আসমাউল হুসনা – আল-বাদি

আল্লাহ পবিত্র কুরআনে দুইবার নিজেকে আল-বাদি’-অতুলনীয় প্রবর্তক- বলেছেন। তিনি সূচনা করেন এবং আশ্চর্যজনক ও মৌলিক উপায়ে সৃষ্টি করেন যার কোনো নজির নেই। তিনি সৃষ্টি করেন কোনো নকশা (মডেল) বা উদাহরণ ছাড়াই। আল-বাদি’ অতুলনীয়, অনন্য এবং একমাত্র তিনিই উদ্ভাবন এবং সৃষ্টি করেন নিখুঁত উপায়ে!

বাদি’ ب-د-ع এর মূল থেকে এসেছে, যা তিনটি প্রধান অর্থ নির্দেশ করে। প্রথম অর্থ হল উদ্ভাবন বা করা; দ্বিতীয় প্রধান অর্থ হল কিছু শুরু করা, পূর্বে বিদ্যমান কোন কিছুর সাথে কোন মিল ছাড়াই স্বতন্ত্রভাবে কাজ করা; এবং তৃতীয় অর্থ হল অতুলনীয়, সর্বোত্তম এবং আশ্চর্যজনক।

এই মূলটি কুরআনে চারবার তিনটি উদ্ভূত আকারে এসেছে। এই রূপগুলির উদাহরণ হল ٱبۡتَدَعُوهَا ইবতাদা’ঊহা (“তারা উদ্ভাবন করেছে”) এবং بِدۡعًا-বিদ’আন (“উদ্ভাবন”)।

ভাষাগতভাবে, বিদ’আত মানে একটি উদ্ভাবন বা নতুন কিছু, যা আগে কেউ করেনি বা বলেনি।

আল-বাদি’ বলতে একক এবং একমাত্র প্রবর্তককে বোঝায় যিনি বারবার নতুন কিছু করেন – যা অন্য কোন কিছুর মতো নয়। তিনি উদ্ভাবন করেন কোনও সরঞ্জামের ব্যবহার ছাড়াই এবং সময় বা স্থানের মধ্যে সীমাবদ্ধ না হয়েই।

আল-বাদি’ নিজেই বলেছেন –

بَدِیۡعُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ اَنّٰی یَکُوۡنُ لَهٗ وَلَدٌ وَّ لَمۡ تَکُنۡ لَّهٗ صَاحِبَۃٌ ؕ وَ خَلَقَ کُلَّ شَیۡءٍ ۚ وَ هُوَ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمٌ
তিনি আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা। কিভাবে তার সন্তান হবে অথচ তার কোন সঙ্গিনী নেই! আর তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি প্রতিটি জিনিসের ব্যাপারে সর্বজ্ঞ।1
بَدِيعُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ وَإِذَا قَضَىٰٓ أَمۡرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ
তিনি আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা। আর যখন তিনি কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেন, তখন কেবল বলেন ‘হও’ ফলে তা হয়ে যায়।2

বিদ‘আত: ধর্মে উদ্ভাবনের ধারণা

ইসলামি শিক্ষা অনুসারে বিদ‘আত হল ধর্মের যে কোনো উদ্ভাবিত উপায়, যার উদ্দেশ্য হল ইবাদত করা বা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। এর অর্থ এই যে, কোন কাজ করা, বলা বা কোনো কিছু থেকে দূরে থাকার কোনো প্রমাণ বা দলিল কুরআন ও সুন্নাতে নেই এবং রাসুল (ﷺ) ও সাহাবীদের সময়ে তা পরিচিত এবং প্রচলিত ছিল না। (এই অগ্রহণযোগ্য ধর্মীয় উদ্ভাবনের মধ্যে প্রযুক্তির মতো পার্থিব উদ্ভাবন অন্তর্ভুক্ত নয়।)

রাসুল (ﷺ) একটি খুতবার শুরুতে বলেন:
‘… নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম কথা আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম রীতি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রীতি। আর নিকৃষ্টতম কাজ (দ্বীনে) নব আবিষ্কৃত কর্মসমূহ এবং প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা….।’3
এই হাদীসটি থেকে আমরা বুঝতে পারি, ইসলামের নতুন কিছু উদ্ভাবন করা, এবং কেউ নতুন কিছু উদ্ভাবন করলে তা অনুসরণ করা হারাম

রাসুল (ﷺ) আরো বলেন,
‘…আর নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত হল ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম।’4 তিনি আরো ব্যাখ্যা করে বলেন, যখন কেউ ইসলামে নতুন কোন কিছু উদ্ভাবন করবে তখন তা তার কাছ থেকে প্রত্যাখ্যান করা হবে।

উপরে হাদিসটি থেকে আমরা বুঝতে পারি সঠিক ইসলামী জ্ঞান অর্জন করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বিশ্বাসীদের কাছ থেকে কোন উদ্ভাবন গ্রহণ করা হবে না এবং তা জাহান্নামের দিকে পরিচালিত করবে। বিদআতের উদাহরণ হল ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ বা ঈমানের ছয়টি স্তম্ভের যেকোনো একটিকে অস্বীকার করা, অনৈসলামিক অনুষ্ঠান উদযাপন করা এবং হারামকে হালাল হিসাবে, হালালকে হারাম হিসেবে ঘোষণা করা।

আল্লাহর এই নামটিকে নিজের জীবনে কিভাবে প্রয়োগ করবেন?

নিজ ধর্মে বিদআত থেকে দূরে থাকুন। বিশ্বস্ত উৎস থেকে কুরআন এবং সুন্নত অধ্যয়ন করুন যাতে আপনি ইসলামে আদেশ, উপদেশ এবং নিষেধ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। নবী ও তাঁর সাহাবীদের পথ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করুন কারণ এগুলো আপনার জীবনে কুরআনের জ্ঞান বাস্তবায়নের চাবিকাঠি।

রাসুল (ﷺ) বলেছেন,
‘যদি কেউ দ্বীনের মধ্যে কোন বিদআত প্রবর্তন করে তবে সে এর জন্য দায়ী থাকবে। যদি কেউ কোন বিদআত প্রবর্তন করে বা এমন কোন ব্যক্তিকে আশ্রয় দেয় যে (দ্বীনে) কোন বিদআত প্রবর্তন করে তাকে আল্লাহ, তার ফেরেশতা এবং সমস্ত মানুষের পক্ষ থেকে অভিশাপ দেওয়া হয়।5 নিজেকে বিদআত থেকে রক্ষা করার জন্য আল-বাদি’ এর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করুন।

রাসুলকে (ﷺ) অনুসরণ করুন, তিনি বলেছেন,
‘তোমরা আমাকে প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাক, যে পর্যন্ত না আমি তোমাদের কিছু না বলি। কেননা, তোমাদের আগে যারা ছিল, তারা তাদের নবীদেরকে বেশি বেশি প্রশ্ন করা ও নবীদের (নবীদের) সঙ্গে মতভেদ করার জন্যই ধ্বংস হয়েছে। তাই আমি যখন তোমাদেরকে কোন ব্যাপারে নিষেধ করি, তখন তার থেকে বেঁচে থাক। আর যদি কোন বিষয়ে আদেশ করি তাহলে সাধ্য অনুসারে মেনে চল।’6

এবং: . . . আমরা ওমর (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম এবং তিনি বললেনঃ আমাদের সামর্থ্যের বাইরে কোন কঠিন কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে (অর্থাৎ ধর্মীয় সীমা অতিক্রম করা, যেমন, ওযু করার সময় চোখের ভিতর পরিষ্কার করা)।[আল-বুখারী] কখনো নিজের সুবিধামতো কুরআন এবং সুন্নতের অর্থ পরিবর্তন করবেন না। সৎ হন এবং আপনার পছন্দের ব্যাপারে দায়িত্বশীল হন। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে সতর্ক থাকুন; যদি কুরআন ও সুন্নাতের পরিপন্থী না হয় তবে ক্ষতি নেই, কিন্তু যদি সেগুলো ইসলামের বিরোধিতা করে তবে তাদের এড়িয়ে চলুন।

সুন্নতকে পুনরুজ্জীবিত করুন। রাসুল (ﷺ) বলেছেন,
‘কেউ ভালো কাজের প্রচলন করলে এবং তার অনুসরণ করা হলে সে তার নিজের সাওয়াবও পাবে এবং তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে, তবে তাদের সাওয়াব থেকে একটুও কমানো হবে না। আবার কেউ মন্দ কাজের প্রচলন করলে এবং তার অনুসরণ করা হলে তার উপর নিজের গুনাহ্ বর্তাবে উপরন্তু তার অনুসারীদের সম-পরিমাণ গুনাহর অংশীদারীও হবে, কিন্তু তাতে অনুসরণকারীদের গুনাহর পরিমাণ একটুও কমানো হবে না।’7 একমাত্র উত্তম আমল হলো পুনরুজ্জীবিত সুন্নত এবং উদ্ভাবিত কোন আমল নয়!

ইসলামকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করুন। কারো কাছে ইসলামকে উপস্থাপন করার সময় কুরআন ও সুন্নত পেশ করুন, আপনার মতামত নয়।

আল-বাদি’র কাছে প্রার্থনা করুন।

بَدِيعُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ وَإِذَا قَضَىٰٓ أَمۡرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ
তিনি আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা। আর যখন তিনি কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেন, তখন কেবল বলেন ‘হও’ ফলে তা হয়ে যায়।8

জেনে রাখুন যে কোনো সমস্যাই খুব বেশি বড় নয়, কোনো পরিস্থিতিই খুব বেশি চ্যালেঞ্জিং নয় যতক্ষণ না আপনি আল-বাদি’র কাছে আপনার প্রতিটি প্রয়োজনের সমর্থনের জন্য প্রার্থনা করেন।

হে আল্লাহ, আল-বাদি’, আমরা জানি যে আপনিই অতুলনীয় প্রবর্তক। আমাদেরকে আপনার রজ্জু অনুসরণকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন, আপনার কিতাব ও সুন্নত সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে সহায়তা করুন এবং বিদ‘আত থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন। আপনার নবীর পথকে সঠিকভাবে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য আমাদেরকে পথনিদর্শনা দিন। আমাদেরকে অন্যদের কাছে ইসলামের বার্তা পৌঁছে দিতে সাহায্য করুন, যেভাবে আপনি তা অবতীর্ণ করেছেন। এবং আপনার সৃষ্টি ও উদ্ভবের শক্তিতে আমাদেরকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস দিয়ে সজ্জিত করুন,
আল্লাহুম্মা আমিন!

আসমাউল হুসনা

লিখেছেন

ফাহমিনা হাসানাত

কিছুটা লেখালেখি করি, ইসলামিক লাইনে কিছুটা পড়াশোনা করি। তাজউইদ, গ্রামার এবং কুরআন মেমোরাইজেশন এর ক্লাস করছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিজে শিখছি, অন্যকেও শিখাচ্ছি। লেখালেখিটাও ঠিক এরকম। নিজে জানার জন্য মনের আনন্দে লিখি, শেয়ার করি।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

কিছুটা লেখালেখি করি, ইসলামিক লাইনে কিছুটা পড়াশোনা করি। তাজউইদ, গ্রামার এবং কুরআন মেমোরাইজেশন এর ক্লাস করছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিজে শিখছি, অন্যকেও শিখাচ্ছি। লেখালেখিটাও ঠিক এরকম। নিজে জানার জন্য মনের আনন্দে লিখি, শেয়ার করি।

  1. সূরা আল-আন’আম- ৬: আয়াত-১০১ ↩︎
  2. সূরা আল-বাকারাহ -২: আয়াত-১১৭ ↩︎
  3. সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৩৫ ও সুনান আন-নাসায়ী, হাদীস নং ১৫৬০, হাদীসের শব্দ চয়ন নাসায়ী থেকে। ↩︎
  4. সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৩৫ ও সুনান আন-নাসায়ী, হাদীস নং ১৫৬০, হাদীসের শব্দ চয়ন নাসায়ী থেকে। ↩︎
  5. আবু দাউদ ↩︎
  6. মুসলিম ১৫/৭৩, হাঃ ১৩৩৭, আহমাদ ৯৭৮৭] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৯০ ↩︎
  7. তিরমিজি- ২৬৭৫, মুসলিম ↩︎
  8. সূরা আল-বাকারা-৩: আয়াত-১১৭ ↩︎
Exit mobile version