সার্টিফিকেটে বয়স লুকানো
সার্টিফিকেটে বয়স লুকানোটা এতোটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে যে, কেউ বয়স জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেবার পর পাল্টা জিজ্ঞেস করে- সার্টিফিকেটের বয়স নাকি আসল বয়স?
মানুষজন সার্টিফিকেটে বয়স লুকোয় কেনো? জন্মসাল বাড়িয়ে দেয় কেনো? এটা করে মূলত অবৈধ সুবিধা লাভের জন্য। বিশেষত সরকারি চাকরিতে জয়েন করতে গিয়ে সুযোগ যেনো আরো বেশি পাওয়া যায় এজন্য মানুষ এটা করে।
সুবিধা পেতে গিয়ে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে এমন উদাহরণও আছে। বিসিএস পরীক্ষা দিতে যেমন অনার্স উত্তীর্ণ হতে হয়, তেমনি একটি নির্দিষ্ট বয়সও লাগে আবেদন করতে। আমার কয়েকজন বন্ধু অনার্স উত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও ৪১ তম বিসিএসে আবেদন করতে পারেনি। কারণ, সার্টিফিকেটে তাদের বয়স ৬ মাস কম (বয়স ১ বছর কমানো হয়েছে এজন্য)।
মিথ্যার আশ্রয় নিলে কোনো না কোনোভাবেই ঠকতে হয়। ইহকালে হোক না হোক পরকালে তো অবশ্যই। সার্টিফিকেটে বয়স কমিয়ে বা বাড়িয়ে আপনি আরেকজনকে ধোঁকা দিলেন। ছোট্ট একটি কাজ করলেও কাজটির ফলে আপনি ধোঁকাবাজদের দলে নাম লিখালেন।
এক লোক শস্য বিক্রি করছে। শুকনো শস্য স্তুপের উপরে রাখলো, ভেজাগুলো নিচে। যারা কিনতে আসবে তারা তো শুকনো শস্য দেখেই কিনবে। কিন্তু নিচের শস্যগুলো তো ভেজা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্তুপের নিচে হাত ঢুকিয়ে ভেজা শস্যগুলো দেখে বললেন, “এসব কী?” লোকটি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বললো, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! এতে বৃষ্টির পানি লেগেছে।”
– তাহলে সেগুলো তুমি স্তুপের উপরে রাখলে না কেনো? এতে করে লোকেরা দেখে নিতে পারতো।
লোকটি কিন্তু দেখতে মনে হচ্ছে খুব বড়ো কোনো ধোঁকা দিচ্ছে না, কোটি কোটি টাকা আত্মস্মাৎ করে নিচ্ছে না। তবুও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার এই ধোঁকাবাজির ফলে কঠিন হুঁশিয়ারি শুনিয়ে দিলেন-
“যে ব্যক্তি ধোঁকাবাজি করে, আমার সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই।”
[সহীহ মুসলিম: ১৮৫]
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করবেন, তার স্থান কোথায় হতে পারে? রাসূলপন্থী হতে হলে, রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুসরণ করতে হলে আপনাকে ধোঁকাবাজি ছাড়তে হবে। ইসলামে ধোঁকাবাজের স্থান নেই।
ফুটনোট:
- যাদের ইতোমধ্যে এই সমস্যাটি হয়েছে, তাদের যদি সমাধানের সুযোগ থাকে তাহলে যথাসাধ্য চেষ্টা করতে পারেন।
- সমাধানের সুযোগ না থাকলে (এমন হলো যে, সব সার্টিফিকেট চেঞ্জ করতে জটিলতা হবে) তাহলে আন্তরিক তাওবা-ইস্তেগফার করতে পারেন।
- নিজে এই ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে পারেন যে, নিজের পরিচিত কাউকে এমন সমস্যায় পড়তে দিবেন না, এই বিষয়ে সচেতন করবেন সবাইকে।
ইসলামের সৌন্দর্য
(১৭তম পর্ব)