উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফতকালে প্রত্যেক সাহাবী বার্ষিক ভাতা পেতেন। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ভাতার শ্রেণীবিভাগ করেন। ফার্স্ট ক্লাস, সেকেন্ড ক্লাস, থার্ড ক্লাস ভাতা। তাঁর খিলাফতকালে ফার্স্ট ক্লাস ভাতা পেতেন উম্মুল মুমিনীন। তাঁদের মধ্যেও সর্বোচ্চ বার্ষিক ভাতা পেতেন আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা।
আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বার্ষিক ১০,০০০ দিরহাম ভাতা পেতেন। পরবর্তীতে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সেটা বাড়িয়ে ১২,০০০ দিরহাম করেন।
অর্থের ব্যয় ক্ষমতা সূচক বা গোল্ড-সিলভার স্ট্যান্ডার্ড সূচক অনুযায়ী হিশেব করলে আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহার বার্ষিক ভাতার পরিমাণ ছিলো প্রায় দেড় কোটি টাকা!
আমাদের দেশে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর সাধারণত এককালীন যে পেনশন দেয়া হয়, আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহার বার্ষিক ভাতা ছিলো সেটার চেয়েও বেশি।
সাহাবীদের অর্থনৈতিক জীবনে একটি জিনিস কমন ছিলো। সেটা হলো- অর্থ ব্যবহার। তারা অর্থ সঞ্চয় করতেন না, হাতে আসা মাত্রই দান করতেন। এটাই ছিলো বেশিরভাগ সাহাবীদের জীবনযাপনের পদ্ধতি।
উম্মুল মুমিনীন আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘরে বার্ষিক দেড় কোটি টাকা ভাতা গেলে তিনি ২৪ ঘন্টার মধ্যে পুরো টাকা দান করে ফেলতেন।
বার্ষিক ভাতা ছাড়াও তিনি অন্যান্য উপহার পেতেন।
একবার তাঁর হাতে ৭০,০০০ দিরহাম আসে। যা প্রায় সাড়ে দশ কোটি টাকার বেশি। আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা সেগুলো পাওয়া মাত্রই দান করে ফেলেন, নিজের জন্য ১ দিরহামও রাখেননি।
আরেকবার মুআবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে ১ লক্ষ দিরহাম হাদিয়া পাঠান। যেদিন তাঁর হাতে টাকা আসে, সেদিন তিনি রোজাদার ছিলেন। ইফতার করার মতো খাবার ঘরে ছিলো না, অথচ তাঁর হাতে আসলো প্রায় ১৫ কোটি টাকা। তিনি সেই টাকা কী করেন? দিনের মধ্যেই দান করে ফেলেন।
আরেকবার তাঁর বোনপো আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু খালার তাঁর জন্য ১ লক্ষ দিরহাম বা ১৫ কোটি টাকা পাঠান। সেদিনও তিনি রোজা ছিলেন। ইফতারের পূর্বে সকল টাকা দান করে ফেলেন, কিন্তু ইফতার করার জন্য তাঁর ঘরে ‘ভালো খাবার’ ছিলো না!
সাহাবীদের সম্পর্কে আমাদের সবচেয়ে বড়ো ভুল ধারণা হলো- সাহাবীরা গরীব ছিলেন, তাদের কিছু ছিলো না। ফলে, তাদের দানের ঘটনাগুলোকে আমরা রিলেট করতে পারি না। কিন্তু, যখন দেখি যে, তারা কোটিপতি হবার মতো সক্ষমতা রাখতেন, কিন্তু নিজেদের ইচ্ছায় সম্পদ না জমিয়ে সব দান করতেন, তখন আমরা তাদেরকে এপ্রিশিয়েট করতে পারবো। যখন দেখবো, তারা এক বসায় কোটি কোটি টাকা দান করতেন, তখন বুঝবো তারা কেমন হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন।
তারা সুযোগের অভাবে গরিবী জীবনযাপন করেননি। বরং সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তারা উচ্চবিলাসী জীবনযাপন করেননি। ঠিক এই কারণে তারা আমাদের রোল মডেল। ঠিক এই কারণে তাদের জীবনদর্শন আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার, অনুসরণীয়।