খলিফা মুক্তাদির বিল্লাহ মারা যাবার পর তার স্ত্রী হুররা তাদের বাবুর্চিকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন!
রাণীর এমন প্রস্তাবে বাবুর্চি বিস্মিত হন। তিনি ভেবে পেলেন না খলিফার স্ত্রী তাকে বিয়ে করবেন কেনো?
তার নাম ছিলো আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে জাফর। তিনি ছিলেন খলিফা মুক্তাদির বিল্লাহর রান্নাঘরের দায়িত্বে। তিনি রান্নাবান্না করতেন, কিছুদিন পর তার প্রমোশন হলে তিনি রান্নাঘরের চীফ হন।
বিশ্বস্ততা ও আমানতদারিতার জন্য খলিফার স্ত্রী তাকে উকিল হিশেবে নিযুক্ত করেন। খলিফার মৃত্যুর পর গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে তিনি খলিফার স্ত্রীর সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করতেন।
তার মেধা দেখে হুররাহ তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন!
আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে জাফর এমন প্রস্তাব শুনে চোখ কপালে তুললেন! তিনি বললেন, “কোথায় আপনি আর কোথায় আমি!? আমি একজন দিনমজুর, আমার বাবা একজন কাপড় ব্যবসায়ী। আর আপনি প্রয়াত খলিফার স্ত্রী, একজন গোত্রপ্রধানের মেয়ে। আপনার সাথে কিভাবে আমার বিয়ে হয়?”
খলিফার স্ত্রী স্বামীর ইন্তেকালের পর বিপুল সম্পত্তির মালিক হন। সেখান থেকে তিনি মোটা অংকের সম্পদ দেন আবু বকরকে। বললেন, “এখন তো সমান-সমান?”
আবু বকর পরিবারকে গিয়ে বলেন। পরিবারের সবাই অবাক। কেউ কেউ ভেবেছিলো হুররাহ তার সাথে মজা করছেন। কিন্তু, আবু বকর জানান- “আমি যেন তাকে বিয়ে করতে পারি, এজন্য বিপুল অর্থ তিনি আমাকে দিয়েছেন। এই দেখো…।”
আবু বকরের সাথে বিয়ে হলো খলিফার স্ত্রীর। সেই বিয়েতে বাগদাদের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত হলেন। বিয়েতে নবদম্পতির জন্য অসংখ্য গিফট নিয়ে আসেন অতিথিবৃন্দ।
দুর্ভাগ্যবশত, বিয়ের কিছুদিন পর হুররাহ ইন্তেকাল করেন। সৌভাগ্যবতী স্ত্রীকে হারান আবু বকর। স্ত্রীর সম্পত্তির ‘উত্তরাধিকারী’ হলেন আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে জাফর!
৩ লক্ষ দিনার পেলেন তিনি। বর্তমান সময়ের কয়েকশো কোটি টাকা!
আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে জাফরের সাথে এই ঘটনাগুলো ঘটে তার জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে। পরবর্তীতে তিনি একজন বড়ো আলেম হন।
তৎকালীন সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম হন। বিশ্ববিখ্যাত আলেমগণ ছিলেন তার ছাত্র। যেমন: ইমাম দারাকুতনি, ইমাম মুহাম্মদ ইবনু জারির তাবারী (তারিখে তাবারী, তাফসীরে তাবারীর লেখক)।
আলেম উদ্যোক্তাদের সোনালী অতীত, কাজি আতহার মোবারকপুরী, পৃষ্ঠা ৭৭-৭৮।