আদম আলাইহিস সালাম-এর বয়স কত ছিল

আদি পিতা, প্রথম মানব এবং আল্লাহর প্রথম নবি আদম আলাইহিস সালাম-এর জন্ম বার, মৃত্যু বার এবং বয়স সংক্রান্ত সহিহ হাদিসে যতটুকু বর্ণনা পাওয়া যায় তা হল:
আদম আলাইহিস সালাম-এর জন্ম ও মৃত্যু উভয়টি ছিল জুমার দিন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

خيرُ يومٍ طَلعَتْ فيه الشَّمسُ يومُ الجُمُعة؛ فيه خَلَقَ اللهُ آدَمَ، وفيه أُدْخِلَ الجَنَّةَ، وفيه أُخرِجَ منها، ولا تقومُ السَّاعةُ إلَّا في يومِ الجُمُعة
“দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম দিন হল, জুমার দিন। এ দিনেই আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিনেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে, এদিনই তাঁকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে এবং এ ছাড়া অন্য কোন দিন কেয়ামত সংঘটিত হবে না।”
[মুওয়াত্তা মালিক, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/১৩৫৯; ‘সালাত’ অধ্যায়। সনদ সহীহ]

আদম আ. ৯৬০ বছর জীবিত ছিলেন:
আদম আলাইহিস সালাম-কে এক হাজার বছর বয়স দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রূহের জগতে দাউদ আলাইহিস সালাম-এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তিনি নিজের বয়স থেকে তাঁকে ৪০ বছর দান করেন। ফলে অবশিষ্ট ৯৬০ বছর তিনি জীবিত ছিলেন। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ مَسَحَ ظَهْرَهُ، فَسَقَطَ مِنْ ظَهْرِهِ كُلُّ نَسَمَةٍ هُوَ خَالِقُهَا مِنْ ذُرِّيَّتِهِ إِلَى يَوْمِ القِيَامَةِ، وَجَعَلَ بَيْنَ عَيْنَيْ كُلِّ إِنْسَانٍ مِنْهُمْ وَبِيصًا مِنْ نُورٍ، ثُمَّ عَرَضَهُمْ عَلَى آدَمَ.
فَقَالَ: أَيْ رَبِّ، مَنْ هَؤُلَاءِ؟
قَالَ: هَؤُلَاءِ ذُرِّيَّتُكَ.
فَرَأَى رَجُلًا مِنْهُمْ فَأَعْجَبَهُ وَبِيصُ مَا بَيْنَ عَيْنَيْهِ، فَقَالَ: أَيْ رَبِّ مَنْ هَذَا؟
فَقَالَ: هَذَا رَجُلٌ مِنْ آخِرِ الأُمَمِ مِنْ ذُرِّيَّتِكَ يُقَالُ لَهُ دَاوُدُ.
فَقَالَ: رَبِّ كَمْ جَعَلْتَ عُمْرَهُ؟
قَالَ: سِتِّينَ سَنَةً.
قَالَ: أَيْ رَبِّ، زِدْهُ مِنْ عُمْرِي أَرْبَعِينَ سَنَةً.
فَلَمَّا قُضِيَ عُمْرُ آدَمَ جَاءَهُ مَلَكُ المَوْتِ، فَقَالَ: أَوَلَمْ يَبْقَ مِنْ عُمْرِي أَرْبَعُونَ سَنَةً؟ قَالَ: أَوَلَمْ تُعْطِهَا ابْنَكَ دَاوُدَ؟
قَالَ: فَجَحَدَ آدَمُ فَجَحَدَتْ ذُرِّيَّتُهُ، وَنُسِّيَ آدَمُ فَنُسِّيَتْ ذُرِّيَّتُهُ، وَخَطِئَ آدَمُ فَخَطِئَتْ ذُرِّيَّتُهُ
“আল্লাহ তাআলা যখন আদম আলাইহিস সালাম-কে সৃষ্টি করলেন তখন তাঁর পিঠের উপর হাত বুলালেন। এতে তাঁর পিঠ হতে তাঁর সমস্ত সন্তান জীবন্ত বেরিয়ে পড়ল যা কিয়ামত অবধি তিনি সৃষ্টি করবেন। তন্মধ্যে প্রত্যেকের দুই চোখের মধ্যস্থলে নূরের চমক ছিল। অতঃপর সকলকে আদম আলাইহিস সালাম-এর সামনে পেশ করলেন।
(এদেরকে দেখে) আদম আলাইহিস সালাম জিজ্ঞেস করলেন, হে রব, এরা কারা?
(প্রত্যুত্তরে) রব বললেন, “এরা সব তোমার সন্তান।”
এমন সময় আদম আলাইহিস সালাম তাঁদের একজনকে দেখে তার খুব ভালো লাগলো। তাঁরও দুই চোখের মধ্যস্থলে নূরের চমক ছিল।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে রব, এ ব্যক্তি কে?
তিনি বলেন, (তোমার সন্তান) দাউদ।

আদম আলাইহিস সালাম প্রশ্ন করলেন, হে প্রভু, তাঁর বয়স কত নির্ধারণ করেছেন?

তিনি বললেন: ষাট বছর।
আদম আ. বললেন: হে প্রভু, (অনুগ্রহ করে) আমার বয়স থেকে তাঁকে চল্লিশ বছর দান করুন।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আদম আলাইহিস সালাম-এর বয়স ফুরিয়ে গেলে এবং ঐ চল্লিশ বছর বাকি থাকতে মালাকুল মওত এসে তাঁর কাছে উপস্থিত হলে আদম আলাইহিস সালাম তাঁকে বললেন, এখনো তো আমার বয়স চল্লিশ বছর বাকি আছে!
মালাকুল মওত বললেন: আপনি কি আপনার বয়সের চল্লিশ বছর আপনার সন্তান দাউদ আলাইহিস সালাম-কে দান করেননি?
আদম (আলাইহিস সালাম) তা অস্বীকার করলেন। এ কারণে তাঁর সন্তানরাও অস্বীকার করে। আদম আলাইহিস সালাম (তার ওয়াদা) ভুলে গিয়েছিলেন। (তিনি জান্নাতে নিষিদ্ধ গাছ থেকে খেয়ে ফেলেছিলেন।) এ কারণে তাঁর সন্তানরাও ভুলে যায়। আদম আলাইহিস সালাম-এর ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছিল। এ কারণে ত্রুটি-বিচ্যুতি সন্তানদের দ্বারাও হয়ে থাকে।”
[তিরমিযী ৩০৭৬-হাসান সহীহ, মুসতাদরাকে হাকিম ২/৫৮৫-৮৬। তিনি বলেন, এটি ইমাম মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহিহ আর ইমাম জাহাবি এ বিষয় একমত পোষণ করেন।]

এছাড়াও ইমাম ইবনুল কাসির রচিত আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া (আদি-অন্ত) গ্রন্থে তাঁর মৃত্যু সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
আল্লাহু আলাম।

Exit mobile version