দাম্পত্য কলহ
আলী (রা:) এবং ফাতিমা (রা:) বিবাদে লিপ্ত হয়েছেন এমন বিষয় নিয়েও একটি গল্প আছে। এরকম দাম্পত্য কলহ সব সংসারেই হয়ে থাকে। রাসুলের (ﷺ) সংসারেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এরকম কলহ হত। আর এ ধরনের ঘরোয়া বিবাদ মেটানোর জন্য স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই একে অন্যের প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে।
রাসুল (ﷺ) আয়েশাকে (রা:) বলতেন, “আমি জানি তুমি কখন আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হও”, আয়েশা (রা:) জিজ্ঞেস করলেন, “কিভাবে?”
রাসুল (ﷺ) বললেন, “তুমি যখন আমার সাথে রাগ করো তখন ইব্রাহিমের প্রভুর নামে শপথ করো, আর তুমি যখন আমার সাথে সন্তুষ্ট থাকো তখন মুহাম্মদের প্রভুর নামে শপথ করো। আমি তোমার অনুভূতি, তোমার কথা বলার ধরন থেকে বুঝতে পারি কখন তুমি আমার উপর রাগ হয়েছো।”
একরাতে রাসুল (ﷺ) আলী (রা:) এবং ফাতিমার (রা:) বাসায় গেলেন। ফাতিমাকে (রা:) তিনি একা দেখতে পেলেন। ফাতিমা (রা:) তখন মর্মাহত এবং বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিলেন।
রাসুল (ﷺ) জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার সাথী কোথায়?”
তিনি বলেন নি, “তোমার স্বামী কোথায়?”
রাসুল (ﷺ) পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছিলেন, দাম্পত্য কলহ আঁচ করতে পেরেছিলেন।
ফাতিমা (রা:) বললেন, “আমরা ঝগড়া করেছি এবং আলী মসজিদে ঘুমাতে গিয়েছে।”
রাসুলের (ﷺ) মসজিদে যে কেউ চাইলে রাতের যে কোনো সময় যেতে পারত। সেখানে কার্পেটও ছিলনা, এসিও ছিলনা, ছিল ধূলোবালি আর ময়লা।
রাসুল (ﷺ) মসজিদের দিকে রওনা হলেন, দেখলেন আলী (রা:) মসজিদের এক কোনায় শুয়ে আছেন। তাঁর শরীর থেকে তখন উপরের পোশাকটি খসে পড়েছে, আর সারা শরীরে ময়লা ও ধুলাবালি লেগে আছে। আলী (রা:) তখন ঘুমাচ্ছিলেন।
রাসুল (ﷺ) তাঁকে ঘুম থেকে উঠিয়ে হুমকি দেননি। একজন রাগান্বিত পিতার ভূমিকা তিনি পালন করেননি। ফাতিমাকে (রা:) তিনি যে পরিমাণ ভালোবাসতেন, তিনি রাগান্বিত হতেও পারতেন। এটাই তাঁর ন্যায়বিচার, আর এই ন্যায়বিচারের বোধটুকু সবারই থাকা উচিত, বিশেষ করে শ্বশুরবাড়ির পক্ষের লোকদের। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ শ্বশুর-শাশুড়ি একটি বিয়েকে সুন্দর ও সফল করার পরিবর্তে, আমার ছেলে, আমার মেয়ে ….. এই প্রসঙ্গ গুলো নিয়ে আসে। শ্বশুর হিসেবে এই ছিল রাসুলের (ﷺ) হস্তক্ষেপ।
তিনি আলীর (রা:) পিঠ থেকে ধুলো ঝাড়তে লাগলেন, তাঁকে উঠে বসিয়ে তাঁর পোশাক ঠিক করে দিলেন। তারপর বললেন, “قم يا ابا تراب – হে ধুলোবালির বাপ! তুমি উঠে বস।”
আবু তালিব না ডেকে তিনি ডাকলেন, ‘আবু তুরাব’। আলী (রা:) হাসতে শুরু করলেন। রাসুল (ﷺ) তাঁর সাথে কৌতুক করছিলেন। এরপর থেকে রাসুল (ﷺ) রসিকতা করে আলীকে (রা:) ‘আবু তুরাব’ নামে ডাকতেন, এবং এটা তাঁর একটি প্রিয় ডাকনামে পরিণত হয়েছিল।
আর এই ডাকনামের গল্পটি এসেছে যখন রাসুল (ﷺ) আলীর (রা:) পিঠ থেকে ধুলাবালি পরিষ্কার করতে করতে বলেছিলেন, قم يا ابا تراب – “হে আবু তুরাব! তুমি উঠো, তোমার স্ত্রীর কাছে যাও, বাসায় যাও।”
এভাবেই রাসুল (ﷺ) আলী (রা:) এবং ফাতিমার (রা:) জীবনে হস্তক্ষেপ করেছিলেন, তাঁদের জীবনকে আরও উন্নত ও সুন্দর করার জন্য, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য, এবং ঘটনার টানাপোড়েনের উত্তাপকে হ্রাস করার জন্য।
আলী (রা:) ও ফাতিমার (রা:) সুখের সংসার
পর্ব: ৪
মূল: ড. ওমর সুলাইমান