প্রথমে আমরা জেনে নেই, আল্লাহর নামের ব্যাপারে কুরআন ও হাদিসে কী বলা হয়েছে।
যারা কুরআন ও হাদিসের সামান্য জ্ঞান রাখে তারাও জানেন যে, কুরআন-হাদিসে আল্লাহর অসংখ্য সুন্দর সুন্দর বর্ণিত হয়েছে। আর মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে সে সকল নামের ওসিলা দিয়ে দুআ করার এবং সে সব নাম ধরে ডাকার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন:
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلِلَّـهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ فَادْعُوهُ بِهَا ۖ وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ ۚ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
“আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সে সব নাম ধরেই তাঁকে ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর, যারা তাঁর নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শীঘ্রই পাবে।”
(সূরা আরাফ: ১৮০)
তিনি আরও বলেন:
قُلِ ادْعُوا اللَّهَ أَوِ ادْعُوا الرَّحْمَنَ أَيًّا مَا تَدْعُوا فَلَهُ الأسْمَاءُ الْحُسْنَى
“তুমি বল, তোমরা আল্লাহ নামে ডাক কিংবা রহমান নামে ডাক, যে নামেই তোমরা ডাক না কেন, তাঁর জন্যই রয়েছে উত্তম নামসমূহ।
(সূরা ইসরা: ১১০)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ ، أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ ، أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ ، أَوْ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ
“আমি আপনার সেই সকল নাম ধরে প্রার্থনা করছি, যে নামগুলো আপনি নিজেই নিজের জন্য নির্ধারণ করেছেন। অথবা সৃষ্ট জগতের কাউকে শিক্ষা দিয়েছেন, অথবা আপনার কিতাবে নাজিল করেছেন অথবা আপনার নিজের কাছেই ইলমে গায়ব (অদৃশ্য জ্ঞান)এ সংরক্ষিত রেখে দিয়েছেন।”
(মুসনাদ আহমদ, হা/৩৭০৪, সিলসিলা সহীহাহ, আলবানী)
আবু হুরায়রা রা., হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِنَّ لِلَّهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا مِائَةً إِلا وَاحِدًا مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ
“আল্লাহর এমন নিরানব্বইটি-এক কম একশটি নাম-রয়েছে, যে ব্যক্তি সেগুলো সংরক্ষণ করবে (তথা মুখস্থ করার পাশাপাশি সেগুলো বুঝে আমল করবে) সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
(বুখারি ও মুসলিম)
সুতরাং আমাদের কর্তব্য হল, আল্লাহ তাআলা নিজে যে সকল নাম নিজের জন্য পছন্দ করেছেন সেগুলোর ওসিলায় তার নিকট দুআ করা এবং তাকে আহ্বান করা। যেমন:
- আল্লাহ (উপাস্য)
- আর রহমান (পরম করুণাময়)
- আর রাহীম (অসীম দয়ালু)
- আল খালিক (মহান স্রষ্টা)
- আল গাফূর (মহা ক্ষমাশীল)
- আল হালীম (অতি সহিষ্ণু)
- আল কারীম (মহা অনুগ্রহ শীল)
- আল ওয়াহহাব (মহান দাতা)।
- আর রাযযাক (সর্বাধিক রিজিক দাতা)
- আল আ’লীম (মহাজ্ঞানী) ইত্যাদি।
আর এমন নাম ধরে ডাকা উচিৎ নয় যা তিনি নিজের জন্য নির্ধারণ করেন নি বা যেগুলো কুরআন-সুন্নায় বর্ণিত হয় নি।
তবে অনারব ভাষায় তার নামের অর্থ ধরে আহ্বান করায় কোন আপত্তি নাই। অনুরূপভাবে অমুসলিমকে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে বা কাউকে বুঝানোর প্রয়োজনে খোদা, গড, ঈশ্বর ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে।
কিন্তু আল্লাহর যাত (স্বত্বা) এর পরিচয় বর্ণনা, তাঁর গুণাবলী ও মহাত্মা সম্পর্কে বক্তৃতা-আলোচনা, তাঁকে আহ্বান করা, তাঁর নিকট দুআ ও আরাধনা ইত্যাদিতে খোদা, ঈশ্বর, ভগবান, গড ইত্যাদি শব্দগুলো বর্জন করাই উত্তম। কারণ এগুলো কুরআন-হাদিসে বর্ণিত আল্লাহর গুণবাচক নাম নয় এবং তাঁর গুণবাচক কোন নামের বিশেষ অর্থও নয়। তাছাড়া এসব নাম ধরে বিধর্মীরা তাদের দেব-দেবতা ও উপাস্যদেরকে আহ্বান করে। যেমন:
- ঈশ্বর: (এর স্ত্রী লিঙ্গ ঈশ্বরী)। খৃষ্টানরা যিশুখ্রিস্ট (ঈসা আলাইহিস সালাম) কে ঈশ্বর বলে।
- গড: (এর বহু বচন গডেজ) খৃষ্টানরা যিশুখ্রিস্ট (ঈসা আলাইহিস সালাম) কে ঈশ্বর বলে। এছাড়া
- খোদা শব্দটি আহুরা মাজদা ধর্মে (জরাথুস্ট্রবাদ ধর্ম) ঈশ্বরকে ডাকতে ব্যবহৃত হয়।
- ভগবান: (এর স্ত্রী লিঙ্গ ভগবতী)। হিন্দুরা তাদের পুরুষ দেবতাকে ভগবান আর স্ত্রী দেবতাকে ভগবতী বলে বলে।
যাহোক, আমাদের কর্তব্য, মহান আল্লাহ যে সকল নিজের জন্য নির্বাচন করেছেন সেগুলো ধরে আহ্বান জানানো এবং এ ছাড়া অন্যান্য নাম বর্জন করা।
সুতরাং আল্লাহ তাআলাকে বুঝাতে যথাসম্ভব খোদা, গড, ঈশ্বর ইত্যাদি শব্দ পরিত্যাগ করাই ভালো।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।
আল্লাহু আলাম।