আসমাউল হুসনা – আল হামিদ
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে নিজেকে আল-হামিদ সর্বাধিক প্রশংসিত বলেছেন দশটি উপলক্ষে। সকল প্রশংসা এবং সম্মান তারই প্রাপ্য এবং তিনিই সকল প্রশংসা ও সম্মানের যোগ্য।
হামিদ এসেছে ح-م-د এর মূল থেকে, যা তিনটি প্রধান অর্থ নির্দেশ করে। প্রথম অর্থ হল গভীর ভক্তি এবং সমর্পণের অনুভূতি থেকে প্রশংসা করা। দ্বিতীয় অর্থ হল সম্মান করা বা ভাল কথা বলা এবং তৃতীয় অর্থ হল কারো ইচ্ছাকৃত কাজের জন্য প্রশংসা করা।
এই মূলটি কুরআনে ৬৩ বার পাঁচটি উদ্ভূত রূপে এসেছে। এই রূপগুলির উদাহরণ হল اَلۡحَمۡدُ – আল হামদু (সমস্ত প্রশংসা), الْحَامِدُونَ – আল-হামিদুনা (যারা প্রশংসা করে)।
ভাষাগতভাবে, হামদ শব্দটি মাহাব্বাহ (ভালোবাসা) এবং তা’দীম (সম্মান) এর উপর ভিত্তি করে এবং একজন প্রশংসিতের (মাহমুদ) প্রতি প্রশংসা এবং কৃতজ্ঞতাকে বোঝায়। আল্লাহ হলেন আল-হামিদ, তিনিই সর্বদা প্রশংসার যোগ্য, তাঁর প্রশংসা করা হোক বা না হোক।
আল-হামিদ নিজেই বলেছেন –
وَ هُدُوۡۤا اِلٰی الطَّیِّبِ مِنَ الۡقَوۡلِ ۚۖ وَ هُدُوۡۤا اِلَی صِرَاطِ الۡحَمِیۡدِ
তাদেরকে পবিত্র বাণীর দিকে পরিচালনা করা হয়েছিল এবং তাদেরকে মহা প্রশংসিত আল্লাহর পথ দেখানো হয়েছিল।[সূরা আল হাজ্জ: ২৪]
وَ یَرَی الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡعِلۡمَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡکَ مِنۡ رَّبِّکَ هُوَ الۡحَقَّ ۙ وَ یَهۡدِیۡۤ اِلٰی صِرَاطِ الۡعَزِیۡزِ الۡحَمِیۡدِ
আর যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তারা জানে যে, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তা সত্য এবং তা মহাপরাক্রমশালী ও প্রশংসিত আল্লাহর পথের দিকে হিদায়াত করে।
[সুরা ইয়াসীনঃ৬]
یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اَنۡتُمُ الۡفُقَرَآءُ اِلَی اللّٰهِ ۚ وَ اللّٰهُ هُوَ الۡغَنِیُّ الۡحَمِیۡدُ
হে মানুষ, তোমরা আল্লাহর প্রতি মুখাপেক্ষী আর আল্লাহ অমুখাপেক্ষী ও প্রশংসিত।
[সুরা ফাতির: ১৫]
মুমিনদের একটি সুন্দর প্রশংসা হল আলহামদুলিল্লাহ– সূরা আল ফাতিহায় প্রতিদিনের প্রার্থনায় আমরা বলি, ‘সমস্ত প্রশংসা ও শুকরিয়া আল্লাহর জন্য। আদম (আ:) প্রথম যে শব্দটি বলেছিলেন তা হল আলহামদুলিল্লাহ, এবং আলহামদুলিল্লাহ হবে জান্নাতবাসীদের শেষ আহ্বান:
.....وَ اٰخِرُ دَعۡوٰىهُمۡ اَنِ الۡحَمۡدُ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ
.....আর তাদের শেষ কথা হবে যে, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সকল সৃষ্টির রব’।
[সূরা ইউনুস: ১০]
হামদ মানে প্রশংসা, হামদ এর আগে আল যুক্ত করে প্রশংসাকে সুনির্দিষ্ট করা হয়, যা দ্বারা একচেটিয়া প্রশংসাকে বুঝানো হয়। আল-হামদ মানে সকল প্রকার প্রশংসা এবং সর্বাবস্থায় সকল প্রকার কৃতজ্ঞতা আল্লাহর ‘আজ্জা ওয়া জাল’ এর। আবু জাফর ইবনে জারীর বলেন, আলহামদুলিল্লাহর অর্থ হল: সমস্ত শুকরিয়া একমাত্র আল্লাহরই প্রাপ্য, তাঁর পরিবর্তে তাঁর সৃষ্টির জন্য নয়। [তাফসীরে ইবনে কাসীর]
তাই আলহামদুলিল্লাহকে সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ, নিখুঁত এবং সুন্দর প্রশংসা দ্বারা বর্ণনা করা যেতে পারে যা কেবলমাত্র আল্লাহর ‘আজ্জা ওয়া জাল’-এর জন্য প্রাপ্য!
আলহামদুলিল্লাহ শব্দটি পবিত্র কুরআনে ৩৮ বার এসেছে এবং এর দ্বারা ‘আজ্জা ওয়া জাল’ নিজেই নিজের প্রশংসা করেছেন। কুরআনের কিছু সুরা হামদ দিয়ে শুরু হয়েছে, যা ঘোষণা করে যে সমস্ত প্রশংসা এবং শুকরিয়া আল্লাহর আজ্জা ওয়া জালের। এটা নির্দেশ যে কোন কিছু শুরু করার সময় আমাদের তাঁর প্রশংসা দিয়ে শুরু করা উচিত (যেমন খুতবা দেওয়ার সময়, দু’য়া করার সময়) এবং একই সাথে আলহামদুলিল্লাহ বলার মাধ্যমে কিভাবে আল্লাহর প্রশংসা করতে হয় তাও আমাদের শিক্ষা দেয়।
আল্লাহর এই নামটিকে নিজের জীবনে কিভাবে প্রয়োগ করবেন?
আলহামদুলিল্লাহর অন্তর্নিহিত শক্তি এবং মাহাত্ম্যকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন। আপনার ইসলামিক জ্ঞান বৃদ্ধি করুন এবং ইবাদতের বিভিন্ন ফজিলত সম্পর্কে সচেতন হন, এবং তা অনুশীলন করতে অনুপ্রাণিত হন! রাসুল (ﷺ) বলেছেন: নিশ্চয়ই, আপনার রব আল-হামদ পছন্দ করেন [আন-নাসাঈ] তিনি আরো বলেছেন: সর্বোত্তম জিকির হল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এবং সর্বোত্তম দু’আ হল ‘আলহামদুলিল্লাহ’। [আত-তিরমিযী] এবং: আলহামদুলিল্লাহ শব্দটি মিজানের পাল্লা ভারী করে। [মুসলিম] আলহামদুলিল্লাহর আশীর্বাদকে উপলব্ধি করুন!
আপনার দৈনন্দিন জীবনে বেশি বেশি ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলার অভ্যাস করুন এবং তা উপলব্ধি করুন। আন্তরিকতার সাথে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ – এই প্রশংসা বাক্যটি বলুন আপনার প্রভুর প্রতি গভীর ভালবাসা, সম্মান, বিনয়, এবং কৃতজ্ঞতার সাথে। যখন আপনি আলহামদুলিল্লাহ বলেন তখন জান্নাতের কথা স্মরণ করুন এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন যেন তিনি আপনাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন:
دَعۡوٰىهُمۡ فِیۡهَا سُبۡحٰنَکَ اللّٰهُمَّ وَ تَحِیَّتُهُمۡ فِیۡهَا سَلٰمٌ ۚ وَ اٰخِرُ دَعۡوٰىهُمۡ اَنِ الۡحَمۡدُ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ
সেখানে তাদের কথা হবে, ‘হে আল্লাহ, তুমি পবিত্র মহান’ এবং তাদের অভিবাদন হবে, ‘সালাম’। আর তাদের শেষ কথা হবে যে, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সকল সৃষ্টির রব’।
[সূরা ইউনুস: ১০]
জীবনের যে কোন আশীর্বাদে বলুন আলহামদুলিল্লাহ। রাসুল (ﷺ) বলেছেন: “কোন ব্যক্তি আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুগ্রহ লাভ করেন না যতক্ষণ না সে বলে আলহামদুলিল্লাহ, এবং সে নিজে যা অর্জন করেছে তার থেকে আল্লাহ তাকে অনুগ্রহ করে যা দিয়েছেন তাই উত্তম।”
জেনে রাখুন যা কিছু হয় ভালোর জন্যই হয়। মুমিনদের জন্য সব পরিস্থিতিই কল্যাণকর। রাসুল (ﷺ) বলেছেন: ‘মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর। সকল কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মু’মিন ছাড়া অন্য কেউ এ বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না। তারা সুখ-শান্তি লাভ করলে শুকর-গুজার করে আর অস্বচ্ছলতা বা দুঃখ-মুসীবাতে আক্রান্ত হলে সবর করে, প্রত্যেকটাই তার জন্য কল্যাণকর।’ [মুসলিম:২৯৯৯] এই হাদীসটি গভীরভাবে চিন্তা করুন এবং বলুন: الحمد لله على كل حال – আলহামদুলিল্লাহ ‘আলা কুল্লি হাল– প্রতিটি ক্ষেত্রে বা পরিস্থিতিতে আলহামদুলিল্লাহ!
হে আল্লাহ, আল-হামিদ, আমরা জানি যে সমস্ত প্রশংসা এবং কৃতজ্ঞতা আপনারই। আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন যারা আপনার প্রশংসা করে, ঠিক যেমনটি করা উচিত। আমরা যেন আন্তরিতার সাথে আপনার প্রশংসা করতে পারি সেজন্য আমাদের সঠিক পথপ্রদর্শন করুন। আমরা যেন জান্নাতে আলহামদুলিল্লাহ বলতে পারি সে তৌফিক আমাদের দান করুন। আল্লাহুম্মা আমীন!
আর আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।