আল্লাহ পবিত্র কুরআনে একটি উপলক্ষে নিজেকে আল-ক্বাদির – শক্তিমান – বলেছেন। আল-ক্বাদির সম্পূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী। তিনিই আদেশ করেন। তিনি বলেন হও! এবং তা হয়ে যায়। আল-ক্বাদিরের কোন কিছু করার জন্য কোন উপায়ের দরকার নেই!
ক্বাদির এসেছে ق-د-ر এর মূল থেকে, যা চারটি প্রধান অর্থ নির্দেশ করে। প্রথম অর্থ কোন কিছু করার ক্ষমতা থাকা বা সক্ষম হওয়া। দ্বিতীয় অর্থ হল পরিমাপ করা, কিছু বিতরণ করা বা প্রকাশ করা। তৃতীয়টি হল আদেশ করা এবং চতুর্থ অর্থ হল প্রাধান্য দেওয়া।
এই মূলটি কুরআনে ১৩২ বার ১১টি উদ্ভূত রূপে উপস্থিত হয়েছে। এই রূপগুলির উদাহরণ হল يَقْدِرُ – ইয়াকদিরু (“যাকে ইচ্ছা পরিমিত দান করেন”), قَدَّرۡنَا – কদ্দারনা (“আমরা আদেশ/নির্ধারণ করেছি”), الْقَدْرِ – আল-কদর (“ক্ষমতার”) এবং قَادِرٌ – ক্বাদিরুন (“সক্ষম”)।
আল্লাহ ‘আজ্জা ওয়াজাল কুরআনে ৪৫ বার নিজেকে ক্বাদীর – এই বিশেষ্য নামে উল্লেখ করেছেন, যার মধ্যে একটি হচ্ছে ٱلْقَادِرُ – আল-কাদিরু – শক্তিশালী।
ভাষাগতভাবে قدير , قادر এবং مقتدر – সবই ق-د-ر এর মূল থেকে উদ্ভূত, যা সবই আল্লাহ ‘আজ্জা ওয়াজালের নিরঙ্কুশ ক্ষমতার প্রতি ইঙ্গিত করে। তিনি যে কোন কিছু করতে সক্ষম, তিনি তাঁর সৃষ্টির উপর নিখুঁত ক্ষমতা রাখেন, তিনি সবকিছুকে পরিপূর্ণতা দিয়ে পরিমাপ করেন। এই মহাবিশ্বে যা ছিল, আছে এবং থাকবে তার সবই তিনি নির্ধারণ করেন। তাঁর অসীম জ্ঞানের সাথে তাঁর অসীম ক্ষমতা সংযুক্ত হওয়ার কারণে তিনি আল-কাদির – শক্তিমান এবং আল-আলিম – সর্বজ্ঞ।
আল-ক্বাদির নিজেই বলেছেন –
ٱللَّهُ ٱلَّذِى خَلَقَكُم مِّن ضَعۡفٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنۢ بَعۡدِ ضَعۡفٍ قُوَّةً ثُمَّ جَعَلَ مِنۢ بَعۡدِ قُوَّةٍ ضَعۡفًا وَشَيۡبَةًۚ يَخۡلُقُ مَا يَشَآءُۖ وَهُوَ ٱلۡعَلِيمُ ٱلۡقَدِيرُ
আল্লাহ, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন দুর্বল বস্তু থেকে এবং দুর্বলতার পর তিনি শক্তি দান করেন। আর শক্তির পর তিনি আবার দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং তিনিই সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।[৩০:৫৪]
تَبَٰرَكَ ٱلَّذِى بِيَدِهِ ٱلۡمُلۡكُ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَىۡءٍ قَدِيرٌ
বরকতময় তিনি যার হাতে সর্বময় কর্তৃত্ব। আর তিনি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান।[৬৭:১]
إِن يَشَأۡ يُذۡهِبۡكُمۡ أَيُّهَا ٱلنَّاسُ وَيَأۡتِ بِئَاخَرِينَۚ وَكَانَ ٱللَّهُ عَلَىٰ ذَٰلِكَ قَدِيرًا
হে মানুষ, যদি আল্লাহ চান তোমাদেরকে সরিয়ে দেবেন এবং অপরকে আনবেন। আর আল্লাহ এর উপর সক্ষম।[৪:১৩৩]
শক্তি এবং করুণা:
আল-ক্বাদিরের একটি পুরো জাতিকে অন্য একটি জাতির দ্বারা প্রতিস্থাপনের ক্ষমতা রয়েছে, যেভাবে তিনি চান। তাঁর শক্তিতে তিনি পৃথিবীর বড় একটি অংশকে নিষ্প্রাণ করে দিতে পারেন, এবং একই সাথে যাকে ইচ্ছা প্রচুর পরিমাণে সম্পত্তি মঞ্জুর করতে পারেন, বা আটকে রাখতে পারেন।
তাঁর শাস্তির ক্ষমতা যেমন অতুলনীয়, তেমনি তাঁর খাঁটি বান্দাদের প্রতি করুণাও অপরিসীম। তাদের ধৈর্য, বিশ্বাসের দৃঢ়তা এবং তাঁর প্রতি আস্থার প্রতিদান হিসাবে, আল-ক্বাদির তাঁর বান্দাদের কঠিন অবস্থা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য তাঁর শক্তি ব্যবহার করেন।
এমন অনেক সুন্দর উদাহরণ রয়েছে যেমন ইব্রাহিমকে (আ:) আগুন থেকে বাঁচাতে, ইউনুসকে (আ:) মাছের পেট থেকে বের করতে, ইউসুফ (আ:) কূপ থেকে রক্ষা করতে – এরকম অসংখ্য মুহূর্তে তিনি তার বিশ্বাসী বান্দাদের সাহায্য করেন, উপশম করেন, রক্ষা করেন এবং স্বস্তি দান করেন।
আল্লাহর এই নামটিকে নিজের জীবনে কিভাবে প্রয়োগ করবেন?
জেনে রাখুন সবকিছুই পূর্বনির্ধারিত। আপনি কতবার এই ভেবে মন খারাপ করেছেন যে আপনি টাকা, সম্পত্তি বা চাকরি হারিয়েছেন?
কেউ কেউ আবার তাৎক্ষণিকভাবে প্রশ্ন করে, কেন আমার সাথেই এমন হয়?
আমি কি ভুল করছি?
জীবনের ভালো এবং খারাপ উভয় সময়েই এই শক্তিশালী হাদীসটি স্মরণ করুন, যা আল-ক্বাদিরের প্রতি আপনার তাওয়াক্কুল বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।
রাসুল (ﷺ) বলেছেন:
‘আর জেনে রাখো, যদি সকল উন্মতও তোমার কোন উপকারের উদ্দেশে ঐক্যবদ্ধ হয় তাহলে ততটুকু উপকারই করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তা’আলা তোমার জন্যে লিখে রেখেছেন। অপরদিকে যদি সকল ক্ষতিই করতে সক্ষম হবে, যতটুকু আল্লাহ্ তা’আলা তোমার তাকদিরে লিখে রেখেছেন।'[তিরমিজি]
আপনার হৃদয়কে হিংসা ও বিদ্বেষ থেকে দূরে রাখুন এবং এই বিশ্বাসে অটল থাকুন যে সমস্ত বিষয় আল-ক্বাদিরের আদেশ দ্বারাই সংগঠিত হয়!
সন্তুষ্ট থাকুন, এবং এক্ষেত্রে ধার্মিক পূর্বসূরীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করুন। আপনাকে উপলব্ধি করতে হবে যে আপনার জীবনে যা ঘটছে তা পূর্বনির্ধারিত, কাজেই চেষ্টা করুন জীবনের বিবিধ পরীক্ষায় তিক্ততা বোধ না করতে।
রিদা শুধুমাত্র সন্তুষ্ট হওয়ার জন্য প্রশংসনীয় অবস্থান নয়, আল্লাহর হুকুমের প্রতিও সন্তুষ্ট হওয়া। যখন কিছু আপনার আপনার মন মত না হয়, তখন আল-ক্বাদিরের প্রতি আপনার ভালবাসাকে কখনই হ্রাস পেতে দেবেন না! ‘সন্তুষ্টি হল আল্লাহর কাছে প্রবেশের সবচেয়ে বড় দরজা, এটি ইবাদতকারীর জন্য প্রশান্তি এবং পৃথিবীতে জান্নাতের উৎস। যে এতে প্রবেশ করবে না সে পরকালে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ [ইবনে তাইমিয়া]
ইস্তেখার নামাজ পড়ুন। যখনই কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয়, তা যত বড় বা ছোটই হোক না কেন, আল-ক্বাদিরের সাথে পরামর্শ করুন এবং তাঁর কাছে প্রার্থনা করুন আপনার দ্বীনের জন্য এই জীবনে এবং আখেরাতে কোনটি সর্বোত্তম তা নির্ধারণ করে দিতে।
আলহামদুলিল্লাহ বলুন। জীবনে ভালো কিছু ঘটলে আলহামদুলিল্লাহ বলা সহজ, কিন্তু যখন আমরা কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাই তখনও আমাদের আল-ক্বাদিরের প্রশংসা করা উচিত। পরের বার যখন আপনি কোন পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যান, তখন আপনার হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করে আলহামদুলিল্লাহ বলুন এবং অন্যদেরকে তা করতে অনুপ্রাণিত করুন! الحمد لله على كل حال – আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল’ – সব প্রশংসা আল্লাহর জন্যই, জীবনে যেকোনো পরিস্থিতিতে যে কোন অবস্থায় তিনি আপনার জন্য যাই নির্ধারণ করেন না কেন।
আল-ক্বাদিরের কাছে আপনার প্রয়োজন প্রকাশ করুন। স্বভাবতই আমরা যোগ্যদের ভালোবাসি। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যখন দুর্বল অবস্থায় থাকেন তখন আপনি এমন কারো সুরক্ষা চান যিনি শক্তিশালী। জেনে রাখুন আল ক্বাদির তাঁর শক্তি দ্বারা সবকিছু ঘটাতে পারেন, তাই তাঁর কাছেই প্রার্থনা করুন, সুরক্ষার জন্য তাঁর কাছেই আশ্রয় নিন, তাঁকেই আপনার হৃদয় নিরাময় করতে বলুন এবং জেনে রাখুন যে তাঁর ক্ষমতা অসীম।
একমাত্র আল-ক্বাদিরই আপনাকে প্রতিটি প্রতিকূলতা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্তি দিতে সক্ষম। রাসুল (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তিগফার পাঠ করে, আল্লাহ তাআলা তাকে সর্ব প্রকার বিপদাপদ হতে মুক্ত করবেন, এবং সব রকম দুশ্চিন্তা হতে রক্ষা করবেন এবং তার জন্য এমন স্থান হতে রিযিকের ব্যবস্থা করবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারেন না। [আবু দাউদ]। তাই আপনার ইস্তিগফার (ক্ষমা চাওয়া) বৃদ্ধি করুন এবং ক্রমাগত আস্তাগফিরুল্লাহ বলুন।
হে আল্লাহ, আল ক্বাদির আমরা জানি যে আপনার ক্ষমতা নিখুঁত এবং অসীম। আপনার হুকুমে ধৈর্য ধারণ করতে ও সন্তুষ্ট হতে আমাদের সাহায্য করুন। আমাদেরকে আপনার দিকে প্রত্যাবর্তন করতে এবং ছোট-বড় সব বিষয়ে আপনার সাথে পরামর্শ করতে সাহায্য করুন, এবং আমাদেরকে প্রচুর পরিমাণে ক্ষমা প্রার্থনা করতে সক্ষম করুন। আল্লাহুম্মা আমীন!
আর আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।
আল ক্বাদির