আসহাবে কাহাফের গুহায় কিছুক্ষণ

গুহায় প্রবেশের মুহূর্তে যুবকদের বুকের কাঁপুনি, পর্বতসম আত্মবিশ্বাসের শক্তি ও তারুণ্যের বিপ্লবী উচ্ছ্বাস অনুভব করছিলাম। হাজার বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের চেতনার উচ্চমাত্রা এখনো কমে যায়নি। নব্বইয়ের দশকে আল্লামা তাকী উসমানীর ‘জাহাঁ দীদাহ’ ভ্রমণ-কাহিনী যখন পড়েছিলাম, তখন থেকে জর্দানের রাজধানী আম্মানে অবস্থিত এ গুহাটি দেখার প্রচন্ড শখ সৃষ্টি হয়েছিল।
ত্রিশ বছর পর সে আকাঙ্ক্ষা পূরণ হলো। গত সাত ফেব্রুয়ারি টিভি ওয়ানের চ্যারিটি পার্টনার ‘হিউম্যান রিলিফ ফাউন্ডেশন’ (HRF)-এর মানবিক কার্যক্রম পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করার জন্য তিনদিনের সফরে জর্দান গেলাম। গাজার নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর জন্য আম্মান থেকে শুকনো খাবার ও শিশুখাদ্য সরবরাহ করার জন্য হাজারো বক্স লরিতে লোড করি। পাশাপাশি আম্মানে অবস্থিত ফিলিস্তিনি শরনার্থীদের মাঝে খাবার বিতরণ করি। ৮২ হাজার সিরিয়ান রিফিউজির জন্য স্থাপিত ক্যাম্প পরিদর্শনেরও সুযোগ হয়।
কর্মসূচির বাইরে আমি আয়োজকদের অনুরোধ করি- যেন আসহাবে কাহাফের গুহাটি দেখার ব্যবস্থা করা হয়। আলহামদুলিল্লাহ ১০ ফেব্রুয়ারি জোহরের সময় সেখানে পৌঁছে গেলাম আমরা। জোহরের নামাজের জন্য গুহার প্রবেশ বন্ধ ছিল। আমরা পাশে ২ হাজার সালে নির্মিত সুন্দর ও আধুনিক সুবিধা-সমৃদ্ধ মসজিদে সালাত আদায় করি। সালাতের পর আমরা ‘কাহাফ’ দেখার জন্য প্রবেশ করি।
গুহার যুবকদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা সূরা কাহাফের ৯ থেকে ২২ নং আয়াতে যে বিবরণ দিয়েছেন, তা নতুন করে তেলাওয়াত করে নিলাম। যেন গুহার অবস্থানের সাথে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়— তা মিলিয়ে দেখা যায়। (যারা ঘটনা নতুন করে জানতে চান, তাদের জন্য লিংক দেওয়া হলো।)
ছোট পরিসরের গুহাতে আমরা ঘুরে ঘুরে দেখলাম আর সেখানে নিয়োজিত গাইডের বিবরণও শুনলাম। কাহাফের সদস্যরা সুদীর্ধ ৩০০ বছর ঘুমানোর সময় যে স্থান দিয়ে প্রতিদিন দুবার প্রবেশ করত— অস্ত ও উদয়ের মুহূর্তে; সে ‘ফজওয়া’ বা শূন্যস্থানটি খুঁজে নিলাম। তাদের কুকুরের স্থান— যা ‘ওয়াসিদ’ প্রবেশপথ নামে কুরআনে হয়েছে তাও পেলাম।
৩০০ বছরের পর তারা ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর তাদের একজন বাজারে গেলে যে প্রচন্ড বিস্ময়ের ঢেউ বাজারব্যাপী ছড়িয়ে গেল— তাও অনুভব করলাম। তখন বিশ্বাসীদের ও একত্ববাদের প্রভাব ছিল, তারা সেখানে গুহার উপরে মসজিদ বিনির্মাণ করেছিলেন।
আসহাবে কাহাফের স্মৃতিসৌধ হিসেবে তার ভগ্নাবশেষ এখনো সংরক্ষিত রয়েছে সযত্নে। আম্মান উচুঁ-নীচু পর্বত ও উপত্যকাময় একটি মনোরম মহানগর। তবে আসহাবে কাহাফের উপত্যকা ও আশেপাশের অংশজুড়ে ভিন্ন রকম বিমুগ্ধতা ছড়িয়ে আছে। আছে আধ্যাত্মের উচুঁ মাত্রার আবহ। চতুর্দিকে যেন যুবকদের দোয়াটি এখনো অনুরণিত হয়— ‘রাব্বানা হাব লানা মিন লাদুনকা রাহমাহ, ওয়া হাইয়ি’ লানা মিন আমরিনা রাশাদা’।
অর্থাৎ হে আমাদের প্রভু! আমাদের তোমার করুণা উপহার দাও। আমাদের জটিলতায় সুবুদ্ধি সৃষ্টি করে দাও।