আদম আ. এবং হাওয়া আ.-এর বিয়ে এবং মোহর
আদম আ. এবং হাওয়া আ.-এর বিয়ে কে পড়িয়েছেন এবং তাদের বিয়ের মোহর কত ছিল?
আল্লাহ তাআলা মহাগ্রন্থ আল কুরআনে হাওয়া আ. কে আদম আ. এর স্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন,
وَقُلْنَا يَا آدَمُ اسْكُنْ أَنتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ وَكُلَا مِنْهَا رَغَدًا حَيْثُ شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هَـٰذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ الظَّالِمِينَ
"এবং আমি আদমকে বললাম যে, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করতে থাক এবং ওখানে যা ইচ্ছা তৃপ্তিসহ খেতে থাক। কিন্তু এ গাছের নিকটবর্তী হয়ো না। অন্যথায় তোমরা যালিমদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়বে।"1
আদম আ. ও হাওয়া আ. এর বিয়ে ও স্বামী-স্ত্রীর হওয়ার ব্যাপারে এর চেয়ে বড় সাক্ষ্য আর কিছু হতে পারে না। সুতরাং এতটুকু জানাই আমাদের জন্য যথেষ্ট।
কিন্তু কে তাদের বিয়ে পড়িয়েছেন, তাদের মোহরানা কত ছিল এসব খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে কিছু হাদিস উল্লেখ করা হলেও বিজ্ঞ মুহাদ্দিসদের দৃষ্টিতে সেগুলোর পক্ষে নির্ভরযোগ্য ও প্রামাণ্য কোনও সূত্র নেই।
যেমন:
এ মর্মে কুসতুলানী কর্তৃক সংকলিত আল মাওয়াহেবুল লাদুন্নিয়াহ কিতাবে (১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ২৫) একটি হাদিস উল্লেখিত হয়েছে। তা হল,
أن الله ـ سبحانه ـ لما خَلق آدمَ خلق له حواءَ من ضِلَع من أضلاعه اليسرى وهو نائم فلما استيقظ ورآها سكَن إليها ومدّ يده إليها فمنعته الملائكةُ حتى يؤدِّي مهرَها، فقال: وما مهرُها؟ قالوا: تصلِّي على محمد ـ صلى الله عليه وسلم ـ ثلاثَ مرات.
“আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আদম আলাইহিস সালাম কে সৃষ্টি করলেন। অত:পর যখন তিনি ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন তখন তার বাম পাঁজরের একটি হাড্ডি থেকে হাওয়া আ. কে সৃষ্টি করলেন। তিনি ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে হাওয়াকে দেখে তিনি মনে প্রশান্তি অনুভব করলেন। তাই তাকে স্পর্শ করার জন্য হাত বাড়ালে ফেরেশতাগণ তাকে মোহর পরিশোধ না করা পর্যন্ত স্পর্শ করতে নিষেধ করলেন।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তাঁর মোহর কি?
ফেরেশতাগণ বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ৩ বার দরুদ পাঠ।”
ইবনুল জাওযি (মৃত্যু: ৭৯৫ হিজরি) তার ‘সালওয়াতুল আহযান’ কিতাবে উল্লেখ করেন,
أنها لما سمعتْ كلام الملائكة طلبت مَهرها من آدم، فسأل ربَّه كم يُعطيها؟ فقال: صل على حبيبي محمد بن عبد الله عشرين مرة، ففعل، وجاء في بعض الروايات أن اللهَ زوّجه إيّاها وخطب في ذلك خطبة.
“হাওয়া আ. ফেরেশতাদের কথোপকথন শোনার পর আদম আ. থেকে তার মোহর চাইলেন। তখন তিনি আল্লাহকে জিজ্ঞেস করলেন, কত মোহর দিবেন?
আল্লাহ বললেন, “তুমি আমার হাবিব মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ এর উপর ২০ বার দরুদ পাঠ করো।” তাই তিনি তাই করলেন।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, স্বয়ং আল্লাহই আদম-হাওয়ার বিয়ে পড়িয়েছেন এবং বিয়েতে খুতবা পাঠ করেছেন!
কিন্তু উক্ত গ্রন্থদ্বয় এসব হাদিসের কোনও সনদ (বর্ণনা সূত্র) উল্লেখ করেন নি বা এগুলো গ্রহণযোগ্য-অগ্রহনযোগ্য হওয়ার ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেন নি।
কোন কোন বর্ণনায়, ১০০ বার দরূদ পড়ার কথাও এসেছে। আরও বলা হয়েছে, ৭০ বার দরুদ পাঠ করার পর তার নি:শ্বাস শেষ হওয়ায় আল্লাহ তাআলা ৩০ বার দরুদ পড়া বাকি রেখেছেন। আর সেখান থেকেই মোহরকে দুভাগ করা হয়েছে: একভাগ নগদ আর একভাগ বাকি।
বিশিষ্ট মুহাদ্দিস আল্লামা শাইখ রশিদ রেজা রহ. বলেন,
ما ذُكِرَ في ذلك كذب صريح لا حاجة لإطالة الكلام في رده
“এ ব্যাপারে যে সব কথা বলা হয়েছে সেগুলো স্পষ্টই মিথ্যাচার। সুতরাং তার জবাব দেয়ার ক্ষেত্রে লম্বা আলোচনার প্রয়োজন নাই।” আর তিনি, ৩ বা ২০ বার দরুদ পড়ার হাদিসকে জইফ বা দুর্বল বলেছেন।
আদম আ. এর বিয়েতে মোহরের রেওয়ায়েতের শব্দ এবং মোহরের পরিমাণ নিয়ে কয়েক ধরণের কথা পাওয়া যায়। যেমন:
– কোন বর্ণনায় তিনবার।
– কোন বর্ণনায় দশবার।
– কোন বর্ণনায় বিশবার।
– আবার কোথাও একশবার।
– এমনকি এক হাজারবার দরূদ পড়ার কথাও পাওয়া যায়।
– আবার শত বা হাজারের বর্ণনায় এক শ্বাসে পড়ে শেষ করার শর্তও রয়েছে। এবং এমন কথাও আছে যে, হযরত আদম আ. সত্তর বা পাঁচশ বার পর্যন্ত একশ্বাসে পড়তে পেরেছেন। তারপর আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, এটা মোহরে মুয়াজ্জাল (বিয়ের সময় তাৎক্ষণিক আদায়যোগ্য মোহর) আর বাকি মোহর তোমার দায়িত্বে রইল পরে আদায় করতে হবে।
এগুলো কোনটার পক্ষেই হাদিস নাই। সুতরাং এসব বর্ণনার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করারও প্রয়োজন নেই।2
মোটকথা, আল্লাহ তাআলা মহাগ্রন্থ আল কুরআনে হাওয়া আ. কে আদম আ. এর স্ত্রী হিসেবে সম্বোধন করেছেন। তাদের বিয়ের ক্ষেত্রে এতটুকু জানাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু বিয়ে সংক্রান্ত বিস্তারিত কোন কিছুই বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত নয়।
তাছাড়া এসব বিষয় আমাদের ঈমান, আমল ও আহকামের সাথে মোটেও সম্পৃক্ত নয়। তাই এসব বিষয় না জানলেও ইনশাআল্লাহ আমাদের কোন ক্ষতি হবে না। আল্লাহু আলাম।
والله أعلم بالصواب
- সূরা বাকারা: ৩৫ ↩︎
- সূত্র, আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াহ ১/৫০, বুসতানুল ওয়ায়িজীন: ৪৭৮, ইআনাতুত ত্বালিবীন ৩/৩৯৫। অনুবাদ : মাওলানা মাজিদুর রহমান ↩︎