আসমাউল হুসনা – আল-আউয়াল

আল্লাহ পবিত্র কুরআনে নিজেকে আল-আউয়াল – প্রথম – বলেছেন একবার। আল-আউয়াল হলেন তিনি, যার শুরু বা শেষ নেই। তাঁর পূর্বে কেউ নেই; তিনি স্বয়ং-অস্তিত্বশীল, সবই তাঁর কাছ থেকে এসেছে, এবং তিনিই সমস্ত কিছুর কারণ।

আউয়াল শব্দটি এসেছে ء-و-ل এর মূল থেকে, যা তিনটি প্রধান অর্থ নির্দেশ করে। প্রথম অর্থ হল প্রথম হওয়া বা আগে হওয়া, দ্বিতীয় অর্থ হল ফিরে আসা, এবং তৃতীয় অর্থ হল অগ্রগণ্য হওয়া।

এই মূলটি কুরআনে ১৭০ বার চারটি উদ্ভূত রূপে এসেছে। এই রূপগুলির উদাহরণ হল ٱلۡأُولَىٰ – আল-উলা (“পূর্ববর্তী”), يَٰٓأُوْلِى -ইয়া উলি (“লোকেরা”), آل – আলি (“পরিবার, মানুষ”), وَالْأَوَّلِينَ – আল-আওয়ালিনা (“পূর্বপুরুষ”)।

ভাষাগতভাবে আল-আউয়াল বলতে এমন কাউকে বোঝায় যিনি অন্যদের চেয়ে অগ্রগামী। আল্লাহ আল-আউয়াল এর ক্ষেত্রে প্রথমত্বের অর্থ হল: তিনি, যার অস্তিত্বের কোন সূচনা নেই, [আল-বায়হাকী] এবং তিনি সবকিছুর আগে বিদ্যমান ছিলেন [ইবনে জারীর আত-তাবারী]। আল-আউয়াল প্রথম হওয়ার যোগ্য যেহেতু তিনি সব সময় ছিলেন, যখন তার আগে বা তার সাথে কিছুই ছিল না! [আল-খাত্তাবি]

এই সব একই অর্থ বহন করে, যেমন রাসুল (ﷺ) বলেছেন:
‘হে আল্লাহ! আপনিই প্রথম, আপনার আগে কিছুই নেই…’ [মুসলিম]

আল-আউয়াল নিজেই বলেছেন –

هُوَ ٱلۡأَوَّلُ وَٱلۡأٓخِرُ وَٱلظَّٰهِرُ وَٱلۡبَاطِنُۖ وَهُوَ بِكُلِّ شَىۡءٍ عَلِيمٌ
তিনিই প্রথম ও শেষ এবং প্রকাশ্য ও গোপন; আর তিনি সকল বিষয়ে সম্যক অবগত।
[৫৭:৩]

সৃষ্টির প্রথম:
আল-আউয়াল বলেছেন –

وَهُوَ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ فِى سِتَّةِ أَيَّامٍ وَكَانَ عَرۡشُهُۥ عَلَى ٱلۡمَآءِ لِيَبۡلُوَكُمۡ أَيُّكُمۡ أَحۡسَنُ عَمَلًاۗ
আর তিনিই আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে, আর তাঁর আরশ ছিল পানির উপর, যাতে তিনি পরীক্ষা করেন, কে তোমাদের মধ্যে আমলে সর্বোত্তম।
[১১:৭]

কাতাদাহ বলেছেন, ‘আপনার রব, তিনি বরকতময় ও মহিমান্বিত, তিনি আপনাকে বলছেন যে কিভাবে আসমান ও জমিন সৃষ্টির আগে তাঁর সৃষ্টির শুরু হয়েছিল। [তাফসীর আত তাবারী, ১৫/২৪৬]

রাসুল (ﷺ) বলেছেন,
‘আল্লাহ ছিলেন, তিনি ছাড়া আর কিছু ছিল না এবং তাঁর আরশ ছিল পানির উপর। তিনি কিতাবে (আসমানে) সমস্ত কিছু লিখেছেন এবং তিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। [আল-বুখারী] সূরা হুদ এর ১১ নং আয়াত ও এই হাদিসটি থেকে জানা যায় যে আসমান ও জমিন সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহর আরশ পানির উপরে ছিল।

আল্লাহকে আপনার জীবনে ‘আউয়াল’ করে নিন। আমরা জানি আল্লাহ প্রথম, কিন্তু আপনি কি সত্যিই তাঁকে আপনার দৈনন্দিন জীবনে ‘আউয়াল’ করেছেন?
রাসুল (ﷺ) বলেছেন,
‘যে ব্যক্তির একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে পরকাল, আল্লাহ তা’আলা সেই ব্যক্তির অন্তরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন এবং তার যাবতীয় বিচ্ছিন্ন কাজ একত্রিত করে সুসংযত করে দিবেন, তখন তার নিকট দুনিয়াটা নগণ্য হয়ে দেখা দিবে। আর যে ব্যক্তির একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে দুনিয়া, আল্লাহ তা’আলা সেই ব্যক্তির গরীবি ও অভাব-অনটন দুচোখের সামনে লাগিয়ে রাখবেন এবং তার কাজগুলো এলোমেলো ও ছিন্নভিন্ন করে দিবেন। তার জন্য যা নির্দিষ্ট রয়েছে, দুনিয়াতে সে এর চাইতে বেশি পাবে না।
[আত-তিরমিযী]

আপনি কি সারাদিন শুধু এই নিয়ে চিন্তা করেন যে কোন পোশাকটি পড়বেন, কি খাবার খাবেন, কি কেনাকাটা করবেন, কোন বন্ধুর সাথে দেখা করবেন?
নাকি আপনার চিন্তার মধ্যে প্রাধান্য পায় নামাজ কিভাবে সময় মত পড়বেন, গীবত থেকে নিজেকে কিভাবে বিরত রাখবেন, প্রতিদিন কতটুকু কুরআন পড়বেন?
তাঁর আদেশগুলি কিভাবে মেনে চলা যায় এবং তিনি যা নিষেধ করেছেন তা থেকে কিভাবে দূরে থাকা যায়, সেটাই আপনার প্রতিদিনের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হওয়া উচিত!

সাবিকূনের অন্তর্ভুক্ত হন। কালের পরিক্রমায় অর্থ সম্পদ বিনষ্ট হয়ে যায়, পদমর্যাদাও সব সময় এক থাকে না, মানুষ আসে এবং যায়, অবশিষ্ট থাকে কেবল ভালো কাজ। সাবিকূনদের, অর্থাৎ যারা ভাল কাজে অগ্রগামী, তাদের অন্তর্ভুক্ত হন।

ثُمَّ أَوۡرَثۡنَا ٱلۡكِتَٰبَ ٱلَّذِينَ ٱصۡطَفَيۡنَا مِنۡ عِبَادِنَاۖ فَمِنۡهُمۡ ظَالِمٌ لِّنَفۡسِهِۦ وَمِنۡهُم مُّقۡتَصِدٌ وَمِنۡهُمۡ سَابِقٌۢ بِٱلۡخَيۡرَٰتِ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَضۡلُ ٱلۡكَبِيرُ
অতঃপর আমি এ কিতাবটির উত্তরাধীকারী করেছি আমার বান্দাদের মধ্যে তাদেরকে, যাদেরকে আমি মনোনীত করেছি। তারপর তাদের কেউ কেউ নিজের প্রতি যুলমকারী এবং কেউ কেউ মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী। আবার তাদের কেউ কেউ আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে কল্যাণকর কাজে অগ্রগামী। এটাই হলো মহা অনুগ্রহ।
[৩৫:৩২]

আপনার নামাজকে অগ্রাধিকার দিন। রাসুল (ﷺ) বলেছেন,
‘কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে বিষয়টির হিসাব নেওয়া হবে তা হল নামায। [সুনানে আবু দাউদ, আন-নাসায়ী, আল হাকিম] এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করুন এবং আপনার জীবনের প্রাত্যহিক কাজকর্মকে নামাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে অনুপ্রাণিত করুন, নামাজকে প্রাত্যহিক কাজের সাথে মানানসই করতে নয়। কীভাবে সঠিকভাবে নামাজ পড়তে হয় তা শিখুন, সালাতে যা পড়েন তা বোঝার চেষ্টা করুন, সময়মত নামাজ আদায় করতে সচেষ্ট হন, সালাতকে যেন আপনার জীবনে অগ্রাধিকার দিতে পারেন সেজন্য আল-আউয়ালের সাহায্য প্রার্থনা করুন।

প্রথমে তাঁকে সন্তুষ্ট করুন, তিনিও আপনার জীবনটাকে সুন্দর করে দিবেন।
রাসুল (ﷺ) বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি মানুষকে নারাজ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি চায়, তার উপর আল্লাহ সন্তুষ্ট থাকেন, আর মানুষকেও তার প্রতি সন্তুষ্ট করে দেন। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহকে নারাজ করে মানুষের সন্তুষ্টি চায়, তার উপর আল্লাহও অসন্তুষ্ট হন এবং মানুষকেও তার প্রতি অসন্তুষ্ট করে দেন।’

আপনি কখনই একজন মানুষকে সব সময় খুশি করতে পারবেন না। আপনি যা কিছুই করেন না কেন, সর্বাগ্রে আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে মনোনিবেশ করুন এবং তিনি আপনাকে মানুষের দৃষ্টিতে একটি সুন্দর অবস্থান দেবেন ইনশাআল্লাহ!

আপনার পড়াশোনায় কুরআন পাঠকে অগ্রাধিকার দিন। ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, ‘কুরআন মুখস্থ করার বিষয়টিকে অন্য অনেক বিষয়ের উপর প্রাধান্য দিতে হবে। লোকেরা যা জ্ঞান বলে মনে করে, বাস্তবে তা সম্পূর্ণ অকেজো, বা খুব সামান্যই উপকারী। বিশেষ করে যারা দ্বীন, এর মূলনীতি এবং বিবরণ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে চায় তাদের শিক্ষার ক্ষেত্রে এটিকে প্রাধান্য দিতে হবে। যে ব্যক্তি দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করতে চায়, তার জন্য যা নির্দেশ করা হয়েছে তা হল সে কুরআন মুখস্থ করে শুরু করবে, কারণ এটি দ্বীনের জ্ঞানের বিভিন্ন শাখাগুলির ভিত্তি। [ফাতাওয়া আল-কুবরা ২/৫৪-৫৫] কুরআন বোঝা, তেলাওয়াত এবং কুরআনের উপর আমল করা আপনার সমস্ত অধ্যয়নের ভিত্তি এবং অগ্রাধিকার হওয়া উচিত, এমনকি তা দিনে দশ মিনিট হলেও!

হে আল্লাহ, আল-আউয়াল আমরা জানি যে আপনার শুরু বা শেষ নেই। আমাদের বিশ্বাস এবং কর্মে সর্বপ্রথম এবং সর্বাগ্রে আপনাকে এবং আপনার সন্তুষ্টিকে যেন প্রাধান্য দিতে পারি সেই জন্য আমাদের পথনিদর্শনা দান করুন। নামাজকে যেন আমাদের জীবনে অগ্রাধিকার দিতে পারি সেজন্য আমাদের সাহায্য করুন। আপনার কিতাবের প্রতি ভালোবাসা এবং নৈকট্য দিয়ে আমাদের সুসজ্জিত করুন, এবং আমাদের সাবিকুনদের (অগ্রগামী) অন্তর্ভুক্ত করুন। আল্লাহুম্মা আমীন!

আর আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।

আল-আউয়াল

আসমাউল হুসনা

লিখেছেন

ফাহমিনা হাসানাত

কিছুটা লেখালেখি করি, ইসলামিক লাইনে কিছুটা পড়াশোনা করি। তাজউইদ, গ্রামার এবং কুরআন মেমোরাইজেশন এর ক্লাস করছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিজে শিখছি, অন্যকেও শিখাচ্ছি। লেখালেখিটাও ঠিক এরকম। নিজে জানার জন্য মনের আনন্দে লিখি, শেয়ার করি।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

কিছুটা লেখালেখি করি, ইসলামিক লাইনে কিছুটা পড়াশোনা করি। তাজউইদ, গ্রামার এবং কুরআন মেমোরাইজেশন এর ক্লাস করছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিজে শিখছি, অন্যকেও শিখাচ্ছি। লেখালেখিটাও ঠিক এরকম। নিজে জানার জন্য মনের আনন্দে লিখি, শেয়ার করি।

Exit mobile version