আল্লাহর ওলী হিসেবে স্বীকৃতি

সোস্যাল মিডিয়ার যুগে আমরা ফেইসবুকে অনেকের বন্ধু হতে চাই। বিশেষ করে বিত্তশালী, সেলিব্রেটি কিংবা ক্ষমতাবান কারো বন্ধু হওয়ার জন্য রীতিমতো আমরা মরিয়া হয়ে উঠি। তাদের কোনো পোস্টের কমেন্ট বক্সে বন্ধু হওয়ার জোর আবদারই বলে দেয় তাদের বন্ধু হওয়ার জন্য আমরা কতোটা ক্রেইজি হয়ে থাকি। হয়তো তাদের বন্ধু হতে পারলে নিজের মধ্যে অন্যরকম একটা ভাবসাব আসবে। তাই তো এতো উন্মাদনা।

আচ্ছা! আপনার কি কখনো তার বন্ধু হতে মন চেয়েছে যিনি আপনাকে সৃষ্টি না করলে আজকের আপনি আর ‘আপনি’ হতেন না, যিনি আপনাকে প্রতিদিন অসংখ্য মারা যাওয়া মানুষের ভিড়ে বাঁচিয়ে না রাখলে আজ দুনিয়ার সেলেব্রিটিদের বন্ধু হওয়ার আকাঙ্ক্ষাও প্রকাশ করতে পারতেন না? কী, তার বন্ধু হতে মন চায় নি?
হয়তো সেলিব্রিটিদের পেছনে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে আর আল্লাহর আনুগত্য থেকে দূরে সরে যাওয়াতে নিজের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর বন্ধু হওয়া যায় এমন ভাবনাই আপনার মাথায় কখনো আসেনি!

দেখুন, দুনিয়ার এলিট শ্রেণীর কোনো ব্যক্তি যদি আপনাকে তার বন্ধু হিসেবে স্বীকৃতি দেয় তবে নিশ্চয়ই আপনি অনেক বেশি সম্মানিত বোধ করবেন, আনন্দিত হবেন। এছাড়া, বিপদ আপদে তার বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা পাওয়ার একটা বড়ো আশার জায়গা তৈরি হবে। কারণ বিত্তশালী বন্ধু বলে কথা। এবার সেই জায়গায় যদি স্বয়ং মহান রাব্বুল আলামিন আপনাকে তার বন্ধুর স্বীকৃতি দেন তবে বিপদ আপদে সাহায্য পাওয়া নিয়ে আপনার কতো বড়ো আশার জায়গা তৈরি হবে তা কি আপনি ভাবতে পারছেন?

দুনিয়ার সামান্য প্রভাবশালী কেউ আপনার বন্ধু হলে যেখানে আপনি বিভিন্নভাবে নিজেকে নিরাপদ ভাবেন সেখানে দুনিয়া ও আখিরাতের সৃষ্টিকর্তা যার বন্ধু হয়ে যান তার কি উভয় জাহানের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো টেনশন থাকার কথা? নিশ্চয়ই না। সেজন্য আমাদেরকে আল্লাহর বন্ধু হওয়ার উপায় খুঁজতে হবে।

দুনিয়ার বিখ্যাত মানুষ যেমন কারো কোনো গুণে মুগ্ধ হয়ে তার বন্ধুর মর্যাদা দেয় ঠিক তেমনি আল্লাহ তা’য়ালাও তার বান্দার স্পেশাল গুণের খাতিরে তাকে বন্ধুর স্বীকৃতি দেন, এমনি এমনি না। আল্লাহর বন্ধু তথা আল্লাহর ওলী হতে হলে আপনাকে খুব আমলদার হতে হবে-ব্যাপারটি মোটেও তেমন নয়।

আল্লাহর ওলী হওয়ার জন্য আপনাকে দুটো গুণ অর্জন করতে হবে। সে দুটো গুণ উল্লেখ করার পূর্বে আল্লাহ বলেছেন, যারা আল্লাহর বন্ধু তাদের কোনো ভয় থাকবে না এবং তারা চিন্তিতও হবে না। এর মানে কী জানেন? এর মানে হচ্ছে, জীবনের যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহ তাদের সহায় হবেনই। বিশেষ করে কিয়ামতের কঠিন দিবসে যখন মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে দিকবিদিক ছুটঁতে থাকবে, নিজের পরিণতির কথা ভেবে হয়রান হবে, দুশ্চিন্তায় মুখ কালো হয়ে আসবে তখন আল্লাহর বন্ধুদের মনে কোনো ডর থাকবে না, থাকবে না কোনো পেরেশানিও। সেদিন আল্লাহ তাদের মনের সমস্ত ভয়, পেরেশান দূর করে তাদের পাশে থাকবেন। সুবহান’আল্লাহ! এর চেয়ে বড়ো সাহায্য আর কী হতে পারে, ভাবুন তো।

তারপর আল্লাহ তার ওলী অর্থাৎ বন্ধুর মর্যাদা পাওয়া বান্দাদের দুটি বিশেষ গুণের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, তারাই হচ্ছে আমার বন্ধু যারা,

১। আল্লাহকে দৃঢ় বিশ্বাস করে অর্থাৎ ঈমান আনে।
২। এবং আল্লাহকে ভয় করে।

এক আল্লাহর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস আনার পর দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজ করার সময় এটা চিন্তা করা যে, আল্লাহ আমাকে দেখছেন, দুনিয়ার মানুষকে ফাঁকি দেওয়া গেলেও আমার আল্লাহকে ফাঁকি দেওয়া যাবে না, আল্লাহর নিকট একদিন আমার সকল কাজের পূঙ্খানুপুঙ্খভাবে জবাবদিহি করতে হবে – এইসব বিষয় মাথায় রেখে আল্লাহর সন্তুষ্টির ওপর চলার নামই হচ্ছে আল্লাহকে ভয় করা। মোটকথা, শিরক মুক্ত থেকে যারা আল্লাহর ভয়কে নিজের অন্তরে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলতে পারে তারাই হচ্ছে আল্লাহর ওলী।

আল্লাহ তার বন্ধুদের পুরস্কারের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, তাদের জন্য দুনিয়ার জীবনে যেমন রয়েছে সুসংবাদ তেমনি পরকালের জীবনেও রয়েছে সুসংবাদ; আল্লাহ তা’য়ালার কথার কোনো রদবদল হয় না; আর এটাই হচ্ছে মহাসাফল্য।1

দুনিয়ার কোনো প্রভাবশালীর বন্ধু হতে যদি আমাদের এতো এতো আগ্রহ থাকে তবে দুনিয়ার সকল প্রভাবশালীর সৃষ্টিকর্তা মহান রাব্বুল আলামিনের বন্ধু হওয়ার জন্য আমাদের কোন পর্যায়ের আগ্রহ থাকার কথা- তা নিয়ে ভাবা দরকার।আল্লাহকে নিজের বন্ধু হিসেবে পেয়ে গেলে জীবনে কি আর কিছু লাগে? একজন মুসলিমের উচিত সেলিব্রেটিদের বন্ধু হওয়ার জন্য পাগল না হয়ে, রবের বন্ধু হওয়ার জন্য পাগল হওয়া। প্রকৃত বুদ্ধিমান তো সে, যে তার জীবনটাকে সেভাবেই সাজাতে ব্যস্ত থাকে যেভাবে সাজালে আল্লাহর বন্ধুর স্বীকৃতি পাওয়া যায়। আর আল্লাহর বন্ধু হতে পারাটাই তো বড়ো সফলতা।

  1. সূরা ইউনূস, আয়াত নং : ৬২-৬৪ ↩︎

লিখেছেন

রাকিব আলী

পরকালীন তথা স্থায়ী জীবনের লক্ষ্যে নিজেকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করছি। নিজে হেদায়েতের ওপর অটল থাকার পাশাপাশি অন্যেদেরকেও হেদায়েতের দিকে আহবান করা তথা পথ হারাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনাই আমার লেখালেখির মূল উদ্দেশ্য।

All Posts

পরকালীন তথা স্থায়ী জীবনের লক্ষ্যে নিজেকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করছি। নিজে হেদায়েতের ওপর অটল থাকার পাশাপাশি অন্যেদেরকেও হেদায়েতের দিকে আহবান করা তথা পথ হারাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনাই আমার লেখালেখির মূল উদ্দেশ্য।

Exit mobile version