আলোর পথের যাত্রী পর্ব-০২
অন্ধকার খুপরির ভিতরে চলে যাওয়া ছেলেটার নাম ‘আবির।’ সদা হাস্যোজ্জ্বল আর লজ্জাবনত মুখাবয়বের অনন্য চরিত্রের এক পরিচিত নাম। শুভ্রতার ফোঁটা ঝড়ে পরে তার চেহারা মোবারক থেকে। সিনিয়র থেকে জুনিয়র, ব্যাচমেট থেকে দাড়োয়ান সবাই এক নামে চিনে তাকে। নতুন ব্যাচের ওরিয়েন্টেশনের মূল দায়িত্ব কাঁধে পরেছে তার। ‘আবির’ সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট। সাথে আবার ব্যাচ রিপ্রেজেনটেটিভ। সাধারণত ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামগুলো অ্যারেঞ্জ করে ইমিডিয়েট সিনিয়র ব্যাচের স্টুডেন্টরাই, সেই হিসেবে তাদের ব্যাচের সবার উপর দায়িত্ব পড়ে। ‘আবির’ ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে থাকবেনা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কিন্তু সবার অনুরোধে রাজি হয়েছে কিন্তু শর্ত ছিল শুধু মাত্র পরিচয় পর্বেই সে থাকবে, কোন ভাবেই তাকে সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামে রাখা যাবে না। বন্ধুরাও ‘আবির’ সম্পর্কে সবকিছু জানে তাই তাকে কেউ জোর করেনি।
চার.
অফিস শেষ করে শম্ভুনাথ বাবু বাসায় ফিরেছেন কেবল। তার স্ত্রী কৈলীশা দেবীকে আজ খুব বিষন্ন দেখাচ্ছে। সেই বিকেল থেকেই নাকি পায়চারি করে যাচ্ছে! শম্ভুনাথ বাবু জিজ্ঞেস করছেন,
— ‘তোমাকে বিষণ্ন দেখাচ্ছে কেন?’
— ‘আরে সন্ধ্যা হয়ে গেল মেয়েটা এখনো এলো না কেন?’
— ‘আরে চলে আসবে?’
— ‘কখন আসবে, সেই সকালে বের হয়েছে মেয়েটা। মেয়েটার ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। ড্রাইভার মজিদ মিয়াও আজ ফোনটা বাসায় রেখে গিয়েছে।’ এই মজিদ মিয়াকে আজকাল প্রয়োজনের সময় পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘এখন আপাতত চিন্তা বাদ দিয়ে আমাকে এক কাপ চা করে দাও। সারাদিনের ক্লান্তি এক কাপ চাতে ঘুচিয়ে যাবে। আর এরই মধ্যে তোমার মেয়ে চলে আসবে। এটা বলেই শম্ভুনাথ বাবু চলে গেলেন নিজের রুমে।’ কৈলীশা দেবী একটু কঠোর কন্ঠেই বললেন — ‘মেয়েটা আসে নাই এখনো আর তুমি খেতে চাও চা, এমনসময় চা কি গলা দিয়ে নামে!’
শম্ভুনাথ বাবু জানেন তার স্ত্রী রেগে গেলে আর কিছু বলা যাবে না; না হয় একটা বড়সড় ঝড়-তুফান খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বয়ে যাবে। শম্ভুনাথ বাবু এটাও জানেন তার স্ত্রী রেগে গেলেও ঠিকই একটু পর চা বানিয়ে দিয়ে আসবে তার রুমে, তাই তিনি কথা না বাড়িয়ে পত্রিকা পড়ায় মনযোগী হলেন!
৫.
কৈলীশা দেবী চা করে নিয়ে এসেছেন ইতিমধ্যেই, আর একটু ব্যঙ্গ ভাষায় বললেন — ‘এই নাও তোমার সাধের চা।’
শম্ভুনাথ বাবুও কম চালাক নন, উকিল হওয়ার সুবাধে কখন কাকে কিভাবে খুশি করতে হয় তা কিন্তু তার অজানা নয়! তাই তিনিও বলে বসলেন,
— ‘জানো রাগ করলে কিন্তু একটা মানুষকে খুব সুন্দর লাগে?’
— ‘কাকে?’
— ‘তোমাকে!’
— ‘ন্যাকামো ছেড়ে চা খেয়ে নাও, ঠান্ডা হয়ে যাবে।’
সন্ধ্যা তখন সাতটা, কলিং বেল হঠাৎ বেজে উঠল। শম্ভুনাথ বাবুর চা খাওয়াটা এখনো শেষ হয়নি, হাক ডাক দিয়ে বললেন — ‘এই কৈলীশা বলেছিলাম না আমার চা খাওয়ার মাঝেই পুষ্পিকা চলে আসবে। গিয়ে দরজাটা খুলে দাও।’
কৈলীশা দেবী দরজা খুলে দেখলেন পুষ্পিকা চলে এসেছে, খুশিতে জড়িয়ে ধরলেন মেয়েকে। জিজ্ঞেস করলেন,
— ‘ফোন বন্ধ ছিল কেন?’
— ‘এতো দেরি হলো কেন?’
শম্ভুনাথ বাবু এরই মধ্যে চা শেষ করে চলে এসেছেন, ‘আরে তুমিও না পারো, মেয়েটা এসেছে মাত্র তাকে বসতে দাও, ফ্রেশ হতে দাও তারপর না হয় সব জানা যাবে।’
গাড়ি পার্কিং করে মজিদ মিয়াও চলে এসেছেন। তাকে দেখে কৈলীশা দেবীর গা রাগে জ্বলছিল। আর উচ্চ কন্ঠে বলছিলেন,
— ‘আচ্ছা মজিদ মিয়া তুমি মোবাইলটা নিয়ে যাও নাই কেন?’
— ‘ম্যাডাম তাড়াহুড়োর মধ্যে চইলা গেছিলাম এর লাইগা নিতে ভুইলা গেছি।’
— ‘আর অভিনয় করা লাগবে না, ইদানীং তুমি ভালোই অভিনয় শিখে গেছ মজিদ মিয়া?’
— ‘না ম্যাডাম! আমি অভিনয় করতাছিনা, হাছা কথা কইতাছি। আমার যাওয়ার কথা আছিল বিহাল বেলা কিন্তু আপামনি হঠাৎ কইরা বেলা বারোগায় ফোন দিয়া কয়, মজিদ মিয়া তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়া আমার কলেজের সামনে চলে আসো। তাই আমি তাড়াহুড়ার মইধ্যে মোবাইল রাইখা চইলা গেছিলাম।’
— ‘বেলা বারোটায় পুষ্পিকাকে আনতে গেলে ফিরতে এতো লেইট হলো কেন, মজিদ মিয়া?’
এমন প্রশ্নের জবাবে মজিদ মিয়া নিশ্চুপ!
আলোর পথের যাত্রী
পর্ব – ০২