Writing

আপনার মায়ের রুমে ঢুকতেও অনুমতি লাগবে

আপনি চাইলেই কারো বাসায় হুট করে ঢুকতে পারবেন না। বাসার মধ্যে সে কী করছে না করছ, প্রস্তুত আছে কি নেই, তার গোপনীয়তা লঙ্গন হবে কিনা এসব ব্যাপারে ইসলাম খুব সজাগ। সে হয়তো এমন কোনো পোশাক পরে আছে, যেটা পরা অবস্থায় কারো সামনে বের হতে পারবে না, সে হয়তো তার গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজে ব্যস্ত আছে, যেটা আর কেউ দেখলে সমস্যা, কিংবা পরিবারের সবার সাথে সে হয়তো গল্প করছে, সেই অবস্থায় কেউ বাসায় আসলে সবাই বিব্রত হবে।

তাহলে কী করতে হবে?

বাসায় ঢুকার আগে তার অনুমতি নিতে হবে- সে এই মুহূর্তে আপনাকে তার বাসায় ঢুকতে দিবে কিনা। যদি ঢুকতে দেয়, তবেই ঢুকবেন। যদি ঢুকতে না দেয়? জোর করে ঢুকে পড়বেন?

কুরআনে আল্লাহ এই বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে বলেন:

“হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য কারো ঘরে প্রবেশ করো না; যতোক্ষণ না তোমরা অনুমতি নিবে এবং ঘরবাসীকে সালাম দিবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।”
[সূরা আন-নূর ২৪:২৭]

কিন্তু যে বাড়িতে গেলেন, গিয়ে দেখলেন সেখানে কেউ নাই কিংবা আপনার ডাক হয়তো তারা শুনতে পারেনি। হতেও পারে আপনাকে চলে যেতে বলতে পারে। আপনি এতোদূর থেকে আসলেন, এবার না ঢুকে চলে যাবেন?

আল্লাহ বলেন:

“অতঃপর যদি তোমরা সেখানে কাউকে না পাও, তাহলে তোমাদেরকে অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত তোমরা সেখানে প্রবেশ করো না। আর যদি তোমাদেরকে বলা হয় ‘ফিরে যাও’ তাহলে ফিরে যাবে। এটাই তোমাদের জন্য অধিক পবিত্র। তোমরা যা করো, সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত।”
[সূরা আন-নূর ২৪:২৮]

ইসলাম একজন মানুষের ঘরের ভেতর যে ধরণেই প্রাইভেসি দিয়েছে, সেটা অকল্পনীয়। ঘরের ভেতর সে কী করছে বা না করছে সেটা নিয়ে নাক গলানোর কোনো অধিকার আপনার নেই। উল্টো আপনি যদি কারো ঘরে উঁকি দিতে যান, আপনিই বরং শাস্তির আওতায় আসবেন। অনুমতি ছাড়া কারো ঘরে প্রবেশ করা তো দূরের কথা, তার ঘরের দিকে উঁকি দিতেও পারবেন না।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:

“যদি কোনো লোক অনুমতি ছাড়া তোমার দিকে উঁকি মারে, তখন তুমি তার প্রতি কঙ্কর ছুঁড়ে তার চোখ উপড়ে ফেলো, এতে তোমার কোনো অপরাধ হবে না।”
[সহীহ বুখারী: ৬৯০২]

আপনি অযথা কারো প্রাইভেসির জন্য হুমকি হতে পারেন না। অন্য কারো ঘরে যেমন হুট করে ঢুকতে পারেন না, নিজের আপন মায়ের ঘরেও হুট করে ঢুকতে পারেন না। আপনার মনে হতে পারে, ‘আমরা তো একই বাসায় থাকি, তবুও?’ একজন সাহাবীরও এই প্রশ্নটি মাথায় এসেছিলো।

একদিন তিনি রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি ঘরে প্রবেশ করার জন্য আমার মায়েরও অনুমতি চাইবো?”

– হ্যাঁ।

– আমি তো তার সাথে একই ঘরে থাকি।

– (তবুও) অনুমতি নিয়ে যেও।

সাহাবী আবারও একই প্রশ্ন করলেন, “আমি তো তার সাথে একই ঘরে থাকি।”

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবার তাকে যুক্তি দিয়ে বুঝালেন।

“অনুমতি নিয়ে যেও। তুমি কি তোমার মাকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখতে চাও?”

উত্তরে সেই সাহাবী বললেন, “না।” রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তাহলে অনুমতি নিয়ে যেও।” [মুয়াত্তা মালিক: ১৭৩৮]

অর্থাৎ একই ঘরে থাকলেও মা কখন কী পোশাক পরে আছেন, অপ্রস্তুত আছেন কিনা সেটা তো আমরা জানি না। সেজন্য মায়ের রুমে ঢুকার আগেও অনুমতি নিতে হবে। তিনি যদি অনুমতি দেন, তবেই ঢুকতে হবে।

একইকথা বোনদের বেলায়ও। বোনদের রুমে ঢুকতেও অনুমতি লাগবে। নতুবা বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে, যেটার জন্য ভাই-বোন কেউই প্রস্তুত না।
[আদাবুল মুফরাদ, ইমাম বুখারী: ১০৭৩]

ইসলামের সৌন্দর্য
(১৬ তম পর্ব)

লিখেছেন

Picture of আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture