আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার!
আজকের পর্বে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের (রা:) শক্তিশালী প্রার্থনার মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালার সাথে আন্তরিক অঙ্গীকার করার বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
اللهُمَّ فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ ، عَالمَ الغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ ، إِنِّي أَعْهَدُ إَلَيْكَ فِي هَذِهِ الحَيَاةِ الدُنْيَا : إِنَّكَ إِنْ تَكِلْنِي إِلَى نَفْسِيْ تُقَرِّبُنِي مِنْ الشَّرِّ ، وَتُبَاعِدُنِي مِنْ الخَيْرِ ، وَإِنِّي إِنْ أَثِقُ إِلَّا بِرَحْمَتِكَ فَاجْعَلْهُ لِي عِنْدَكَ عَهْدَاً تُؤَدِّهِ إِلَيَّ يَوْمَ القِيَامَةِ ، إِنَّكَ لَا تُخْلِفُ المِيْعَادَ
মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ফাতিরাস সামাওয়াতি ওয়াল-আরদ্বা, আলিমাল-গায়বি ওয়াশ-শাহাদাতি, ইন্নি আ’হাদু ইলাইকা ফি হাজিহিল হায়াতিদ-দুনিয়া: ইন্নাকা ইন তাকিলনি ইলা নাফসি তুকাররিবুনি মিনা আল-শররি, ওয়া-তুবাঈদুনি মিনাল-খায়রি, ওয়া-ইন্নি ইন আসিকু ইল্লা বিরাহমাতিকা ফাজ’আলহু লি ‘ইন্দাকা ‘আহদান তু’আদ্দিহি ইলাইয়া ইয়াওমা আল কিয়ামাতি, ইন্নাকা লা-তুখলিফুল-মি’আদ।
অর্থ: হে আল্লাহ, নভোমন্ডল ও পৃথিবীর স্রষ্টা, দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানী, আমি আমার এই পার্থিব জীবনে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি যদি আমাকে আমার উপর ছেড়ে দেন, তবে এর দ্বারা আপনি আমাকে ক্ষতির (অকল্যাণের) কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছেন এবং কল্যাণ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন। আপনার করুণা ব্যতীত আমার কোন আস্থা নেই, তাই বিচার দিবসে এটাই যেন হয় অঙ্গীকার যা আপনি পূর্ণ করবেন, কেননা আপনি কখনোই ভঙ্গ করেন না অঙ্গীকার।
এই দু’আটিতে আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালার সাথে তাঁর বান্দার অঙ্গীকার ফুটে উঠেছে। প্রকৃতপক্ষে খুব অল্প কিছু দু’আ রয়েছে যেখানে আমরা আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালার সাথে অঙ্গীকারবদ্ধ হই। স্পষ্টতই যখন আপনি আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করেন বা যখন আপনি আল্লাহর নামে শপথ করেন – তা দু’আর তীব্রতা এবং কখনও কখনও আন্তরিকতাকেও বৃদ্ধি করে।
আসওয়াদ ইবনে ইয়াযিদ থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) আয়াতটি তেলাওয়াত করেন এবং তিনি বলেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন –
لَّا يَمۡلِكُونَ ٱلشَّفَٰعَةَ إِلَّا مَنِ ٱتَّخَذَ عِندَ ٱلرَّحۡمَٰنِ عَهۡدًا
যারা পরম করুণাময়ের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছে তারা ছাড়া অন্য কেউ সুপারিশ করার ক্ষমতা রাখবে না।
[১৯:৮৭]
এই প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের (রা:) ছাত্ররা তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কিভাবে এই অঙ্গীকার করতে হয়। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) এমন একজন সাহাবী যিনি প্রকৃতপক্ষে তার ছাত্রদের শিখিয়েছিলেন কিভাবে আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করতে হয়। কাজেই এই দুআ’টির অনেক আশীর্বাদ রয়েছে।
সেই দিন অর্থাৎ বিচার দিবসে কারও সুপারিশ করার কোন ক্ষমতা থাকবে না কেবলমাত্র তারা ব্যতীত যারা পরম করুণাময়ের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছে। এখন প্রশ্ন হল কুরআনের এই আয়াতের সাথে আপনি নিজেকে কিভাবে সম্পৃক্ত করতে পারেন?
রাসুল (ﷺ) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) সম্পর্কে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তাজা কুরআন শুনতে চায় (যেন তা সবেমাত্র তেলাওয়াত করা হয়েছে), সে যেন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের (রা:) কিরাআত শুনে।’ এবং এভাবেই তিনি এই বিশেষ আয়াতটির ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন এবং আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তা’য়ালার সাথে অঙ্গীকার গ্রহণের এই ধারণার সাথে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন।
আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তা’য়ালা সম্পর্কে আমরা যে বিষয়গুলো জেনেছি তার মধ্যে একটি হল যে তিনি তাঁর আন্তরিক বান্দাদের হাত ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন। তাই যখনই আল্লাহকে ডাকেন তখন তাঁকে বলুন
‘হে আল্লাহ! আপনি তো আপনার অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না, আপনি আমাদের প্রতি রহমতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাই আমাদের প্রতি আপনার রহমত বর্ষণ করুন; আপনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে আমরা যদি এটা করি তবে আপনি ওটা করবেন।’
আপনার রবকে, আপনার পালনকর্তাকে আপনার দু’আয় সম্পৃক্ত করার জন্য এটি খুব সুন্দর এবং শক্তিশালী একটি উপায়। একজন প্রভু যিনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, যিনি করুণা দেখাতে ভালোবাসেন, তাঁকে আপনি সম্পৃক্ত করছেন আপনার দু’আয়। আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালা যেন আমাদেরকে বিচারের দিনে উদ্ধার করেন, যেমন তিনি আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন: আমরা যদি তাঁর প্রতি বিশ্বাস আনি, আমরা যদি তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করি, এবং আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী তাঁর আনুগত্য করি তবে তিনি তাঁর রহমতের মাধ্যমে আমাদের উদ্ধার করবেন।
হে আল্লাহ, আপনার করুণায় সিক্ত করে আমাদের উদ্ধার করুন এবং আমাদেরকে আপনার সুখের উদ্যানে প্রবেশ করার অনুমতি দিন।
আল্লাহুম্মা আমীন!
আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার!
পর্ব:৪
মূল: ড. ওমর সুলাইমান
সিরিজ পুণ্যবানদের প্রার্থনা