اللَّهُمَّ قِنِي شُحَّ نَفْسِي
মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ক্বিনী শুহ্হা নাফসি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে আমার আত্মার লোভ থেকে রক্ষা করুন!
কখনও কখনও, আপনি যদি নবী, সাহাবী এবং ধার্মিকদের ভয়ের বিষয়গুলো লক্ষ্য করেন, তবে তা আপনার কাছে আপাতদৃষ্টিতে অর্থহীন মনে হবে। তারা এতটাই ভাল ছিলেন এবং খারাপ বৈশিষ্ট্যগুলি থেকে এতটাই দূরে ছিলেন যে আমরা বুঝতেই পারি না তারা কেন ওই বিষয়গুলোকে ভয় করতেন – হোক তা শারীরিক বা মানসিক।
উদাহরণস্বরূপ, ইব্রাহীম (আ:)-কে আল-সিদ্দিক (সত্যবাদী) নামে ডাকা হলেও তিনি অসততাকে ভয় করতেন; মরিয়ম (আ:) সকল নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বিনয়ী, সর্বশ্রেষ্ঠ এবং পবিত্রতম হওয়া সত্ত্বেও তিনি অশালীনতাকে ভয় করতেন, সম্ভবত অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে বেশি। এটি তাদের উচ্চ মান এবং নিজেদের জন্য তারা যে মানদন্ড নির্ধারণ করেছিলেন তার ইঙ্গিত বহন করে।
সম্ভবত সাহাবীদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী ছিলেন আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রা:)। তিনি পরিচিত ছিলেন তার অপরিসীম উদারতার কারণে। যখন তিনি মদিনায় তার বৃহৎ বাণিজ্য কাফেলা নিয়ে আসতেন, লোকবলে সেই সমস্ত কাফেলা এতটাই বড় ছিল যে, মদিনাবাসী মনে করত হঠাৎ এক বৃহৎ সেনাবাহিনী এসে শহরটিকে আক্রমণ করেছে। তিনি ক্রমাগত দান করেই যেতেন, যাতে আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালার কাছে তিনি আর্জি পেশ করতে পারেন শুধু এই পৃথিবীতেই নয়, তাঁর অনুগ্রহ যেন তাকে পরিব্যপ্ত করে পরকালেও, এবং সেই অনুগ্রহে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা যেন তাকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেন।
একবার তাওয়াফের সময় আব্দুর রহমান ইবনে আউফকে (রা:) কেবলমাত্র একটি দু’আ করতেই দেখা গেল। আপনি কি কল্পনা করতে পারেন এই মহৎ এবং উদার ব্যক্তিটি কাবা ঘরের চারপাশে সাতবার ঘুরে ঘুরে কেবলমাত্র এই একটি দু’আই করছেন –
‘হে আল্লাহ, আমাকে আমার আত্মার লোভ থেকে রক্ষা করুন!’
যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কেন তিনি বারবার এই দু’আটি করছেন, উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘যদি আমি আমার আত্মার লোভ থেকে রক্ষা পাই, তাহলে আমি চুরি করবো না, ব্যভিচার করব না, এবং অন্য কোন খারাপ কাজও করবো না।’
একজন ব্যক্তি যখন অর্থের প্রতি লোভী হয়, সে তখন প্রতারণা করতে শুরু করে, লোকজন থেকে সুবিধা নিতে শুরু করে এবং প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও অন্য লোকেদের শোষণ করে। রসুল (ﷺ) বলেছেন, আদম সন্তানকে যদি স্বর্ণের একটি উপত্যকা দেওয়া হয় তবে সে আরেকটি উপত্যকা চাইবে, এবং যদি তাকে দুটি স্বর্ণের উপত্যকা দেওয়া হয় তবে সে তিনটি চাইবে, যতক্ষণ না তার মুখ মাটি (কবরের) দিয়ে পুর্ন করা হয়। অর্থাৎ সে চাইতেই থাকবে যতক্ষণ না পর্যন্ত কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।
সুতরাং এটি লোভের একটি রূপ, কিন্তু ‘আব্দুর-রহমান ইবনে আউফ (রা:) এখানে আধ্যাত্মিক দিক থেকে দরিদ্র লোকের কথা বলছেন, যে কিনা এই দারিদ্র্যের কারণে অন্য মানুষকে শোষণ করতে শুরু করে। অবশ্যই, আমরা সত্যিকারের দারিদ্রের কথা বলছি না, সেই সমস্ত লোকদের কথা বলছি যাদের প্রচুর থাকা সত্ত্বেও মনে করে তারা দরিদ্র। কাজেই তারা প্রতিনিয়ত আরো বেশি চায়, এবং এই চাওয়া তাদেরকে অনৈতিক এবং ভুল কাজগুলোর দিকে ধাবিত করে। আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রা:) এখানে সেই শূন্যতার কথা বলছেন, যা মানুষকে পাপের দিকে পরিচালিত করে। মানুষ মূলত পাপ করে এক ধরনের শূন্যতা বোধ থেকে, যা সঠিক ভাবে পূরণ হয় না।
প্রায়শই এই একই আবেগ, যা অর্থনৈতিক শোষণের সূত্রপাত করে, একজন ব্যক্তিকে এমন কিছুর দিকে ধাবিত করে যা শালীনতার সীমাকে অতিক্রম করে। কাজেই অর্থনৈতিক এবং মানসিক লোভ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই দু’আটি আমাদের শেখা উচিত এবং নিয়মিত করা উচিত। এই দু’আটিতে এমন কিছু রয়েছে যা আমাদেরকে অনেক কিছু থেকে রক্ষা করবে ইনশাআল্লাহ – সীমা লঙ্ঘন করা থেকে, নিজের কামনা বাসনাকে চরিতার্থ করা থেকে, আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালা আমাদের জন্য যা নির্ধারিত করেছেন তার চেয়ে বেশি চাওয়া থেকে, এবং তাঁর (আল্লাহর) অসন্তোষ থেকে। আল্লাহুম্মা আমীন!
আত্মার লোভ!
পুণ্যবানদের প্রার্থনা
পর্ব: ৯
মূল: ড. ওমর সুলাইমান