বিজ্ঞান সিরিজ – ০২ আপনার হাত
আপনি স্রষ্টাকে বিশ্বাস করেন না ভালো কথা। নিজের হাতকে বিশ্বাস করেন তো?
বিশ্বাস না করলে দেখে নিন একবার, আপনার হাত! উঁহু এভাবে নয়, গভীর ভাবে দেখুন। পারছেন না তো! আসুন আপনার হাতকে নিয়ে এই এপিসোডে হালকা ভাবে একটু পর্যবেক্ষণ করে আসি।
হাত!
আমরা হাত দিয়ে ধরি, খাই, কাজ করি, কিবোর্ডে লিখি, কাগজ কলমে লিখি, আঙুলে গগণা করি আবার হাত দিয়ে থাপ্পড়ও মারি, কিল-ঘুষি দেই, মারামারি করি! এই হাত দিয়েই দুর্নীতিও করি, কলমের এক খোঁচায় কালোকে বানিয়ে দেই সাদা আবার সাদকে কালো! হাত দিয়ে ভালো কাজও করি, দান খয়রাত, বস্ত্র বিতরন, নামাজ আদায়, দোয়া, ইত্যাদি…। হাত ছাড়া একটাবার নিজেকে কল্পনা করুন তো! ধরুন আপনার হাত নেই! খেতে গেলে, কাজ করতে গেলে, উঠতে গেলে, বসতে গেলে, পরতে হবে হাজারো সমস্যায়। আপনার কথা মতে স্রষ্টা বলেতো কিছু নেই, যখন আপনি মাতৃগর্ভে ছিলেন তখন আপনার দেহ, আপনার মস্তিষ্ক একটা সিদ্ধান্ত নেয় যে দুপাশে দুটা অঙ্গ বের হওয়া দরকার! যাতে থাকবে আঙুল! নখ! চামড়ায় মণ্ডিত চমৎকার কারুকার্য খচিত স্বতন্ত্র দুটি হাত! যে হাত দিয়ে পৃথিবীতে গিয়েই দরকার পরবে নানা কাজে! যে হাতের ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলবে না কোটি কোটি মানুষের হাতের সাথে!..
আসুন আরেকটু গভীরে।
মানুষের হাতে সাধারণত পাঁচটি আঙুল থাকে: চারটি আঙুল এবং একটি বৃদ্ধাঙ্গুল। এটিতে সিসাময়েড অস্থি বাদ দিয়ে ২৭টি হাড় রয়েছে, এই সংখ্যাটি বিভিন্ন মানুষের মধ্যে আলাদা হয়। যার মধ্যে ১৪টি হল আঙ্গুল এবং বৃদ্ধাঙ্গুলের ফ্যালাঞ্জেস (নিকটবর্তী, মধ্যবর্তী এবং দূরবর্তী)। মেটা কারপেল অস্থি আঙ্গুলগুলিকে কব্জির কারপেল অস্থির সাথে সংযুক্ত করে। প্রতিটি মানুষের হাতে পাঁচটি মেটা কারপেল এবং আটটি কারপেল অস্থি থাকে।
শরীরের কিছু স্নায়ু আঙ্গুলগুলিতে এসে শেষ হয়ে ঘন সন্নিবদ্ধ অবস্থায় থাকে, তাই আঙুলের অগ্রভাগ বা ডগা হল স্পর্শের প্রতি সবচেয়ে সংবেদনশীল। যার কারণে হাতের আঙুল দিয়ে আপনি কোনো কিছু ঠান্ডা নাকি গরম এটা দেখেন। এই হাতের আবার দেহের অবস্থান নির্ণয় করার সর্বাধিক ক্ষমতাও রয়েছে; সুতরাং, স্পর্শ অনুভূতি হাতের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত। শরীরের অন্যান্য যুগ্ম অঙ্গগুলির মতো (চোখ, পা, নাক) প্রতিটি হাতই বিপরীত মস্তিষ্কের হেমিস্ফিয়ার দ্বারা প্রভাবিত এবং নিয়ন্ত্রিত, যাতে এক হাতের আধিপত্য — একক হাতের কার্য, যেমন লেখার জন্য পছন্দসই হাত কোনটি সেটি স্বতন্ত্র ব্যক্তির মস্তিষ্কের কার্যকারিতা থেকে প্রতিফলিত হয়।
মানুষের মধ্যে, হাতগুলি দেহ ভাষা এবং ইশারা ভাষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদন করে। তেমনি দুটি হাতে দশটি আঙুল, এবং চারটি আঙুলের বারোটি ফ্যালাঞ্জেস (বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের দ্বারা স্পর্শযোগ্য) থেকে সংখ্যা পদ্ধতি এবং গণনা কৌশল এসেছে! যা দিয়ে আমরা গননা করতে পারি!
এবার আসুন আঙুল সৃষ্টি হয়েছে কোন মেকানিজমে সেটা নিয়ে কথা বলা যাক! আপনি আপনার হাতটা সামনে এনে আঙুলের ফাঁকা স্থানগুলো আরেকবার দেখে নিন। কিভাবে এটি তৈরি হয়েছিলো জানেন কি?
আপনি যখন ভ্রুণ অবস্থায় ছিলেন তখন একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে। তা হলো “লক্ষ লক্ষ কোষের একসাথে আত্মহত্যা করা৷” এই মরণাপন্ন কোষগুলো নির্দিষ্ট রেখা বরাবর মারা যায়, অবশিষ্ট কোষগুলো মৃত কোষগুলোকে খাদ্য হিসেবে খেতে শুরু করে। এবং সুনিপুণভাবে একটি নির্দিষ্ট সেপ অনুযায়ী রেখা বরাবর তৈরি হয় ফাঁকা স্থান। যা নিরর্ধারণ করে দেয়, আপনার কোন আঙুলটির গঠন কেমন হবে! ঠিক সেভাবেই আপনার হাত ও পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকা স্থান তৈরি হয়েছিলো। এটা না হলে আঙুলগুলো হতো হাঁসের পায়ের পাতার মতো লেগে থাকা! এমনটা হলে আমাদের নানা ঝামেলা পোহাতে হতো!
এই যে আমরা কথায় কথায় বলি হাতের কাঁচ আঙুল সমান না! একবার ভেবে দেখেছেন হাতের পাঁচ আঙুল সমান হয়ে সৃষ্টি হয় নি কেন! না ভেবে থাকলে পাঁচ আঙুল সমান করুন। এরপর ভাত খেতে বসুন, নিজেই বুঝবেন কতোবড়ো সমস্যা!
এরপর নখের কথাই ধরুন। আপনার দেহ বুঝতে পারলো আপনি দুনিয়ায় এসে কঠিন কঠিন কাজ করবেন যার জন্য আঙুলের মাংস ধরে রাখতে প্রয়োজন নখের! তাই নখ হয়ে গেছে! আপনি যে ফোনটা ধরে আছেন সেটা খুলতে কোন আঙুলটি ব্যাবহার করেছেন?
সেই আঙুল যদি আমি আপনার ফোনে লাগাই খুলবে?
খুলবে না। আমি কেন সারা পৃথিবীর সমস্ত মানুষ লাগালেও খুলবে না। ভেবে দেখুন সামান্য এক ইঞ্চি জায়গায় কে এমন নকশা এঁকে দিলো? হাতের উপর যে রেখাগুলো আছে সেগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখুন, কে এতো চমৎকার ডিজাইন করে দিলো? একটা বার ভাবুন না, বৃদ্ধা আঙুলটা মাঝখানে দিলে আর মাঝখানের আঙুলটা বৃদ্ধা আঙুলের জায়গায় দিলে কি কি সমস্যা হতো!
এই যে হাতের উপর এতো দাগ, রেখা, অসংখ্য আঁকাবাকা রেখা দেখছেন! এগুলো দেওয়ার কারণ হলো যাতে ঘর্ষণ শক্তি ব্যবহার করে আমরা কোনো কিছু ধরতে পারি, নচেৎ আপনি আমি কোনো কিছু ধরলে পিছলে যেতো! আবার হাতের ভেতর এতো এতো রক, এতো শিরা, এতো উপশিরা অথচ নেই কোনো গোলযোগ, নেই বিশৃঙ্খলা। সামান্য দুইটা ইয়ারফোনের তারেই আমরা গোলযোগ বাঁধিয়ে ফেলি!
একটাবার ভাবুন, এসব কি এমনি এমনি হয়ে গেছে?
আপনার শরীর এসব তৈরি করেছে?
নাকি আপনার মস্তিষ্ক এসব ভেবে ভেবে বানিয়েছে?
কেউ তো একজন আছেন যিঁনি পরিকল্পনাকারী, কেউ তো আছেন একজন নকশাকারী, কেউ তো আছেন একজন যিঁনি নিখুঁতভাবে সবকিছু তৈরি করেছেন। এখানো অবিশ্বাস করেন? তাহলে হাতের একটা আঙুল বানিয়ে দেখান দেখি! হাতের একটা পেশি বানিয়ে দেখান দেখি! বস্তুত আপনি একটা নখও বানাতে পারবেন না। এভাবে নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে একটু ভাবুন না। আপনার হাতই বলে দেবে-
রব্বি আল্লাহ
রব্বি কারিম
রব্বি রহিম
রব্বি রহমান
রব্বি আজিঝুল
রব্বি জব্বারুল
রব্বি সালামুল
রব্বি জালজালালি ওয়াল ইকরম।
কসমোলজি অফ মাস্টার প্লানার
বিজ্ঞান সিরিজ – ০১
বিজ্ঞান সিরিজ – ০২