ভালো দেখে দুটো পাঞ্জাবি কিনুন, লুঙ্গি/পাজামাও কিনতে পারেন। দোকানদারকে বলবেন দুটো ব্যাগে দিতে।
কেনা শেষে যাবার সময় এক ব্যাগ আপনি সাথে করে নিয়ে যান, আরেক ব্যাগ ঐ লোককে দিয়ে দিন।
আপনার আব্বা বেঁচে থাকলে তার জন্য ঐ কাপড়ের ব্যাগ। বেঁচে না থাকলে শুধু একটি পাঞ্জাবি কিনুন। দেবার সময় বলুন, “চাচা, এটা আপনার। আমার বাবার পাঞ্জাবির সাইজ আপনার মতো। বাবা বেঁচে নেই। আপনাকে দেখে আমার বাবার কথা মনে পড়লো। পাঞ্জাবিটি রাখলে আমি অনেক খুশি হবো। মনে করবো আমি আমার বাবার সমান বাবাকে একটি পাঞ্জাবি দিলাম।”
৫। রাস্তার পাশে অনেক মহিলা দেখবেন নানান জিনিস বিক্রি করে। জীবিকার তাগিদে তারা বাইরের শীত, গরম সহ্য করে চুড়ি, জায়নামাজ, কাপড়, গামছা, ভর্তা, চা, পিঠা বিক্রি করে। আপুরা চাইলে তাদের নিয়ে ভাবতে পারেন। আপনারা হয়তো রিক্সাওয়ালা বা একজন বয়স্ক লোকের সাথে মাছের বাজারে, পাঞ্জাবি কিনতে দোকানে যেতে আনকমফোর্টেবল ফিল করতে পারেন। রাস্তার পাশের খেটে খাওয়া দিনমজুর, বিক্রেতা মহিলাদেরকে সারপ্রাইজ দিতে পারেন। যেমন: ১০০ টাকা দিয়ে চুড়ি কিনে তাকে ৫০০ টাকা দিতে পারেন। হিজাব, কাপড়ের পুরো গাট্টি কিনতে পারেন। ২,০০০ টাকার কাপড় ৩০০০, ৪০০০ টাকা দিয়ে কিনুন। সেই হিজাবগুলো পরিচিতদের মাঝে বণ্টন করুন।
৬। রাস্তার পাশে আতর-টুপি বিক্রেতাদের দেখা যায়। তাদের কাছ থেকে একদিন ১০ টি টুপি, ১০ টি আতর কিনুন। দাম হতে পারে সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা। তাকে আরো ৫০০ টাকা দিন বা টুপি-আতরওয়ালাকে তার দোকানের সবচেয়ে ভালো টুপি-আতর গিফট করুন।
মসজিদে নামাজ পড়ার সময় দেখবেন অনেক গরীব মানুষ, রিক্সাওয়ালা, দিনমজুর টুপি ছাড়া মসজিদে এসেছে। নামাজে টুপি পরা বাধ্যতামূলক না, টুপি না পরেও নামাজ হবে। কিন্তু, ঐ লোকটির হয়তো ভালো টুপি নেই, আতর নেই। নামাজ শেষে নতুন টুপি তার মাথায় পরিয়ে দিন, তাকে একটি আতর উপহার দিন।
ধরুন, আপনি নামাজ পড়ে বের হয়ে কয়েকজন রিক্সাওয়ালা, বাদাম বিক্রেতা, শরবত বিক্রেতাকে দেখলেন। তাদেরকে আতর-টুপি গিফট দিন। হ্যাঁ, তারা নামাজে যায়নি এটা সত্য। কিন্তু, তাদেরকে যখন টুপি উপহার দিবেন, তখন ১০ জনের মধ্যে অন্তত দুই-একজন সুযোগ খুঁজবে, এই টুপি পরে কিভাবে নামাজ পড়া যায়। তারা হয়তো অন্যান্য সময় নামাজ পড়তো না। কিন্তু, টুপি পাবার আনন্দে প্রথম দুই-একদিন মসজিদে যেতে পারে।
নিজের এবং ধার করা ছয়টি আইডিয়া শেয়ার করলাম। আপনারা চাইলে নিজেদের মতো করে কাস্টমাইজ করে মানুষের উপকার করতে পারেন। নিজেরা নতুন নতুন আইডিয়া বের করতে পারেন, কিভাবে এই ধরনের মানুষের উপকার করা যায়। দান করার আইডিয়াগুলো বললাম। আপনি চাইলে গোপনে তাদেরকে দান করতে পারেন, ফিরোজ ভাইয়ের মতো আপনার আর ভিডিও বানানোর দরকার নেই।