সাদ্দুম নগরীতে (ইরাক ও ফিলিস্তিনের মধ্যবর্তী স্থান) বসবাসরত এক সম্প্রদায়-কে আল্লাহ তায়ালা তার গজব দ্বারা ধ্বংস করে দেন। শুধু ধ্বংসই নয়! পরবর্তী সকল মানুষের জন্য শিক্ষাস্বরুপ আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে এই ঘটনার বর্ণনা করেন। পৃথিবীর ইতিহাসে যে কয়েকটি জাতিকে আল্লাহ তায়ালা ধ্বংস করে দিয়েছেন—তন্মোধ্যে অন্যতম এই জাতি। তাদের দোষ ছিলো— ‘হোমোসেক্সুয়ালিটি’ তথা ‘সমকামিতা’র উদ্ভাবন। তাদের হাত ধরেই ভয়ংকর নোংরা এই পাপাচারের জন্ম হয়। যেই পাপ কোন পশু সমাজেও ঘটেনা। আর ধ্বংসিত এই জাতি ছিল আল্লাহর পয়গম্বর হযরত লুত (আঃ) এর উম্মাত। ইতিহাসে যারা বর্ণিত কুখ্যাত চরিত্রের অধিকারী হিসেবে। তাদের ধ্বংসাবশেষের ঐতিহ্য ধারণ করে আছে জর্ডানে অবস্থিত ‘ডেড সি’ বা ‘মৃত সাগর।’
মানুষের ব্রেইনের/মাইন্ডের দুটি ক্লাসিফিকেশন রয়েছে। একটি কনসাস (Conscious) মাইন্ড, অপরটি সাব-কনসাশ (sub-conscious) মাইন্ড। কনসাশ মাইন্ড বিচার বিবেচনার মাধ্যমে যে কোন কিছু গ্রহণ করে আর সাব কনসাশ মাইন্ড বিচার বিবেচনার এবিলিটি রাখেনা। মানুষের আবেগ,অনুভূতি সব কিছুই নিয়ন্ত্রন করে এই সাব-কনশাস মাইন্ড। মানুষের এই সাব-কনশাস মাইন্ড নিয়ন্ত্রিত হয় কনশাস মাইন্ড দ্বারা। মেডিকেলের ভাষার যাকে বলে ‘ইনহিবিটরী ইফেক্ট’।কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাব-কনশাস মাইন্ড এতই শক্তিশালী যে কনশাস মাইন্ড তা আর নিয়ন্ত্রন করতে পারে না ।আর সাব-কনশাস মাইন্ড মানুষের আচার আচরণের উপরও প্রভাব ফেলে। আমরা যখন টিভিতে,কারো মুখে, কোন অনলাইন মিডিয়ায় কিছু দেখি বা শুনি তখন তা আমাদের সাব-কনশাস মাইন্ডে জমা হয়ে যায়। অর্থাৎ, আমরা যদি প্রতিদিন শুনি যে— ‘সুর্য পশ্চিমদিকে উদিত হয়’। তাহলে আমাদের সাব-কনসাশ মাইন্ড একদিন এটা বিশ্বাস করতে বাধ্য হবে যে সুর্য পশ্চিমদিকেই উদিত হয়।
I don’t have any religion, because I am my own god
Whatever ordeals come, I’ll take them with my own two hands
And I say it to myself again.
উপরের ইংরেজি বাক্যগুলো একটি ব্যান্ড-এর বিখ্যাত গানের লিরিক্স এর অংশ। যার সহজ বাংলা ট্রান্সলেশন হচ্ছে, “আমার কোন ধর্ম নেই। কারণ— আমি নিজেই নিজের প্রভু। যদি অগ্নিপরীক্ষা আসে, আমি তাদের আমার দুই হাত দ্বারাই কন্ট্রোল করবো।”
লিরিক্স এর এই অংশে শুধু শিরকই নিমজ্জিত নয়, রয়েছে অন্যকে প্রভু দাবী করার ভয়ংকর কলি। গানের ফাঁকে, মিউজিকের তালে আমরা এগুলোই শুনি। আর হ্যাঁ! এই গানের পুরোটাই শিরকী বাক্য দিয়ে সজ্জিত।
পৃথিবীর ইতিহাসের জগণ্যতম, নিকৃষ্টতম এবং সবচেয়ে বিকৃতরূপ পাপাচার হচ্ছে সমকামিতা। যেই পাপ যৌন চাহিদা মেটানোর একটি পশু তার বিপরীত লিঙ্গেরই দ্বারস্থ হয়। অথচ! মানবসমাজের কতিপয় লোক ঘৃণিত এই পাপ-অপরাধের নিয়মিত স্বাক্ষী। এমনকি— যার প্রচলন পশ্চিমাদের ন্যায় আমাদের দেশের প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সম্প্রতি জাতীয় ফুটবল দলের দুই নারী সদস্যের সমকামিতার ঘটনা ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে। ঘুমের ঔষধ দিয়ে আলাদা করা যায়নি দু’জনকে। দু’জনই অকপটে বলছে ‘একজন আরেকজনকে ছাড়া বাঁচবেনা।’ ঘটনা বাংলাদেশেরই। আমাদের প্রিয় এই দেশেরই। আরেকটি হত্যা ঘটনার মূল নেপথ্য কারণ হচ্ছে সমকামিতা। যেই ঘটনার নিউজ কাভারেজ করা হয়েছে মেইনষ্ট্রিম অনেকগুলো নিউজ পোর্টাল/চ্যানেলে।
চাল ছাকনিতে পরিষ্কার করার সময় যেভাবে দুই একটি চাল নিচে পরে যায়—ঠিক তেমনিভাবে এইসব ঘটনার প্রচার দুই একটিরই হয়। আড়ালে লুকিয়ে থাকে অসংখ্য ঘৃণিত গল্প। যেই পাপাচার আইয়ামে জাহেলী যুগেও ছিলোনা— সেই পাপাচার আমাদের সমাজে এতটাই প্রচলিত হয়েছে যে তা নিয়ে প্রকাশ্যে লিখতে, বলতে হচ্ছে।
সম্প্রতি তরুণ সমাজ ওয়েস্টার্ন সোসাইটির পিছনে হন্য কয়ে ঘুরছে। তাদের ইচ এন্ড সিংগেল এক্টিভিটি ফলো করাতেই নোংরা আনন্দের সাধ পাচ্ছে প্রাচ্যের অধীন কান্ট্রিগুলো। একটুও কমতি নেই বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীদের কর্মকান্ডে। বিশেষত— কালচারাল এক্টিভিটির ক্ষেত্রে চোখ বন্ধ করে পশ্চিমা অশ্লীললতার অনুসরণকেই মর্ডানিসম বলে ভেবে বেড়াচ্ছে গুনে ধরা তারুণ্যশক্তি। গান, মুভি, শো কিংবা ইউটিউবের কোন কন্টেন্ট হিসেবেও সিলেকশনের টপে থাকছে ওয়েস্টার্ন এক্টিভিটি। যার ফলস্বরুপ—তরুণ/তরুণীদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত ও অনেকের মোস্ট ফেব্রিট মিউজিক্যাল ব্যন্ড BTS. (পশ্চিমা আদলে তৈরি কোরিয়ান ব্যন্ড)
BTS…। কোরিয়ান এই ব্যান্ডের ফুল মিনিং হচ্ছে Bangtan Sonyeondan.
পূর্বোল্লিখিত God Rap নামক কুখ্যাত এই গান পরিবেশিত হয় এই ব্যান্ড দলের দ্বারাই। বিভিন্ন মিউজিক্যাল ভিডিও তে সরাসরি অথবা ইঙ্গিতের মাধ্যমে প্রমোট করা হয় অপরাধ জগতের নিকৃষ্টতম অপরাধ ‘সমকামিতা’-কে।
আমি ভাবতেই পারি! আমি তো আর সমকামিতায় লিপ্ত হচ্ছিনা। আমি তো আর আল্লাহকে অবিশ্বাস করছিনা। মাত্র তাদের গানটাই শুনছি— অথবা ভিডিও দেখাতেই সীমাবদ্ধ। জ্বী ভাইয়া অথবা আপু! আপমার ভাবনাকে সাধুবাদ জানাই। তবে আপনার ভাবনা সম্পূর্ণরুপে ভুল। আমি যে সাব-কনসাশ মাইন্ডের কথা বলেছি তা একটু রিকল করুন প্লিজ। । এই গান শুনা অথবা হালকা সমকামিতার ইঙ্গিতবহ মিউজিক্যাল ভিডিও দেখার মাধ্যমে আপনি একদিন সমকামি হিসেবেই গড়ে উঠবেন। অথবা— মহান রাব্বে কারিমের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন। আর যা সম্ভব হবে আপনার সাব কনসাস মাইন্ড এর ইফেক্ট দ্বারাই।
নিঃসন্দেহে প্রশ্নাতীত গান-বাজনা হারাম। সেই হিসেবে BTS এর পার্ফোর্মেন্স দেখা ভালো বা কল্যাণকর চিন্তা করাটাই বোকামী। কেননা—ইসলামিক লো ইম্পলিটেড সকল প্রোহিবেটেড জিনিস হয় ব্যক্তি, পরিবার অথবা সমাজের জন্য কোন কোনভাবেই ক্ষতির কারণ।
সম্প্রতি খুব বড় সাইজে BTS লেখা মাস্ক পরে ঘুরাঘুরি করেন অসংখ্য তরুণি। এই তালিকায় ২৫/৩০ বছরের তরুণী থেকে শুরু করে মাত্র ১৫ বছরের বালিকাও রয়েছে। সহজেই অবলোকিত হয়— এই তরুণ কিংবা তরুণী BTS এর কতটুকু ফ্যান?
হ্যাঁ! এই প্রশ্নের উত্তরে কোন এক্যুরেট পরিমাণ ম্যানশন করা যাবেনা। শুধু মাস্ক কিংবা পোশাকেই সীমাবদ্ধ নয় নোংরা এই ভালোবাসা। এই ব্যান্ডের জন্য পরিবার ছেড়ে দিতে রাজি অসংখ্য মেয়ে/ছেলে। এবং অলরেডি এই কাজ অনেকের দ্বারা সম্পাদিত হয়েও গেছে।
BTS ফলোয়াররা এতটাই তাদের পছন্দ করেন যে—অনেকেই তাদের স্বামী হিসেবে BTS মেম্বার্সদেরই চান। অন্যথায় বিয়ে করতেও নারাজ। বাংলাদেশের কথাই বলছি। ইভেন— ফলোয়ার্সদের সাথে BTS বিরোধী কোন কথা বললে বাবা-মা কিংবা শিক্ষক যে কারো সাথেই বেয়াদবি করতে কুন্ঠাবোধ করেনা তারা। আর এটাই হলো ফেতনা। মহা ফেতনা।
যারা উপর্যুক্ত এক্টিভিটির সাথে জড়িত নয়—তারা নিজেকে স্বার্থক ভাবার উপায় নাই। এগুলোর সাথে কানেক্টেড না থেকে শুধু BTS পার্ফোর্মেন্স দেখে মুগ্ধ হওয়াটা নোংরা এসকল কাজের (বিয়ে না করা, বেয়াদবি করা, সমকামিতায় লিপ্ত হওয়া ইত্যাদি) ফার্স্ট স্টেজ। শুরুটা এখানে আর সমাপ্তির গন্তব্য দূর,বহুদূর।
প্রিয় ভাই অথবা বোন! আমি আপনাকেই বলছি। হ্যা, আপনাকেই। বিশ্বাস করুন আপনার বিরুদ্ধে আমার কোন ক্ষোভ নেই। কিন্তু আপনার ধাপে ধাপে ধ্বংসের দিকে যাত্রা আমাকে ভাবায়,কাঁদায়। এখনই পরিহার করুন। বিনোদন কিংবা এনজয়মেন্ট এর দোহাই দিয়ে আর কতটুকু নিকৃষ্টতম অপরাধ হোমুসেক্সুয়ালিটিকে প্রমোট করবেন। কি এমন হেমিলিওনের বাঁশিওয়ালা আপনাকে আকৃষ্ট করলো? আপনাকে কি সুরা ফাতেহার অনিন্দ্য সুর মুগ্ধ করতে পারেনা? আল্লাহর প্রশংসাময় বাক্য কিংবা রাসুলের শানে গাওয়া গানের তালে কি আপনি দুলতে পারেননা!। যেই অপরাধের জন্য ধ্বংস হয়েছিলো লুত (আঃ) এর জাতি, সেই অপরাধকে ছোট্ট কিংবা বিরাট আকারে আপনি প্রমোট করছেন। ভাবুন, প্লিজ। ভাবুন।
BTS নিয়ে হয়তো কথা বলতাম না তাদের না চেনার সুবাধে। কিন্তু উক্ত হিপহপ ব্যন্ড এর ফ্যান-ফলোয়ার্সদের মারাত্মক অস্বাভাবিক কার্যকলাপ চুখে আঙ্গুল তুলে দায়িত্ববোধ জাগিয়ে দিয়েছে। কথা তো বলতেই হবে। কলম তো ধরতেই হবে।
যুক্ত করা সকল ঘটনা/ইনফরমেশন রেফারেন্স সহ উল্লেখ করা যেতো। বিশেষ কারণে এভয়েড করেছি।
যারা BTS চিনেন না তারা আল্লাহর ওয়াস্তে আমার পোস্ট দেখার পর BTS এর ভিডিও দেখে/গান শুনে আমাকে গুনাহগার করবেন না প্লিজ। শুধু পোস্টটি লেখার উদ্দেশ্যেই BTS নিয়ে রিসার্চ করেছি। আমিও অজ্ঞাত ছিলাম এই সম্পর্কে বহুদিন।