স্বামী যখন স্ত্রীর সাথে বাসর করবেন তখন নিম্নোক্ত বিষয়গুলো পালন করা সুন্নাত:
১. বাসর ঘরে স্ত্রীর সাথে কোমল আচরণ করা: আসমা বিনতে উমাইস রাযি. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি ছিলাম আয়েশা রাযি. এর বান্ধবী। আমি আরও কিছু মহিলাকে সাথে নিয়ে তাকে রাসূল ﷺ-এর জন্য প্রস্তুত করে দিয়েছি ও তাঁর ঘরে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছি। আসমা রাযি. বলেন, আল্লাহর শপথ, আমরা তাঁর ঘরে মেহমানদারি হিসেবে এক পেয়ালা দুধ ছাড়া আর কিছু পাইনি। তিনি সে পেয়ালা থেকে কিছুটা পান করলেন, এরপর আয়েশা রাযি.-কে দিলেন। অল্পবয়সী মেয়েটি লজ্জাবোধ করল। তখন আমরা বললাম, আল্লাহর রাসূলের হাত ফিরিয়ে দিও না; গ্রহণ কর। তখন সে ইতস্তত করে হাতে নিল এবং সেটা থেকে পান করল। অতঃপর রাসূল ﷺ বললেন, তোমার বান্ধবীদেরকে দাও। আমরা বললাম, আমাদের চাহিদা নেই। তিনি বললেন, তোমরা ক্ষুধা ও মিথ্যা দুটোকে একত্র করো না।
(মুসনাদে আহমাদ ২৬৯২৫)
২. স্ত্রীর মাথায় হাত রেখে তার জন্য দোয়া করা: আমর বিন শুয়াইব থেকে তিনি তাঁর পিতা থেকে তিনি তাঁর দাদা থেকে তিনি নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যখন কোন নারীকে বিয়ে করে তখন সে যেন স্ত্রীর মাথার অগ্রভাগ ধরে বলে–
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَمِنْ شَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ
(অর্থ- হে আল্লাহ! আমি তাঁর কল্যাণটুকু এবং যে কল্যাণের ওপর তাকে সৃষ্টি করেছেন, অভ্যস্ত করেছেন সেটা প্রার্থনা করি। আর তার অনিষ্ট থেকে ও যে অনিষ্টের ওপর তাকে সৃষ্টি করেছেন, অভ্যস্ত করেছেন তা থেকে আশ্রয় চাই)।
(সুনানে আবু দাউদ ২১৬০)
৩. কোন কোন সলফে সালেহীন স্বামী-স্ত্রী একত্রে দুই রাকাত নামায আদায় করাকে মুস্তাহাব গণ্য করেছেন: ইবনে আবি শাইবা শাকীক থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাযি.-এর কাছে এক লোক এসে বলল, আমি এক যুবতী মেয়েকে বিয়ে করেছি। আমি আশংকা করছি- সে আমাকে অপছন্দ করবে। বর্ণনাকারী বলেন, আব্দুল্লাহ বললেন, মিল-মহব্বত আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। দূরত্ব ও ঘৃণা শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। আল্লাহ যা হালাল করেছেন শয়তান সেটাকে তোমাদের কাছে অপছন্দনীয় করে তুলতে চায়। যখন সে তোমার কাছে আসবে তখন তাকে তোমার পিছনে দুই রাকাত নামায পড়ার নির্দেশ দিবে।
(মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবা ১৭১৫৬)
৪. স্বামী যখন স্ত্রী সহবাস করতে চাইবে তখন বলবে:
بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
‘আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ! আমাদেরকে তুমি শয়তান থেকে দূরে রাখ এবং আমাদেরকে তুমি যা দান করবে (মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবে) তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখ।’
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এরপরে যদি তাদের দু’জনের মাঝে কিছু ফল দেয়া হয় অথবা বাচ্চা পয়দা হয়, তাকে শয়তান কখনো ক্ষতি করতে পারবে না।
(বুখারী ৪৭৮৭)
৫. সদভাবে সংসার করার নিয়ত করা, স্ত্রীর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা এবং স্ত্রীও স্বামীর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা: আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ فَإِنْ كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا
আর তোমরা তাদের সাথে সৎভাবে জীবন যাপন করবে। তোমরা যদি তাদেরকে অপছন্দ কর তবে এমন হতে পারে যে, আল্লাহ্ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন তোমরা তাকেই অপছন্দ করছ।
(সূরা নিসা ১৯)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِذَا صَلَّتْ الْمَرْأَةُ خَمْسَهَا وَصَامَتْ شَهْرَهَا وَحَفِظَتْ فَرْجَهَا وَأَطَاعَتْ زَوْجَهَا قِيلَ لَهَا : ادْخُلِي الْجَنَّةَ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شِئْتِ
‘যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে, রমযান মাসে রোযা রাখে, নিজের যৌনাঙ্গ হেফাযতে রাখে, স্বামীর আনুগত্য করে; তাকে বলা হবে: তুমি জান্নাতের যে দরজা ইচ্ছা হয় সে দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ কর।’
(মুসনাদে আহমাদ ১১৬১)
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকল কে আমল করার তাওফীক দান করুন।