Writing

ছেলেদের কেন রান্না শিখা উচিত

জন্মের পর থেকে যতদিন (প্রায় ২০ বছর) আমি মায়ের সাথে থেকেছি, এমন একদিন নেই যেদিন মা বলেছেন যে, ‘আমি অসুস্থ তাই আজ রান্না করা হয়নি।
একটু চিন্তা করে দেখুন, দীর্ঘ ২০টা বছর অর্থাৎ ৭৩০০ দিন; তার মানে এই ৭৩০০ দিনের মধ্যে কি আমার মা একদিনও অসুস্থ হননি?
কখনো তার শরীর খারাপ লাগেনি?
তিনি কি কোনো যান্ত্রিক রোবট ছিলেন?

না, তিনি যেহেতু মানুষ তাই তিনি স্বাভাবিকভাবে কতশত দিন অসুস্থ হয়েছেন কিন্তু কখনো চুলার আগুন বন্ধ করেননি৷ কারণ তিনি রান্না না করলে তার স্বামীসন্তানেরা না খেয়ে থাকবে।

এটাই আমাদের সমাজের অধিকাংশ পরিবারের অভ্যন্তরীন প্রেক্ষাপট। আপনার-আমার বাপ-চাচারা এই সংস্কৃতিতেই জীবন পরিচালনা করে আসছেন। তাদের ভাষ্যমতে ঘরের নারীদের কাজ রান্না করা, কাপড় ধোঁয়া, সন্তান ও সংসার সামলানো আর পুরুষের কাজ শুধুই আয় করা। স্ত্রীর যত-যাই হোক না কেন, তাকে সময়মতো ঘরের সব কাজ করতে হবে। ঘরের কাজে স্ত্রীকে সাহায্য করার সংস্কৃতি আমাদের সমাজে নেই৷ থাকলেও সেটা খুব সামান্য পরিবারেই দেখা যায়। বরং যারা স্ত্রীর কাজে সাহায্য করে তাদের অন্য চোখে দেখা যায়। ‘বউ পাগল’ ট্যাগ লাগিয়ে ঠাট্রা-বিদ্রুপ করা হয়৷

এমনকি আপনি নিজে যদি আপনার স্ত্রীর কাজে সাহায্য করেন তাহলে স্বয়ং আপনার মা-চাচিরাই সবার আগে নাক সিটকাইবেন। এর অন্যতম কারণ হলো, উনারা এই সংস্কৃতিতে গড়ে উঠেননি। ঠিক একইভাবে আমাদের বাপ-চাচারাও এই সংস্কৃতির সাথে পরিচিত নন৷ উনারা উনাদের বাপ-চাচাদের যেভাবে দেখে এসেছেন নিজেরাও নিজেদের সেভাবে পরিচালনা করে চলছেন।

বউয়ের কাজ রান্না করা, সংসার সামলানো আর আমার কাজ হলো শুধু আয় রোজগার করা; মূলত এই ধারনা থেকে আমরা ছেলেরা কখনো রান্না শেখার প্রয়োজনবোধ করি না। তবে রান্না শেখার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্ত্রীর রান্নার কাজে সাহায্য করা, স্ত্রীর অসুস্থতায় তাকে রান্না করে খাওয়ানো, স্ত্রীকে ঘরের যাবতীয় কাজে সহযোগীতা করার মানসিকতা তৈরি করা। কারণ আপনার যদি সেই মানসিকতা না থাকে, স্ত্রীর প্রতি সেই মায়া-মহব্বত না থাকে, তাহলে আপনি যতই রান্না পারেন না কেন, স্ত্রীকে রান্না করে খাওয়ানো, তাকে ঘরের কাজে সহযোগীতা করা আপনার কাছে ‘নিজেকে ছোট করা’ বলে মনে হবে৷

কিন্তু আপনি যখন এই মানসিকতা রাখবেন যে, স্ত্রীর রান্নার কাজে, সন্তান ও সংসার সামলানোর কাজে সহযোগীতা করবেন, তার অসুস্থতায় নিজে সেবাযত্ন করে রান্না করে খাওয়াবেন তখন এই কাজগুলো করতে তেমন বেগ পেতে হবে না। কারণ আমি বিশ্বাস করি, একজন ব্যক্তি কোনো কাজ যদি আগ্রহ ও ভালোবাসার সহিত করে তাহলে সেই কাজটা আজ অথবা কাল, সুন্দর হবেই। অতএব স্ত্রীর অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে তাকে রান্না করে খাওয়াতে আপনাকে বিশেষ রাঁধুনি হতে হবে না।

বিশ্বাস করেন, আপনার স্ত্রীর অসুস্থতার সময় আপনি যখন তাকে রেস্ট করবে বলে কোনো মতো একটু ভাত, আলু ভর্তা আর ডিম ভাজি করে তাকে খাইয়ে দিবেন; আপনার স্ত্রীর কাছে এর চেয়ে সুখ-শান্তি ও আনন্দের মুহুর্ত আর কিছুই হবে না। আপনার রান্না খারাপ হলেও, লবন, ঝাল কম-বেশি হলেও আপনার স্ত্রী খুব মজা করেই তা গলাধঃকরণ করবেন ইনশাআল্লাহ।

এর ফলে কি হবে জানেন?
আপনার প্রতি আপনার স্ত্রীর সম্মান, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও আনুগত্য আরো শতগুণ বৃদ্ধি পাবে ইনশাআল্লাহ। সংসারে আল্লাহর বরকত ও রহমত বৃদ্ধি পাবে। সংসারটা পরিণত হবে জান্নাতের একটি টুকরোয়।

অতএব আসুন, আমরা যারা এখনো রান্না শিখিনি তারা রান্নাটা শিখে ফেলি। যেন স্ত্রীর অসুখ-বিসুখ, মান-অভিমানের সময় নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াতে পারি। এটা কিন্তু বউকে আয়ত্বে রাখারও অন্যতম সেরা একটি টোটকা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture