Writing

আসমাউল হুসনা – আল-ওয়াহহাব

আল্লাহ পবিত্র কুরআনে নিজেকে তিনবার আল-ওয়াহহাব (উপহার দাতা, সর্বাপেক্ষা উদার দানকারী) নামে উল্লেখ করেছেন। তিনিই সর্বদাতা যিনি সমগ্র সৃষ্টিকে উপহার, অনুগ্রহ এবং আশীর্বাদ দান করেন। আল-ওয়াহহাব ক্রমাগত উপহার দান কারেন উদারভাবে এবং বিনিময়ে কিছুই আশা করেন না।

ওয়াহহাব শব্দটির মূল و-ه-ب থেকে এসেছে, যা তিনটি প্রধান অর্থ নির্দেশ করে। প্রথম অর্থ হল কোন প্রতিদানের আশা না করে উপহার হিসাবে দান করা, এবং দ্বিতীয় অর্থটি হল অনুদান বা প্রদান করা। এর তৃতীয় প্রধান অর্থ হল কিছু ঘটানো।
এই মূলটি কুরআনে ২৫ বার দুটি রূপে এসেছে। এই রুপ দুটির উদাহরণ হল: ْهَب (হাব) – অনুদান এবং يَهَبُ (ইয়াহাবু) তিনি অনুদান করেন”।

ভাষাগত এবং গঠনগত দিক থেকে ওয়াহহাব দানের তীব্রতাকে ইঙ্গিত করে এবং এটি দাতা الوهاب এর (ওয়াহ্হাব) তীব্র রূপ। هبه (হিবা) শব্দের অর্থ উপহার। আল-ওয়াহহাব সমস্ত উপহারের উৎস, যিনি সবচেয়ে বেশি প্রজ্ঞার সাথে অনুগ্রহ প্রদান করেন। তাঁর উপহারগুলি আপনার আপনার জীবনে আসে সুন্দর অভিজ্ঞতার রূপে, অভূতপূর্ব দৃশ্যবলী অবলোকনের মাধ্যমে, এবং বস্তুগত আশীর্বাদ হিসাবে।

পবিত্র কুরআনে আল ওয়াহহাব নিজেই বলেছেন-

أَمْ عِندَهُمْ خَزَآئِنُ رَحْمَةِ رَبِّكَ ٱلْعَزِيزِ ٱلْوَهَّابِ
তাদের কাছে কি তোমার রবের রহমতের ভান্ডার রয়েছে, যিনি পরাক্রমশালী অসীম দাতা?
[সূরা সাদ-৩৮: আয়াত-৯]

তিনি (সুলায়মান) বললেল, হে আমার পালনকর্তা, আমাকে মাফ করুন এবং আমাকে এমন সাম্রাজ্য দান করুন যা আমার পরে আর কারো জন্য প্রযোজ্য হবে না। নিশ্চয় আপনি বড়ই দানশীল।
[সূরা সাদ-৩৮: আয়াত-৩৫]

আপনি কিভাবে একটি উপহার চিনবেন?
রিজক এমন কিছু যা আপনার জন্য লিখিত, তবে আপনাকে এর জন্য কাজ করতে হবে; এটি আপনার প্রচেষ্টার উপর আংশিকভাবে নির্ভর করে। একটি উপহার (هبه) আপনার প্রচেষ্টার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত কিছু নয়। আপনি হয়তো কাউকে স্মরণ করছেন, এমন সময় সে হঠাৎ ফোন করে আপনার খোঁজ নিল, অথবা সঠিক সময়ে সঠিক জিনিসটি আপনি পেয়ে গেলেন- এটাই হল উপহার। কখনো আপনি আপনার প্রিয় কাউকে উপহার দেন, আবার কখনো কাউকে আপনার কাছে টানতে উপহার দেন। আল-ওয়াহহাব আপনাকে উপহার দিলে এর অর্থ কি হতে পারে? এর অর্থ হতে পারে যে তিনি আপনাকে একটি উপহার দিয়েছেন যাতে আপনি তাঁর কাছাকাছি আসতে পারেন, যদিও আপনি বিপথগামী ছিলেন।

কি ভাবে আপনি আল্লাহর এই গুণবাচক বৈশিষ্ট্যটি নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারেন?
জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল-ওয়াহহাব অর্থাৎ সর্বদাতাকে স্মরণ করুন।

যখন কেউ আপনাকে উপহার দেয়, আপনি তাকে ধন্যবাদ জানান। তাহলে সর্বাপেক্ষা উদার উপহার প্রদানকারীর সম্পর্কে আপনার মনোভাব কেমন হওয়া উচিত?
একজন বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসীর মধ্যে পার্থক্য হলো, পরেরজন আল্লাহর আজ্জা ওয়াজলের উপহার নিয়ে বেঁচে থাকে কিন্তু তাঁকে স্মরণ করে না, আর একজন সত্যিকারের বিশ্বাসী উপহার গ্রহণের মাধ্যমে প্রকৃত দাতাকে চিনে নেয়। আপনার সমস্ত প্রাপ্তির জন্য সর্বদা আপনার শ্রষ্ঠার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। আপনি যদি এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড নিয়ে চিন্তা করেন তবে আপনি আল্লাহকে জানতে পারবেন; আপনি যদি নিজের জীবনে তাঁর উপহারগুলি উপলব্ধি করেন তবে তাঁর প্রতি ভালবাসায় আপনার হৃদয় বিগলিত হবে।

আসমাউল হুসনা - আল-ওয়াহহাব
আসমাউল হুসনা – আল-ওয়াহহাব – Islami Lecture

একজন সত্যিকারের দাতা হয়ে উঠুন। আল-গাজালি বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি কোন প্রতিদানের উদ্দেশ্যে দান করে – হয়তো প্রশংসা পাওয়ার জন্য, কারো স্নেহধন্য হওয়ার জন্য অথবা দোষমুক্তির জন্য, বা নিজের নাম উল্লেখিত হওয়ার জন্য- সে দাতা বা উদার নয়, বরং সে যা করছে এক প্রকার লেনদেন . . . কিন্তু যিনি নিজের সমস্ত কিছু, এমনকি নিজের জীবনকেও একমাত্র আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করেন- এমন ব্যক্তিই দাতা ও উদার বলে অভিহিত হওয়ার যোগ্য।’ ইবাদাত করার জন্য উপায় তৈরি করুন। কিভাবে? কোন কিছুর প্রত্যাশা না করে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উপহার বা অনুগ্রহ প্রদান করুন।

আল-ওয়াহাবের উপহারগুলোকে সঠিকভাবে ব্যবহার করুন। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন আপনার জীবনের দেওয়া তাঁর উপহার সঠিকভাবে ব্যবহার করার সময়। একটি উদাহরণ মোবাইল ফোন; আল-ওয়াহহাব আপনাকে এই প্রযুক্তি দিয়েছেন, তাই এটি জ্ঞান বিতরণ ও অর্জনের কাজে ব্যবহার করুন, সময় নষ্ট করার জন্য নয়। যদি তিনি আপনাকে বন্ধুদের সাথে একটি সুন্দর বিকেল দেন, তবে এটিকে গীবত করার জন্য বা অনৈতিক আচরণের জায়গায় সময় কাটানোর জন্য ব্যবহার করবেন না।

সাহাবীদের ভালবাসা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। এক যুদ্ধে জাফরের (রা:) ডান হাত কর্তিত হয়েছিল, তাই তিনি তার বাম হাতে ইসলামের পতাকা ধরেছিলেন। আরেকটি আঘাতে তাঁর বাম হাত কেটে যায়, তাই তিনি মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁর উপরের বাহু দিয়ে পতাকাটি ধরে রেখেছিলেন। ভেবে দেখুন তো, কার প্রতি ভালোবাসার তারণায় তিনি নিজের জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করেছিলেন? যারা আল-ওয়াহহাবের প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকে এমন আত্মত্যাগ করেছে এমনকি নিজের জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করেছে, তাদের সম্পর্কে পড়ুন এবং শিখুন।

আল-ওয়াহহাবের কাছে চান। আশ্চর্যের বিষয় হলো এই اسم (নাম) ব্যবহার করে, একাধিক কুরআনের দু’য়া রয়েছে; আপনি দেখবেন অনেক নবীরা তাদের প্রতি শান্তি, রহমত, বংশধরের জন্য এবং আরো অনেক কিছুর জন্য আল-ওয়াহহাবের কাছে দু’য়া করেছেন, এবং দু’য়া গুলো ‘ইন্নাকা আন্তা আল-ওয়াহহাব’ দিয়ে শেষ হয়েছে। এই আয়াতগুলি সন্ধান করুন, এগুলি মুখস্থ করুন এবং আপনার দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করুন।

নিজের প্রশংসা করবেন না।মাঝে মাঝে আমরা বলি, বিয়ে করেছি, পরিশ্রম করেছি, সুন্দর বাড়ি বানিয়েছি। অথবা আমরা বলি, আমি আমার সন্তানকে ভালো লালন-পালন করেছি, সেজন্যই সে এত সদালাপী—আমিই আমার ছেলেকে এমন বানিয়েছি! ভুলে যাবেন না যে আল-ওয়াহাবই আপনাকে এই অনুগ্রহ প্রদান করেছে। আপনার সন্তানকে আল-ওয়াহহাবের উপহার হিসাবে আপনাকে দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল ওয়াহহাব নিজেই বলেছেন –

وَوَهَبْنَا لَهُۥٓ إِسْحَٰقَ وَيَعْقُوبَ كُلًّا هَدَيْنَا وَنُوحًا هَدَيْنَا مِن قَبْلُ وَمِن ذُرِّيَّتِهِۦ دَاوُۥدَ وَسُلَيْمَٰنَ وَأَيُّوبَ وَيُوسُفَ وَمُوسَىٰ وَهَٰرُونَ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِى ٱلْمُحْسِنِينَ
এবং আমরা তাঁকে (ইব্রাহীম) ইসহাক ও ইয়াকুব দান করেছি, যাদের প্রত্যেককে আমি পথপ্রদর্শন করেছি। এবং তার আগে, আমি নূহকে পথ দেখিয়েছিলাম এবং তাঁর বংশধরদের মধ্যে দাউদ, সুলায়মান, আইয়ুব, ইউসুফ, মূসা ও হারুনকে। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের প্রতিদান দিয়ে থাকি।
[সুরা আল আন’আম-৬: আয়াত-৮৪]

আল-ওয়াহহাব আপনাকে কি কি দিয়েছেন তা নিয়ে একটু চিন্তা করুন। প্রথমত, তিনি আপনাকে অস্তিত্ব দিয়েছেন। এরপর আল-ওয়াহহাব প্রদত্ত সর্বশ্রেষ্ঠ উপহারের কথা চিন্তা করুন: পথনির্দেশনা। পানির কথা চিন্তা করুন, যা গন্ধহীন এবং বর্ণহীন। কল্পনা করুন পানি যদি নোংরা হত, আপনি কিভাবে নিজেকে ধুয়ে পরিষ্কার করতেন? চিন্তা করুন খাবারের সুন্দর গন্ধের কথা। এগুলো সবই আল ওয়াহহাবের দান – আল্লাহ প্রদত্ত এই উপহার গুলো নিয়ে ভাবুন।

অন্যদের উপহার দিন। রাসুল (ﷺ) বলেছেন, ‘উপহার দাও, কেননা এতে তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে’ [মুসলিম]। কোন মানুষই বিনিময়ের প্রত্যাশা না করে কাউকে কিছু দেয় না, আর কিছু না হলেও আল্লাহ আজ্জা ওয়াজালের পুরস্কারের প্রত্যাশা সে করে। একমাত্র যিনি কোন বিনিময়ের প্রত্যাশা না করে উদারভাবে দান করেন তিনি হলেন আল-ওয়াহহাব। প্রথমে আল্লাহ আজ্জা ওয়াজালকে ধন্যবাদ জানান যখন মানুষ আপনাকে সাহায্য করে বা উপহার প্রদান করে কারণ আল্লাহই তাকে অনুপ্রাণিত করেছেন আপনাকে সাহায্য করার জন্য। তারপরে তাদের কোন উপকার করে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন, অথবা যদি না পারেন, জাযাকাল্লাহু খায়রান বা বারাকআল্লাহু ফীক বলুন।

হে আল্লাহ, আল-ওয়াহহাব, আমরা জানি আপনিই সব উপহারের দাতা। আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন যারা আপনার উপহারের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং আপনার সন্তুষ্টির কাজেই তা ব্যবহার করে। আমাদের তৌফিক দিন যেন আমরা আপনার উপহার গুলো নিয়ে চিন্তা করতে পারি, এবং অন্যদের উপহার প্রদানের জন্য আমাদের অনুপ্রাণিত করুন। আপনার রহমত থেকে আমাদের দান করুন এবং আপনার রহমতের ছায়ায় আচ্ছাদিত করুন আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎকে। নিঃসন্দেহে, আপনি সর্বোত্তম উপহার দাতা, আল্লাহুম্মা আমীন!

আল-ওয়াহহাব

Source: understandquran

লিখেছেন

Picture of ফাহমিনা হাসানাত

ফাহমিনা হাসানাত

কিছুটা লেখালেখি করি, ইসলামিক লাইনে কিছুটা পড়াশোনা করি। তাজউইদ, গ্রামার এবং কুরআন মেমোরাইজেশন এর ক্লাস করছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিজে শিখছি, অন্যকেও শিখাচ্ছি। লেখালেখিটাও ঠিক এরকম। নিজে জানার জন্য মনের আনন্দে লিখি, শেয়ার করি।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

কিছুটা লেখালেখি করি, ইসলামিক লাইনে কিছুটা পড়াশোনা করি। তাজউইদ, গ্রামার এবং কুরআন মেমোরাইজেশন এর ক্লাস করছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিজে শিখছি, অন্যকেও শিখাচ্ছি। লেখালেখিটাও ঠিক এরকম। নিজে জানার জন্য মনের আনন্দে লিখি, শেয়ার করি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture