কমন মিস্টেকস ইন রামাদান – কুরআনের প্রতি অবহেলা
আমরা সবাই জানি রোজার মাসে কুরআন পড়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ নিজেই বলেছেন –
شَهۡرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِىٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلۡقُرۡءَانُ….
রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে …
[২:১৮৫]
আমরা সবাই সেই গল্প শুনেছি রোজার মাসে আমাদের রাসূল (সা.) কিভাবে জিব্রাইলের (আ.) সাথে কুরআন ঝালিয়ে নিতেন। অনেক লোক মসজিদে তারাবির নামাজে খতমুল কুরআনে আগ্রহী। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল এমন অনেক লোক আছে যারা সত্যিই রমজান মাসে কুরআন পড়ে না এবং পাড়ার চেষ্টাও করে না। তারা রমজানের প্রথম এবং দ্বিতীয় দিন কুরআন পড়া শুরু করলেও পরবর্তীতে তা চালিয়ে যায় না।
মসজিদে খতম আল-কুরআন পড়াই যথেষ্ট নয়। এটা অন্য কারোর খতম আল কুরআন, আপনার নয়। কুরআন পড়ার জন্য আপনাকে মূলত চেষ্টা করতে হবে, পড়তে না পারলে অন্তত শোনার চেষ্টা করুন, কুরআন শোনার সময় কুরআনের অনুবাদ পড়ুন। যেভাবেই হোক কুরআনের সাথে আপনাকে লেগে থাকতে হবে এবং এর জন্য আন্তরিক চেষ্টা করতে হবে। আপনি কুরআন থেকে কতটুকু পড়েছেন তা বিবেচ্য নয়, একটি পূর্ণ সূরা, না একটি পৃষ্ঠা তা কোন ব্যাপার নয়। এমনকি পুরো রমজান মাসে আপনি যদি একটি ছোট সূরাও মুখস্ত করেন, আপনার সামর্থের উপর ভিত্তি করে সেটাও যথেষ্ট ।
আপনার প্রচেষ্টার কারণে যদি আপনি আরো একটু ভালোভাবে কুরআন পড়তে পারেন, কুরআনের সাথে আরো ভালোভাবে পরিচিত হতে পারেন তবে তা হবে চমৎকার একটি ব্যাপার। আপনি যদি পুরা কুরআন শুনেন তবে তা কতই না দুর্দান্ত, আর যদি আপনি নিজে কুরআন পড়েন তবে সেটাই সবচেয়ে ভালো, কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা আপনাকে কুরআন পড়তে পারার ক্ষমতা দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন। এইভাবে রোজার মাসে কুরআনের যত্নের ব্যাপারে আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা করতে হবে।
শুধু মুখের কথা বা মনে মনে স্বপ্ন পূরণের চিন্তা করলেই হবে না, কাজে ব্যস্তবায়ন করতে হবে। এই কথাগুলো বলার কারণ হচ্ছে প্রতিবছর রমজান আসে আর যায়, কিন্তু কিছু লোকের কুরআনের সাথে সম্পর্ক ঠিক তেমনি থাকে যেমন ছিল রমজানের আগে। কারো কারো জন্য এ রোজার মাসে একমাত্র পার্থক্য হল তারা মসজিদে খতম তারাবিতে অংশ নেয়, এবং বাকি সময় তারা টিভি দেখে, গেইম খেলে, এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বিক্ষিপ্ত সময় কাটায়।
রোজার মাসে অন্তত এই বিভ্রান্তি থেকে কিছুটা বিরতি নিন, যতটা সম্ভব আল্লাহর কিতাবের সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলুন। আজকাল প্রযুক্তির যুগে এমন অনেক টুলস আছে, অ্যাপস আছে যা আমাদের কুরআন পড়তে এবং খতম করতে সাহায্য করতে পারে।
আপনার নিজের স্থানীয় মসজিদেও এরকম উদ্যোগ নিতে পারেন, এমনকি আপনার কমিউনিটি এবং পরিবারের সদস্যদের সাথেও আপনি গড়ে তুলতে পারেন কুরআনকে ভিত্তি করে হালাকাত। একে অন্যকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। আপনার এলাকার ইমাম বা ধর্মীয় নেতাদের এই বার্তাটি পৌঁছে দিন, এতে করে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। তাদের উচিত কুরআনের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া, এবং মানুষকে কুরআনের ব্যাপারে উৎসাহিত করা। আজকাল এমন অনেক প্রোগ্রাম রয়েছে যা মানুষকে কুরআনের মৌলিক শিক্ষা দিতে পারে। এইসব প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে আপনি শুদ্ধ তাজউদ সহকারে কুরআন শিখতে পারেন, আর এভাবে আল্লাহর কিতাবের প্রতি মনোযোগী হয়ে আল্লাহর সাথে গড়ে তুলতে পারেন নিবিড় সম্পর্ক।
যেই মুহুর্তে আপনি আল্লাহর কিতাবের কাছে যাবেন এবং আপনি তা খুলবেন, আল্লাহ আপনার জন্য একটি নতুন জীবন খুলে দেবেন, আপনি আস্বাদন করবেন এক নতুন অভিজ্ঞতার স্বাদ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘প্রকৃতপক্ষে যার অন্তরে কুরআন নেই, সে ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরের মত।’
আপনি কি কখনো কোনো পরিত্যক্ত, ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরে গিয়েছেন?
ভয়ংকর, অন্ধকার, ধুলাময়, আবর্জনায় ভর্তি সেই ঘরে, পোকামাকড় ইঁদুর যেখানে বাসা বেধেছে? আপনার অন্তরের যদি কুরআন না থাকে আপনার অন্তরের অবস্থাও কিন্তু ঠিক একই রকম, সেই পরিত্যক্ত বাড়ির মত।
আমি আশা করছি এই রমজানে কুরআনের সাথে আমাদের সম্পর্ক যেন হয় নিবিড়, কুরআনকে ঘিরে যেন আমরা মাসটির সর্বোত্তম ব্যবহার করতে পারি। রমজান মাস আসলো গেল, কিন্তু কুরআনের সাথে আমাদের সম্পর্ক একই রয়ে গেল – এর চেয়ে দুঃখজনক আর কি হতে পারে?
হে আল্লাহ আপনি কুরআনকে আমাদের হৃদয়ের বসন্ত করে দিন, আমাদেরকে কুরআন পড়তে, মুখস্থ করতে এবং এর আদেশ অনুসরণ করতে এবং তাদাব্বুরের সাথে পড়তে তা সহায়তা করুন।
আল্লাহুম্মা আমীন!
কুরআনের প্রতি অবহেলা
পর্ব: ৭
মূল: শাইখ ওয়ালীদ বাসাইউনি