আগুন থেকে রক্ষা পাওয়া বাড়িটি
আজকের পর্বে একটি শহরে আগুন লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে একজন বিশ্বাসীর দু’আয় আল্লাহর প্রতি প্রবল আস্থা প্রতিফলিত হয়েছে।
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
মোটামুটি উচ্চারণ : বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়া দুররু মাআ’সমিহি শাইয়ূন ফিল আরদি ওয়ালা ফিসসামায়ি ওয়া হুয়াস সামিউল আলিম।
অর্থ : [আমি আমার দিন বা রাতের সূচনা করছি] ওই আল্লাহর নামে যার নামের সঙ্গে আসমান জমিনের কোনো কিছু কোনো ধরণের ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বাজ্ঞ।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষের নিখুঁত প্রার্থনার প্রকৃত উদ্দেশ্যই বিফল হয়ে যায়, যদি তাদের দু’আয় তারা যা বলছে তা বিশ্বাস না করে। ইবনে কাইয়্যুম (রহ.) বলেছেন: ‘আপনার যদি সত্যিই আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল এবং পরিপূর্ণ আস্থা থাকে, তাহলে আপনি পাহাড়কেও সরিয়ে ফেলতে পারবেন।’
আবূ মূসা আল-আশআরী (রা:) ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন, তিনি বসরায় (ইরাক) এই ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলেন। তিনি দেখলেন পুরো মহল্লায় আগুন লেগে গেছে। তাই লোকেরা বাজারে গিয়ে আশেপাশের বাসিন্দাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের বাড়িতে ফিরে নিজ বাড়ি রক্ষা করার ব্যবস্থা করতে বলল। কিন্তু বাজারে এমন একজন লোকের সাথে তাদের সাক্ষাৎ ঘটলো যাকে দ্রুত বাড়ি ফিরে যেতে বললে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আমার বাড়ি পুড়ে যাওয়ার ব্যাপারে আমি চিন্তিত নই।’ কেন চিন্তিত নন জানতে চাইলে লোকটি বললেন, ‘আমি আমার প্রভুর কাছে শপথ করেছি যে এটি পুড়ে যাবে না’, অর্থাৎ লোকটি তার দু’আতে এতটাই আত্মবিশ্বাসী এবং এতটাই আন্তরিক ছিলেন যে তিনি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেছিলেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা তার ঘরটি পুড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করবেন।
অবশেষে, আশেপাশের সমস্ত মহল্লা পুড়ে যাওয়ার পরে এবং ধোঁয়া পরিষ্কার হওয়ার পরে, দেখা গেল ওই লোকটির বাড়ি ছাড়া সমস্ত বাড়িই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আবূ মূসা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুলকে বলতে শুনেছি যে, ‘আমার উম্মতের মধ্যে উস্কোখুস্কো চুল ও এলোমেলো পোশাকের এমন কিছু লোক রয়েছে যাদেরকে সমাজে অবজ্ঞার চোখে দেখা হয়; সম্পদ এবং অবস্থান পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের জাহির করার মত কিছুই তাদের নেই, কিন্তু যদি তারা তাদের রবের নামে শপথ করে, তাহলে আল্লাহ তাদের শপথ পূর্ণ করেন।’
আরেকটি হাদিসে এসেছে আবু হুরাইরা (রা:) হতে বর্ণিত, রাসুল (ﷺ) বলেছেন,
“বহু লোক আছে যাদের মাথা উস্কোখুস্কো ধূলি ধূসরিত, যাদের দরজা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় (কিন্তু সে আল্লাহর নিকট এতো প্রিয় যে) সে যদি আল্লাহর নামে কসম করে, আল্লাহ তা পূর্ণ করেন।
[সহি মুসলিম: ২৬২২]
এই ধারণার একটি অত্যন্ত শক্তিশালী উদাহরণ হল আল্লাহ সবচেয়ে সাধারণ মানুষের কাছে অভিগম্য, সেই সমস্ত মানুষ যাদের কিছুই নেই এবং যারা সমাজে অবহেলিত। কিছু মানুষের হয়তো এই পৃথিবীতে তেমন কোন ক্ষমতা নেই, এই অর্থে তাদের কোন সম্মানও নেই, কোন অর্থ-সামাজিক অবস্থান নেই, বিশেষ করে একটি সামন্ততান্ত্রিক সমাজে। সমাজে তাদের জন্য এমন কোন শ্রেণী নেই যা তাদের রক্ষা করবে, বস্তুত তারা নিপীড়িত, সুবিধাবঞ্চিত এবং সংখ্যালঘুদের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু সর্বশক্তিমান আল্লাহ আল-ক্বাদির, আল-মুক্তাদিরের কাছে তাদের প্রবেশাধিকার রয়েছে। যদি তারা সত্যিই তাদের দু’আতে আস্থা রাখে, এবং তারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালার কাছে আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করে তবে আল্লাহ অবশ্যই তাদের প্রার্থনাকে সম্মান করেন।
এ প্রসঙ্গে আরো একটি বর্ণনা রয়েছে যেটি সাহাবায়ে কেরামের মহান আলেম ও মুফতি আবু দারদার (রাঃ) সাথে ঘটেছিল। বসরার লোকটির মতো তারও আশেপাশের এলাকা পুড়ে গিয়েছিল, কিন্তু তার বাড়িটি ধ্বংস হয়নি। তিনি তার গৃহ রক্ষার যে কারণটি বর্ণনা করেছিলেন তা হল, তিনি তার প্রভুর কাছে একটি দু’আ করেছিলেন যা রাসুল (ﷺ) তাকে শিখিয়েছিলেন। দু’আটি হল –
‘[আমি আমার দিন বা রাতের সূচনা করছি] ওই আল্লাহর নামে যার নামের সঙ্গে আসমান জমিনের কোনো কিছু কোনো ধরণের ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বাজ্ঞ।
আবু দারদা (রাঃ) বলেন, ‘রাসুল (ﷺ) আমাদেরকে প্রতিদিন সকালে তিনবার এবং সন্ধ্যায় তিনবার এই দু‘আ করতে শিখিয়েছেন।
[আবু দাউদ:৫০৯০,তিরমিজি: ৩৩৮৮,ইবনে মাজাহ:৩৮৬৯]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা যেন আমাদেরকে আমাদের দু’আতে সত্যিকারের বিশ্বাস স্থাপন করার এবং তাঁর শক্তির মাধ্যমে আমাদের দু’আর শক্তি প্রত্যক্ষ করার তৌফিক দান করেন।
হে আল্লাহ, আমাদেরকে সেই অর্থপূর্ণ বিশ্বাস গড়ে তোলার তৌফিক দিন যা এই পৃথিবীতে অলৌকিকতা এবং পরকালে পরিত্রাণের উৎসে রূপান্তরিত হয়।
আল্লাহুম্মা আমিন!