Writing

কমন মিস্টেকস ইন রামাদান – অন্যদের আমন্ত্রণ

রমজান মাসে সাধারণত মুসলিমরা যে ভুলগুলো করে থাকে তার মধ্যে একটি হল, নির্বাচিত কিছু লোককে তারা তাদের গৃহে প্রবেশাধিকার দেয়। কাদের সাথে তারা ইফতার করবে এবং কাদের বাদ দিবে সে ব্যাপারে তারা নির্বাচনশীল হয়ে উঠে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটা মুমিনের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না, এবং এ ধরনের মানসিকতা রমজানের চেতনার সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

দুঃখজনক হলেও সত্য যে অনেক সময় আমরা এমন কিছু লোককে আমাদের গৃহে প্রবেশাধিকার দিয়ে থাকি যারা আমাদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। হয়তো তারা পরিবারের সদস্য, দূরের বা কাছের কেউ – যাদের আপনি সাধারণত আমন্ত্রণ করেন না। তবে এটা ভালো যে আপনি তাদের সাথে আপনার রুটি-রুজি ভাগ করে নিচ্ছেন।

কিন্তু সমস্যা হল আপনি এমন কাউকে দাওয়াত করেছেন যে আপনার বাড়িতে বরকত নিয়ে আসে না। আর সমস্যাটি আরো বড় হয় যখন আপনি এমন কিছু লোককে আমন্ত্রণ করেন যারা আসলে আপনার সাথে একই টেবিলে খাওয়ার যোগ্য নয়, এবং আপনি এমন কিছু ভালো লোককে বাদ দিচ্ছেন যারা আর্থ-সামাজিক অবস্থান, প্রাতিষ্ঠানিক কৃতিত্ব, অর্জন, এবং সামাজিক পটভূমির দিক থেকে আপনার মত একই শ্রেণীর লোক নয়।

আপনার মসজিদে এরকম কিছু ভালো মানুষ আছেন যাদের সাথে আপনার প্রতি রাতে দেখা হয়। তারাও প্রতিরাতে আপনার মত মসজিদনামাজ পড়েন, আপনি যেমন রোজা রাখেন তারাও রোজা রাখেন, তারা হাসিমুখে আপনাকে সম্বোধন করেন, হয়তো আপনাকে তাদের দু’আতেও রাখেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আপনার বাড়িতে এদের প্রবেশাধিকার নেই, কারণ তারা আপনার পূর্বপুরুষের জন্মভূমি থেকে আগত নয়, আপনার এবং তাদের কাজের ধরন এক নয়, তাদের হয়তো আপনার মত আর্থ-সামাজিক অবস্থা নেই। বলতে গেলে তাদের সাথে আপনার কোন মিলই নেই, কেবলমাত্র একটি জায়গা ছাড়া – তা হলো আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা। অথচ এদের সাথে আত্মিক বন্ধনেই তো আপনি পেতে পারেন আল্লাহর ভালোবাসা।

রাসুল (সা.) বলেছেন,
মহাসম্মানিত পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেন, ‘আমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যারা পরস্পরকে ভালোবাসে, তাদের জন্য (পরকালে) থাকবে নুরের মিম্বার, যা দেখে নবী ও শহীদরা ঈর্ষা করবেন।’
[তিরমিজি, হাদিস : ২৩৯০]

সুবহানাআল্লাহ! আপনার এই ভূলটি ভেঙ্গে ফেলার জন্য কি অসামান্য একটি সুযোগ এবং কি অসাধারণ একটি অনুপ্রেরণা। আমাদের বাসায় আমাদের পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব এবং প্রতিবেশীদের প্রবেশাঅধিকার যেন না হয় শ্রেণী বৈষম্যের ভিত্তিতে, বরং তা যেন হয় তাকওয়ার ভিত্তিতে।

আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেনঃ ‘তুমি ঈমানদার লোক ব্যতীত অন্য কারো সঙ্গী হয়ো না এবং আল্লাহভীরু মুত্তাকী লোক ছাড়া কেউ যেন তোমার খাদ্য না খায়।'[তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও দারিমী]

এই হাদীসটির অর্থ হলো আপনার উচিত তাদেরকে আপনার বাড়িতে আমন্ত্রণ জানানো যাদের আল্লার সাথে সম্পর্ক আছে, যারা আল্লাহকে ভালোবাসে, এমন কাউকে নয় যাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা আপনার মত, বা আপনার মত একই সামাজিক পটভূমি থেকে যারা এসেছে।আপনার বাড়িতে এমন লোকজনদের আমন্ত্রণ জানানো অন্যায় কোন কাজ নয়, তবে এই ক্ষেত্রে ভূল যা হচ্ছে তা হল এইসব লোককে আমন্ত্রণ করতে গিয়ে আপনি বাদ দিয়ে দিচ্ছেন তাদের, যারা আপনার বাসায় রহমত এবং বরকত নিয়ে আসতে পারেন।

আল্লাহ যেন আমাদের হৃদয়কে উন্মুক্ত করে দেন একে অপরের জন্য। আমরা যেন জাতি, বর্ণ, এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থানের ঊর্ধে উঠে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালার সামনে মুমিন হিসাবে একে অন্যকে চিনতে পারি। মুমিন হিসাবে আমরা যেন একে অন্যের হৃদয়কে একই সুতোয় গাঁথতে পারি, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। আল্লাহুম্মা আমীন!

অন্যদের আমন্ত্রণ

পর্ব: ১৪

মূল: শাইখ ইয়াহিয়া ইব্ররাহিম

লিখেছেন

Picture of ফাহমিনা হাসানাত

ফাহমিনা হাসানাত

কিছুটা লেখালেখি করি, ইসলামিক লাইনে কিছুটা পড়াশোনা করি। তাজউইদ, গ্রামার এবং কুরআন মেমোরাইজেশন এর ক্লাস করছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিজে শিখছি, অন্যকেও শিখাচ্ছি। লেখালেখিটাও ঠিক এরকম। নিজে জানার জন্য মনের আনন্দে লিখি, শেয়ার করি।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

কিছুটা লেখালেখি করি, ইসলামিক লাইনে কিছুটা পড়াশোনা করি। তাজউইদ, গ্রামার এবং কুরআন মেমোরাইজেশন এর ক্লাস করছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিজে শিখছি, অন্যকেও শিখাচ্ছি। লেখালেখিটাও ঠিক এরকম। নিজে জানার জন্য মনের আনন্দে লিখি, শেয়ার করি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture