বিজ্ঞান সিরিজ – ০১ ফুসফুস চিন্তা

মানব দেহ অপার বিষ্ময়ের আঁধার। মহান স্রষ্টা কতোটা নিপুণ কারুকার্যে আমাদের এ দেহটাকে যে সাজিয়েছেন তার কিঞ্চিৎ-ও যদি অনুধাবন করতে পারতাম! তাহলে হয়তো অপ্রাপ্তির তালিকাটা ছিঁড়ে অনুতপ্তে মাথা নুইয়ে দিতাম!
চলুন আজকের এপিসোডে ফুসফুস নিয়ে রবের মহিমান্বিত প্রকৌশল সমন্ধে একটুখানি চিন্তা করে আসি!

কখনো কি ভেবে দেখেছেন আপনার বক্ষপটে ইয়াবড়ো সাইজের ওঠানামা করা যন্ত্রটা আপনাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অতন্দ্র প্রহরীর মতো রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করছে!

দুইটা মিনিট শ্বাসটা বন্ধ করেই দেখুন না! কতোটা কষ্ট লাগে! আরও কিছুক্ষণ বন্ধ করে থাকলে একসময় পুরো দেহ নীল হয়ে আসবে! আপনার গোটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বাঁচা মরার প্রশ্ন নিহিত এই ফুসফুসে! অথচ মায়ের পেটে কিন্তু এই ফুসফুসের কোনো কাজেই ছিলো না! তারমানে বাতাস ভরা এই পৃথিবীর বুকে আপনাকে অতি সযত্নে বিচরণ করানোর জন্য কেউ একজন একটা ছক এঁকেছেন!

কি অদ্ভুত তাই না! আপনার পুরো দেহকে টিকিয়ে রাখতে দু’টো বড়ো বড়ো বায়ুথলী মুখ ও নাকের সাথে সংযোগ দিয়ে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে ছেড়ে দিলেন তিঁনি! কারণ তিঁনি জানতেন মায়ের পেট হতে বের হতেই আপনার শরীরের অক্সিজেনের যোগান দিতে ফুসফুস দরকার! আর অক্সিজেন সরবরাহ করতে অনবরত বিরামহীনভাবে শ্বাস নিয়ে চলার এই প্রকৃয়া মায়ের পেট থেকে পৃথিবীর মাটিতে পা রাখতেই ইনস্টল হয়ে গেল!

পৃথিবীতে আসার ১০ সেকেন্ড পর পরেই কান্নার মাধ্যমে আমরা নিলাম প্রথম শ্বাস! (সেই শ্বাস টেনেই কি-না এখন রবের বিরোধীতা করি!)

ভাবছেন এ আর এমন কি! অক্সিজেন নিচ্ছে কার্বনডাই-অক্সাইড ছেড়ে দিচ্ছে এই তো! জি না পাঠক। ফুসফুস যে কতোভাবে আপনাকে প্রকৃতিতে টিকিয়ে রাখতে সারভাইভ করে চলছে তা লিখে শেষ করার মতো নয়!

দেহ রাজ্যকে শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রতিনিয়ত কি বিশাল যুদ্ধ পরিচালনা করছে তা আমরা টেরও পাচ্ছি না। একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা সহজ করছি।

যেমন: আমাদের শ্বসনের সাথে প্রতি মুর্ষুতেই হাজার হাজার শত্রুবাহিনী আমাদের আক্রমণ করছে। এই শত্রুবহরে রয়েছে বাতাসে ভেসে বেড়ানো অসংখ্য প্রাণঘাতী ভাইরাস আর ব্যাকটেরিয়ার দল। কিন্তু এদের মধ্যে যারা নাক দিয়ে আমাদের অন্দরমহলে প্রবেশের চেষ্টা চালায়, তারা শুরুতেই এক বিশাল প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। নাসারন্ধ্রের মিউকাস গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত বিষাক্ত রসের আক্রমণে শত্রুসৈন্যের ৮০-৯০ ভাগই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। অপেক্ষাকৃত শক্তিশালীরা হয়ত বেঁচে থাকে। কিন্তু শ্বাসনালী জুড়ে যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র চুলের ন্যায় সিলিয়া থাকে তাদের অনুরণনে এক বিশেষ ধরনের বিদ্যুৎ তৈরি হয়। আর এর প্রভাবে হাঁচি ও কাশির উদ্রেক হয় এবং হাঁচির সাথে আক্রমণকারী মাইক্রোবগুলো বের হয়ে আসে!

আবার যারা এতকিছু অতিক্রম করে আমাদের ফুসফুসে গিয়ে হাজির হয় তাদের জন্য রয়েছে তৃতীয় স্তরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা। ফুসফুসের অভ্যন্তরে ফ্যাগোসাইটগুলো এই ক্ষতিকারী অনুজীবগুলো গিলে ফেলে এবং নিজেই এদেরকে নিয়ে শরীরের বাইরে চলে আসে। সত্যিই ভাবতেই অবাক লাগে! প্রতিটি নিঃশ্বাসের আবর্তে কত বিষাক্ত অনুজীব আমাদের আক্রমণ করছে আর মুহূর্তেই কত বিশাল যুদ্ধ শেষে আমরা নিরাপদ হচ্ছি তা আমরা ক্ষণিকের জন্যও টের পাচ্ছি না!

ফুসফুস আছে বলেই একটা শক্তিশালী হাঁচি দিয়ে জীবানু থেকে বাঁচতে পারছি। সে হাঁচির গতিবেগেও কম নয়!

শোয়েব আকতার কিংবা ব্রেটলির বলের গতিবেগ জানা আছে আপনার? আচ্ছা আমিই বলে দিচ্ছি!

এদের বলের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৪০ কি.মি. কিংবা ১৫০ কি.মি. তার চাইতেও কিছু বেশি। কিন্তু শুনলে অবাক হবেন যে, মানুষের হাঁচির ফলে সৃষ্ট শব্দের বেগ ঘণ্টায় ১৬০ কি.মি.।

এখন আপনি প্রশ্ন করতে পারেন এতো উচ্চ বেগের কি দরকার আছে?
হ্যাঁ, আছে। এর মাধ্যমেই শ্বাসনালীর অপ্রয়োজনীয় বস্তু, বর্জ্য ও অনুজীবগুলো বাইরে বের করে দেয় ফুসফুস। কিন্তু এত শক্তি পেল কোথায় ফুসফুস? কী আছে এতে?

মানুষের ফুসফুসের মূল একক অ্যলিভিওলাই তথা বায়ুথলি এদের মধ্যে কাজ করে ফুসফুস। তথ্যমতে, একজন মানুষের ফুসফুসে সর্বমোট ৭০০ মিলিয়ন বা ৭০ কোটিরও বেশি বায়ুথলি আছে। ফুসফুসের সবগুলো বায়ুথলি গুলো যদি সমানভাবে বিছানো যায় তবে একটি টেনিস কোর্টের সমান হবে!

এই বায়ুথলিগুলো প্রতি নিঃশ্বাসে সংকোচন প্রসারণের মাধ্যমে আমাদের বাঁচিয়ে রাখছে অক্সিজেন দিয়ে, আর প্রতি নিঃশ্বাসের আবর্তেই প্রতিরোধ করছে ভয়ঙ্কর আর বিষাক্ত সব অনুজীবদের। একজন গড় আয়ুষ্কালপ্রাপ্ত সুস্থ মানুষ তার জীবদ্দশায় সর্বমোট প্রায় ৫০ কোটিবার শ্বাস-প্রশ্বাস চালায় এবং ততসংখ্যকবার-ই আতঙ্কিত করে তোলে অনুজীবদের!

এখন বলুন দেখি, এই জটিল সব প্রকৃয়া প্রতিটা ক্ষণে ক্ষণে যিঁনি আনজাম দিয়ে যাচ্ছেন কি করে আমরা তাঁর নাফরমানি করি!

কসমোলজি অফ মাস্টার প্লানার
বিজ্ঞান সিরিজ – ০১

লিখেছেন

আরিফ আব্দুল্লাহ

লালমনিরহাট সরকারি কলেজের বাংলা ডিপার্টমেন্ট অনার্স ৩য় বর্ষে পড়াশোনা করছি।
আমার জীবন মরন সবকিছু স্রষ্টার জন্য

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

লালমনিরহাট সরকারি কলেজের বাংলা ডিপার্টমেন্ট অনার্স ৩য় বর্ষে পড়াশোনা করছি।
আমার জীবন মরন সবকিছু স্রষ্টার জন্য

Exit mobile version