আমার বিয়েটা হয়েছিলো দারুণ ভাবে। আমাকে দেখতে এসেই বিয়েটা হয়েছিলো। তেমন কোনো আয়োজনও করতে হয়নি। ছোটবেলা থেকেই খুব চাইতাম আমার বিয়েটা হবে খেজুর ছিটিয়ে। দারুণ না?
মসজিদের বিয়ে গুলো আসলেই সুন্দর হয়।
আমার চাওয়া গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আমি চাইতাম আমার মাহরামের উপস্থিতিতে আমার বিয়েটা হবে মসজিদে। রব কবুল করেছেন আলহামদুলিল্লাহ।
সেদিন ছিলো শুক্রবার। আমাকে দেখতে আসবে এতোটুকু জানতাম। খুব স্বাভাবিক ভাবেই হাঁটাচলা করছিলাম। সবাই আমার দিকে কেমন আঁড়চোখে তাকাচ্ছিলো। সবার ড্যাবড্যাব চাহনিতে আমার ভীষণ অস্বস্তি হতে লাগলো। কি ভয়ানক পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলাম সেদিন! দেখতে আসার দিন কিংবা বিয়ের কথা হয় এমন সময়ে মেয়েদের অনেক কিছুর সম্মুখীন হতে হয়। লজ্জা মেয়েরা একদম নুইয়ে যায়। সবার সাথে তখন দূরত্ব চলে আসে। আগের মতন চঞ্চলতাটাও আর থাকে না।
মেহমান চলে এসেছেন। আমি খুব স্বাভাবিক ভাবে গিয়ে তাদের সালাম দিলাম এবং কথাবার্তা বললাম। নতুন মানুষ। উনাদের সাথে মিশতে আমার কিছুটা সময় লাগবে। লজ্জা পাচ্ছিলাম ভীষণ। পুরুষদের নাস্তা শেষে আব্বু মেহমান খানা থেকে ভেতরের দিকে আসলেন। তিনি আম্মুকে ডেকে বললেন,
‘এইযে উম্মে তুবা! আপনার মেয়েকে জলদি প্রস্তুত করিয়ে দিন।
অন্যসব মহিলাদের মতো আমার আম্মু প্রশ্ন করে বসলেন না। কারণ আমার আব্বু অতিরিক্ত কথা বলা পছন্দ করেন না। তিনি সবসময় বলেন ‘তোমরা ইসরাফ(সীমালঙ্ঘন) করো না। কারণ আল্লাহ তায়ালা ইসরাফকারীদের অপছন্দ করেন।
আম্মু এসে আমাকে তৈরি হতে বললেন। বুকের ভেতর ধুকপুক আওয়াজ হচ্ছে। আমার অবস্থা কেবল আমিই টের পাচ্ছি। বোরকা পরে পেছনে তাকানোর পর দেখলাম আব্বু দাঁড়িয়ে আছে। মুখে লেগে আছে হাসি। ডান হাতটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
‘চলেন তুবাম্মু! আপনার জন্য রব কি ফয়সালা করেন সেটা পরে দেখা যাবে।’
কোনো শব্দ করলাম না। ভয় হচ্ছে আমার। শরীরে কাঁপুনি হচ্ছে। খুব জ্বরে আক্রান্ত হলে মানুষ যেমন কাঁপে আমিও তেমন কাঁপতে লাগলাম। আব্বু আমাকে নিয়ে এলেন সামনের রুমে। এখানে একজন মানুষ ছাড়া আর কেউই ছিলো না। লম্বা মতো একজন মানুষ গায়ে সাদা জুব্বা। উস্তাযদের সামনে ছাত্ররা যেমন মাথা নিচু করে বসে থাকে তিনিও তেমন করে বসে ছিলেন। আব্বু আমাকে একটা চেয়ার টেনে বসতে বললেন। আব্বু উনার উদ্দেশ্য বললেন,
‘মুহাম্মদ! আপনাদের কথা বলে নেওয়া জরুরি। আপনি আমার কন্যার থেকে যা জেনে নেওয়ার নিতে পারেন ইনশাআল্লাহ। আপনাদের দু’জনের কথা বলার উপরই সবকিছু নির্ভর করে।
তিনি মাথা নেড়ে ক্ষীণ কন্ঠে বললেন,
‘জ্বি ইনশাআল্লাহ।
আব্বু কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ালেন। তিনি থাকলে হয়তো আমরা কোনো কিছু জানতে ইচ্ছে করা সত্ত্বেও জানতে চাইবো না এই ভেবে। আমি কেঁপেই যাচ্ছি। আমার হাঁটু খুব জোরে জোরে কাঁপছে। তিনি মুচকি হেসে বললেন,
‘এহেম! এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ভাইবাতেও মানুষ এতো ভয় পায় না।
আমার তো কেঁদে দেওয়ার অবস্থা। ভয়ে কোনসময় জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাই।
‘আপনার নাম আমি জানি। তাই জিজ্ঞেস করে আর সময় নষ্ট করবো না। আমাদের বাঙালি এমন একটা জাতি যারা কারো নাম জানা সত্ত্বেও জিজ্ঞেস করে তোমার নাম কি? যেমন ধরুন আমার নাম জানা সত্ত্বেও জিজ্ঞেস করবে ‘মুহাম্মদ তোমার নাম কি?
সত্যিই খুব হাসি পাচ্ছিলো। নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে কিছুটা শব্দ করে হেসে দিলাম। মাথা নিচু করে রাখায় আমি উনার মুখ দেখছিলাম না। কিছু জিজ্ঞেস করলে মাথা নেড়ে জবাব দিচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ নীরবতা অবলম্বন করার পর তিনি আমাকে বললেন,
‘জনাবা এমন একটি কথা বলুন যেটা আপনি আপনার হবু স্বামীকে বলবেন। আর আপনি মনে করেন এটা বলা অত্যন্ত জরুরি।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,
‘কথাটা আমার পর্দা প্রসঙ্গে। আমার পর্দার ব্যাপারে ছোটবেলা থেকে আব্বু আমাদের পর্দার ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর ছিলেন। বালেগা হওয়ার পর থেকে নন মাহরামের সামনে আর যাইনি। আমার যবে থেকে পর্দার হুকুম হয় তবে থেকে কোনো পুরুষ আমাকে দেখেনি। বাহিরে বের হওয়ার সময় আব্বু সাথে থাকতেন আমাদের সুপারম্যান হয়ে।
তিনি সবসময় আমাদের পর্দার ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন। পর্দার হুকুম হয়ে যাওয়ার পর আমাদের নন মাহরামগণ কখনোই আমাদের বিরক্ত করেননি, তারা বুঝতো ডাকলেও আমরা এখন সামনে যাবো না। এজন্য কখনো কোনো বাজে পরিস্থিতির শিকার হতে হয়নি। আমি চাই ভবিষ্যতেও যেনো না হয়। আমার যাওজ যেনো আমার পর্দা নিয়ে সচেতন থাকেন। আমার যাতে কোনোরূপ অসুবিধা না হয় সেই বিষয়ে খেয়াল রাখেন। ছোটবেলা থেকে আমরা একরকম পরিবেশে বড় হয়েছি। এখানে কোনো কঠোরতা নেই। ইসলাম সহজ!
আমার নতুন পরিবেশ কেমন হবে আল্লাহু আ’লাম। সেখানে আমার সুবিধা এবং অসুবিধা খেয়াল রাখার দায়িত্ব আমার যাওজের। আমার পর্দা যাতে কোনোভাবেই ছুটে না যায় এমন দায়িত্ব অবশ্যই আমার ভবিষ্যত যাওজকে নিতে হবে। আচ্ছা আমি যদি আপনার আহলিয়া হই তবে আপনি কি আমার পর্দা রক্ষার দায়িত্ব নিবেন?
তিনি মুচকি হেসে বললেন,
‘ ইনশাআল্লাহ! আমার আহলিয়া যিনি হবেন তার পর্দা যাতে ছুটে না যায় এর জন্য আমি যথেষ্ট ব্যবস্থা নিবো ইনশাআল্লাহ। মৃত্যু পর্যন্ত তার পর্দা রক্ষার জিম্মাদার হবো।’
আমি চুপ করে রইলাম। তিনি আবারও নীরবতা কাটিয়ে বললেন,
‘আপনার আর কোনো প্রশ্ন নেই?’
মাথা হালকা নেড়ে বললাম,
‘না।’
তিনি মৃদু আওয়াজে বলতে শুরু করলেন,
‘আমি আমার পরিবারের সাথে থাকি। আমার পরিবারে আমি, আব্বু-আম্মু এবং আমার দুই ভাই-বোন আছে আলহামদুলিল্লাহ। আমার পরিবারের সাথে থাকতে আপনার কোনো আপত্তি নেই তো?’
‘জ্বি-না। আপত্তি নেই। বরং আমি সবসময় চাইতাম ভরপুর একটা পরিবার। আমার শ্বশুর-শাশুড়ি থাকবেন। আমার দ্বিতীয় আব্বু-আম্মু। তাঁরা আমাকে মেয়ে রূপে গ্রহণ করবেন। আর আমি তাঁদের যত্ন নিবো কখনো মায়ের মতো আবার কখনো মেয়ের মতো।’
তিনি হেসে বললেন,
‘মাশাআল্লাহ মহাশয়া। আমার আম্মু আপনার অপেক্ষায় আছেন! আপনি কি যেতে রাজি আছেন?
কথাগুলো শুনে আমি আর স্বাভাবিক ভাবে বসে থাকতে পারলাম না। সেখান থেকে উঠে চলে এলাম নিজের রুমে। ভীষণ লজ্জা লাগছিলো। আমার এভাবে চলে আসার ব্যাপারটা অবশ্য তিনি বিয়ের পর অনেকবার বলে বলে আমায় রাগিয়েছিলেন। রেগে যাওয়ার পর সবসময় বলতেন,
‘রাগলে আপনাকে কি সুন্দর লাগে। একদিম টমেটোর মতো হিহিহিহি।
আসরের নামাজের পর আব্বু আমার দরজায় এসে সালাম দিলেন। আমি তাঁকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিলাম। তিনি এসে আমার পাশে বসলেন।
আব্বুর দিকে একবার তাকালাম। আজকের চাহনিটা অন্যরকম। ভেতরটা কেমন করে উঠলো।
তিনি আমার ডান হাত মুঠোয় ভরে বললেন,
‘তুবাম্মু! তোমার জন্য আমি একজন সুপাত্র পেয়েছি। আমি তোমাকে তোমার যোগ্য পাত্রের হাতে তুলে দিতে চাই। আমার বিশ্বাস তোমার আব্বুর পর সেই একমাত্র লোক যে তোমাকে ভালো রাখতে পারবে, মৃত্যু পর্যন্ত তোমার পাশে থাকবে আর তোমার হাত ধরে জান্নাতে নিয়ে যাবে।
কথাগুলো বলে আমার আব্বু কান্না করে দিলেন। আহ তখন আমার ভেতরটা তোলপাড় হয়ে যাচ্ছিলো। আমার পিতার চোখের পানি আমাকে ভেতর থেকে শেষ করে দিচ্ছিলো। আজ আর মায়ের মতো শাসনের স্বরে বলতে পারলাম না ‘এভাবে কাঁদবেন না।’ আমি নিজেও কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম। আব্বু চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল,
‘আমি কি এগোবো আম্মু?
চুপ থাকলাম। এসময় কি বলা যায় ভাবতে থাকলাম। আব্বু মাথায় হাত দিয়ে মুচকি হেসে বললেন,
আস-সুকুতু আলামাতুর রেজা! আমি কি তবে এটাই বুঝে নিবো আম্মু?
এবারও চুপচাপ রইলাম। হাসিও আসছিলো আবার কান্নাও পাচ্ছিলো। আব্বু আমার কপালে চুমু খেয়ে বললেন,
‘দু’আ চাই আম্মাজান। আপনার নিকাহ সম্পন্ন করে আবার আসছি। আপনার নিকাহর খেজুর নিয়ে আসবো। আপনি সেটা সবাইকে ভাগ করে খাওয়াবেন।
যেদিন আমার বিয়ে হয় সেদিনই আমাকে শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। আমার মনে আছে আমার যাওজ আমাকে আমার শাশুড়ির কাছে নিয়ে গিয়ে বলেন,
‘আম্মু আপনার জন্য একটা মেয়ে এনেছি। আপনার জন্য একটা বান্ধবী এনেছি। এই নিন আপনার সেই হাদিয়া। একেও আপনার মতো গড়ে নিন।
শাশুড়ি সেদিন শুরুতেই আমার হাত জোড়া ধরে বলল,
‘আহলান ওয়া সাহলান আম্মা। আজ থেকে এটা আপনার বাড়ি আর আমি আপনার মা। আমাকে বান্ধবী হিসেবেও গ্রহণ করতে পারেন। কারণ সবাই চলে যাওয়ার পর আমরা দুজনই তো দুজনার সাথী হবো।
আব্বু-আম্মুর বদলে আব্বু-আম্মু পেয়েছি। আমার বিয়ের পর থেকে শাশুড়ির মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদের কখনো দুই কথা হয়নি আলহামদুলিল্লাহ। তিনি সর্বদা আমার একজন বন্ধু হয়েই ছিলেন।
প্রণয়নের রাতে আমার যাওজ আমার হাত তাঁর বুকে চেপে ধরে বলল,
‘আজ থেকে আপনার দুঃখের ভাগ আমি নিবো আর আমার সুখের ভাগ আপনি নিবেন। আপনার চোখের পানি মুছে দেওয়ার দায়িত্ব নিলাম আমার প্রিয়। শুধু কথা দিতে হবে আমায় কখনো ছেড়ে যাবেন না। আমরা একজন হয়তো বিচ্ছেদ ঘটিয়ে আগেই রবের ডাকে সাড়া দিবো। কিন্তু এই বিচ্ছেদ থাকবে খানিক্ষণ। আমরা জান্নাতে আবার মিলিত হবো।
এরপর তিনি কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে আবার বলতে আরম্ভ করলেন,
‘আপনি না হয় আমার খাদিজা হলেন আবার কখনো আয়িশা। আমি খুব অস্থির হলে ছুটে আসবো আপনার ধারে। তখন আম্মিজান খাদিজার মতো আমায় সাহস দিবেন। আমার হাতে হাত চেপে বলতে পারবেন না ‘হে বন্ধু! ভয় নেই আপনার। আমি আছি তো পাশে।’ বলেন না থাকবেন পাশে?
চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে। তিনি আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
‘চোখের পানি কখনো নিজে মুছবেন না। কখনো কান্না আসলে আমার সামনে বসে বসে কাঁদবেন। তারপর যখন আপনার কান্না শেষ হবে তখন আমি না হয় আপনার চোখ মুছে দিবো। দয়া করে এই দায়িত্ব পালনের সুযোগটা অন্তত আমায় দিন।
তেপ্পান্ন বছর সংসার করেছি এই মানুষটার সাথে।
আমাদের দিনগুলো খুবই সুন্দর ছিলো। আব্বুর কথাটা মনে পড়ে ‘আমি তোমার জন্য সুপাত্র পেয়েছি’। আমার যাওজ ছিলেন অত্যন্ত ভালো মানুষ। এই তেপ্পান্ন বছরে কখনো আমার পর্দা ছুটেনি আলহামদুলিল্লাহ। বরং আমার যাওজ-ই আমাকে সকল বিষয়ে আরো বেশি তাগিদ প্রদান করতেন, আমাকে আগলে রাখতেন। পথে বের হলে খুবই সাবধানে আমাকে নিয়ে হাঁটতেন যাতে কোনো নন মাহরামের সাথে আমার শরীর না লেগে যায়।
প্রায় সময় আমি এবং উনি একসাথে হাঁটতে বেরোতাম। তো একদিন আমি উনার সাথে হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। পথে একটা মেয়েকে দেখিয়ে আমি আমার যাওজকে বললাম,
‘মেয়েটাকে দেখুন…’
তিনি আমাকে পুরো কথা বলতে না দিয়ে বললেন,
‘যে চোখে আমি আপনাকে দেখি সে চোখে আমি কোনো মহিলাকে দেখতে পারবো না। আমি আমার এই চোখ দিয়ে কেবল আমার ঘরের চাঁদকেই দেখবো যাকে আমার রব আমার করে পাঠিয়েছেন।
যার দিকে তাকালে আমার চোখজোড়া অপবিত্র হবে না আমি কেবল তাকেই মুগ্ধ হয়ে দেখবো। আপনি দয়া করে আর কখনো আমাকে কাউকে দেখতে বলবেন না, কখনো কোনো নন মাহরাম মহিলার কথা আমাকে শুনাবেন না। আমি আপনাকে নিয়ে বেশ ভালো আছি! আপনি কেবল আপনাকে দেখতে বলবেন, আপনি কেবল আপনাকে শুনতে বলবেন।
আমার যাওজ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। অস্থির হয়ে গেলাম। জীবনের শেষ সময়ে তিনি চাইতেন আমি সারাক্ষণ তাঁর পাশে বসে থাকি, কথা বলি, গল্প বলি। তিনি আমাদের বিয়ের প্রথম প্রথম দিনগুলোর গল্প বলা শুরু করলেন। আমাকে আবারও ফিরিয়ে নিলেন অতীতে। তাঁর অবস্থার অবনতি!
পুত্ররা নিয়ে গেলো হসপিটালে। সাথে তিনি আমাকে নিতে বললেন। পুরো গাড়িতে আমরা দু’জন অনেক কথা বললাম। আমাদের জীবনের শেষ কথা ছিলো সেগুলো। তিনি যে আমার কাছে আর কখনো ফিরে আসবেন না আমি ভাবতেও পারিনি।
পুত্রদের হাতে আমায় তুলে দিয়ে ছলছল চোখে বললেন,
‘আপনাদের আম্মাকে আপনাদের কাছে আমানত দিয়ে গেলাম। আপনারা আমার আমানতের খেয়ানত করবেন না। আপনাদের আম্মার পর্দা যেনো ছুটে না যায় খেয়াল রাখবেন। কখনো ব্যথা দিয়ে কথা বলবেন না। আপনাদের আম্মার জন্য আমি জান্নাতে অপেক্ষা করবো। আপনারা উনার সবদিকে খেয়াল রাখবেন।’
হসপিটালে উনাকে ভর্তি করানো হলো। ডাক্তাররা আর আশা দিতে পারছে না। অনেক কান্নাকাটি করেছি রবের কাছে। তিনি চেয়েছিলেন আমি যেনো তাঁর সাথে হসপিটালে থাকি। কিন্তু সুযোগ হলো না। সবই রবের ফয়সালা। বাসায় ফেরার সময় আমার প্রিয়তম যাওজ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘আপনি যদি থাকেন পাশে, ফের প্রণয় হবে মোদের জান্নাতে।
আর কথা হয়নি আমাদের। আমাদের আর একসাথে হাসাও হয়নি। আমার যাওজ চলে গেলেন রবের কাছে। হ্যাঁ এই মানুষটার সাথে আমি থেকেছি তেপ্পান্নটা বছর। আর এর প্রতিটি দিন ছিলো অসাধারণ।