আজানের জবাব: পদ্ধতি ও ফজিলত
আজানের জবাব দেয়ার পদ্ধতি কি?
আজান শুনে তার জবাব না দিলে কি তার নামাজ হবে না?
আজানের জবাব দেয়া অত্যন্ত ফজিলত পূর্ণ আমল-যা বিজ্ঞ আলেমদের সর্বসম্মতি মতে মুস্তাহাব। ইবনে কুদামা বলেন, “এটি মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে আহলুল ইলমদের মধ্যে কোনও দ্বিমত আছে বলে জানি না।” [আল মুগনি ১/৫৯১]
এ বিষয়ে হাদিস হল, আবু সাঈদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِذَا سَمِعْتُمُ النِّدَاءَ فَقُولُوا مِثْلَ ما يَقُولُ الْمُؤَذِّنُ
“যখন তোমরা আজান শুনতে পাও তখন মুয়াজ্জিন যা বলে তোমরাও তার অনুরূপ বলবে।” [সহীহ বুখারি (ই.ফা.) ১০/ আজান, পরিচ্ছেদ: ৩৯৯। মুয়াজ্জিনের আজান শুনলে যা বলতে হয়।]
অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
মুয়াজ্জিন যখন বলল,
حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ
“হাইয়া আ’লাস সালাহ।” (সালাতে এসো)
তখন তিনি [মুয়াবিয়া রা.) বললেন,
لَا حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ
“লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।” (আল্লাহর শক্তি ব্যতিরেকে কোন ভালো কাজ সম্পাদন করার এবং কোন মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার সামর্থ্য নেই)
তারপর তিনি বললেন, তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমরা এরূপ বলতে শুনেছি।” [সহীহ বুখারি (ইফা) অধ্যায়: ১০/ আজান, পরিচ্ছেদ: ৩৯৯। মুয়াজ্জিনের আজান শুনলে যা বলতে হয়।]
অন্য হাদিসে আজান ও তার জবাবের পদ্ধতি আরও পরিষ্কার ভাবে এসেছে। যেমন:
عَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَالَ الْمُؤَذِّنُ اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ فَقَالَ أَحَدُكُمْ اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ، ثُمَّ قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، ثُمَّ قَالَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ قَالَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ، ثُمَّ قَالَ حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ قَالَ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ، ثُمَّ قَالَ حَيَّ عَلَى الْفَلاَحِ قَالَ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ، ثُمَّ قَالَ اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ قَالَ اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ، ثُمَّ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ مِنْ قَلْبِهِ دَخَلَ الْجَنَّةَ-
ওমর রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
যখন মুয়াজ্জিন বলে: ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ তখন যদি তোমাদের কেউ বলে ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’,
অতঃপর মুয়াজ্জিন বলে ‘আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সেও বলে ‘আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’,
মুয়াজ্জিন বলে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ সেও বলে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’,
এরপর মুয়াজ্জিন বলে, ‘হাইয়া আলাছ সালাহ’ তখন সে বলে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’,
পুনরায় যখন মুয়াজ্জিন বলে ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’ সে বলে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’,
এর পরে যখন মুয়াজ্জিন বলে ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ সেও বলে ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’
অতঃপর যখন মুয়াজ্জিন বলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সেও বলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’।
আর এই বাক্যগুলি মনে-প্রাণে ভয়-ভীতি নিয়ে বলে তাহলে সে জান্নাতে যাবে।” [সহিহ মুসলিম]
আর ফজরের আজানের সময় মুয়াজ্জিন যখন বলবে, “আসসালাতু খাইরুম মিনান নাওম” (ঘুম থেকে সালাত উত্তম) তখন এর উত্তরে উপরোক্ত ১ম হাদিসের আলোকে হুবহু এ বাক্যটি বলতে হবে।
আমাদের সমাজে এর উত্তরে ‘সাদাকতা ও বারাকতা’ (অথবা বারাকতা) বলার প্রচলন রয়েছে। কিন্তু এর পক্ষে কোনও দলিল নাই। [ইবনে হাজার-আত তালখিসুল হাবীর ১/৩৭৮]
يقول الحافظ ابن حجر رحمه الله “التلخيص الحبير” (1/378) : ” لا أصل لما ذكره في ( الصلاة خير من النوم )
অত:এব যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন, আজানের ধ্বনি কর্ণ কুহুরে ভেসে এলে সুন্নত পালনার্থে আজানের জবাব দেয়ার চেষ্টা করা কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে অলসতা করা উচিত নয়। কেউ যদি জবাব দেয় তাহলে সে সুন্নতের উপর আমল করার কারণে সওয়াব পাবে কিন্তু না দিলে কোনও গুনাহ নেই। তবে জবাব দেয়ার সাথে সালাত শুদ্ধ হওয়ার কোনও সম্পর্ক নাই। কেননা আজানের জবাব দেয়া এবং সালাত প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র আমল। একটি অপরটির উপর নির্ভরশীল নয়। সুতরাং কেউ যদি আজানের জবাব না দেয় তাতেও সালাতের কোনও ক্ষতি হবে না ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহু আলাম।