Writing

বাবাকে খুঁজবো সেদিন

নূরানী শেষ করে হিফয বিভাগে ভর্তি হয়ে ৭ পারা মূখস্ত অবস্থায়।মাস টাও রমাদান। এদিকে বড় আপুর ও বিয়ের কথাবার্তা হচ্ছে। সংসারের আয় এক মাএ বাবা! “বাবার রিকশার প্যাডাল মুরি দিয়ে যতটুকু হয় তাতেই চলে আমাদের পরিবার

Table of Contents

(১)

মায়ের কাছ থেকে শুনেছিলাম আমি যখন খুব ছোট। গুড়ি গুড়ি পায়ে হাটাহাটি করি তখন নাকি বাবা আমাকে হাফেজ সাহেব হাফেজ সাহেব বলে ডাকতেন। এক ভাবে যখন চলতে শিখেছি বাবা আমাকে মুক্তবে নিয়ে যেতেন। মুক্তবে আমাকে কোলে নিয়ে বসে থাকতেন। মানুষটির স্বপ্ন একটাই আমাকে হাফেজ বানাবেন। আমাকে তার রবের কালাম শিখাবেন। শুকরিয়া ইয়া রাব্ব বাবার স্বপ্ন প্রায় ছুঁই ছুঁই।

(২)

গত কিছুদিন আগে বাবা রিকশা নিয়ে বেরিয়েছিলেন, রমাদান মাস হঠাৎ করে রাস্তায় মাথার ব্যথায় পড়ে গেলেন।তারপর থেকে আর আগের মত স্বাভাবিক ভাবে চলতে পারেন না। কথা বলতে গেলেও কেমন যেন সব কথা বলতে পারেন না। আমাদের পরিবারের এক মাএ আয়ের উৎস ‘বাবা‘ বাবার এই মূহুর্তে অসুখের করুণ পরিনতি পরিবারে ডেকে আনলো ভয়াবহ অন্ধকার।

যেখানে প্রতিদিন রিকশা চালিয়েও পরিবার চালাতে হিমসিম খেতে হয়। সেখানে সকল আয়ের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে সেই পরিবার কি ভাবে চলবে?

সেই পরিবারের অবস্থা কেমন হবে?

(৩)

বড় আপুর বিয়েটা হয়েও হল না। ছেলেকে একটা ফ্রিজ আর ঘর সাজানোর জন্য কিছু ফার্নিচার ও কিছু নগত অর্থ দিলে হয়তো বিয়েটা হতো।
কিন্তু পরিবারের এই করুণ অবস্থা বাবা মায়ের আর্তনাদ শুনার মত এই মূহুর্তে কেউ নেই।
তাহলে কোথা থেকে মিটাবে ছেলের এই আয়েশ?
বড় আপু মেশকাত শরিফ শেষ করে আর পড়েন না,

যদিও তার একজন আলেমা হওয়ার খুব স্বপ্ন কিন্তু পরিবারের এই হালত নিয়েই কিভাবে তার স্বপ্ন পূরণ করবেন?
যেখানে পেট চলেনা যেখানে পড়াশোনা কি খুবি জরুরি?
বাবার শখের কারণে আমার হিফয করাটা এখনো চলছে। নয়তো কবেই চলে যেতাম কোনো রেস্টুরেন্টে প্লেট মুছার জন্য।
বিশ্বাস করুন মায়ের ছাপা কান্না আমার একদম সয্য হয়না। মায়ের ঝলমলে চেহারাটা আর ঝলমলে নেই।
চুল গুলিও কেমন সাদা হয়ে পড়েছে।

(৪)

ছোট বোন শ্রাবণীর বয়স ১০ পেরিয়ে ১১তে পড়বে আগামী ৩০ জুন।
পাশের বাসার ইফতারের নানা বাহারি দেখে মায়ের কাছে বায়না ধরছে তিন দিন ধরে। মা-ও প্রতিদিন আশা দিচ্ছে, আজকে না কালকে খাওয়াবো কাল তোর বাবা রিকশা নিয়ে বেরোবে। এভাবেই চলছে আমাদের পরিবার। দিনের পর দিন মাসের পর মাস চলতেই লাগলো।

বড় আপুর বিয়েটা হয়ে গেলে আমার বাবা মায়ের নানা কথা শুনতে হত না পাশের বাসার রফিয়া খালার কাছ থেকে।রফিয়া খালা মাকে প্রতিদিন তার নেশাখোর ছেলের জন্য প্রস্তাব নিয়ে আসে। ছেলেটা এর আগেও দুইটা বিয়ে করেছে, তার মধ্যে কোনো স্ত্রী-ই এখন নেই। প্রতিদিন রফিয়া খালার ছেলে নিজ স্ত্রীকে তার পেন্টের বেল্ট দিয়ে আঘাত করতেন।
এসব জেনে শুনে কোনো বাবা মা-ই চাইবে না তার সন্তানকে এমন অগ্নিকান্ডে নিহ্মেপ করতে।

(৫)

ফজর বাদ বাবার জানাযা।
গত কাল রাতে বাবা আল্লাহর জিম্মায় চলে গেলেন।
এক রাশ আশায় আমার বাবারও স্বপ্ন ছিল আমাদের কে নিয়ে। সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়ার আগেই, রাব্বে কারীম বাবাকে নিয়ে গেলেন।
ছিন্ন বিন্ন পরিবারে একমাএ পুরুষ এখন আমিই।
বেড়ে উঠার আগেই দ্বায়িত্ব পেয়ে গেলাম।
চোখের নোনাজলে প্রহর কাটছে আমার।
এদিকে বাবার হঠাৎ চলে যাওয়া বড় আপুর বিয়ে আর সংসারের দায়িত্বতো আছে-ই।
হিফযটা পূর্ণ হয়েও যেন হয়নি’

(৬)

শত হতাশা আর কষ্টের মধ্যে দিন কাটলেও সূরা আল-ইনশিরাহ্ এর ৫ এবং ৬ এই দুইটা আয়াতের কথা একদম ভুলিনি।
যেখানে রাব্বে কারীম আমার মত অসহায়কে উদ্দেশ্য করে বলেছেনঃ

فَاِنَّ مَعَ الۡعُسۡرِ یُسۡرًا ۙ
কষ্টের সাথেই তো স্বস্তি আছে।

আবার

اِنَّ مَعَ الۡعُسۡرِ یُسۡرًا ؕ
অবশ্যই কষ্টের সাথে স্বস্তি আছে।

একদিন সেই কষ্টকে ভেদ করে সূর্যের কিরণের আলো আমার ঘরে আসবেই।
বাবার হাফেজ সাহেব বাস্তবে রূপ নিবে
ইন শা আল্লাহ।

আমিও তখন দিশেহারা হয়ে বাবাকে খুঁজবো।
রাব্বে কারীমের বিচার দিবসে!”

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture