Writing

আঙ্গুলের ডগা ঘষে কি ফিঙ্গারপ্রিন্ট তুলে ফেলা যায়

হঠাৎ কোন দেয়ালে বা, খসখসে কোথাও ঘষা লেগে কিংবা ল্যাবে কাজ করতে গিয়ে এসিড পরে আঙ্গুলের ছাপ হারিয়ে গেল। রান্না করতে গিয়ে আগুনের তাপে খানিকটা পুড়ে নষ্ট হয়ে গেল আঙ্গুলের চামড়ার উপরের অংশ। আর সাথে সাথে আপনি হারিয়ে ফেললেন আপনার সবচেয়ে শরীরের একটি শক্তিশালী ডাটা যা ফিঙ্গারপ্রিন্ট নামে পরিচিত।

এই ফিঙ্গারপ্রিন্ট এতোটাই শক্তিশালী একটি বায়োমেট্রিক ডাটা যার উপর প্রতিনিয়ত নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে আমাদের বর্তমান প্রযুক্তি জীবন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, এমনকি আমাদের দৈনন্দিন জীবন‌ও‌। ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর ব্যবহার ব্যাতিত আপনার দৈনন্দিন কিছু কাজ হয়ে উঠবে কষ্টসাধ্য যেমনঃ মোবাইল ফোনের লক খোলা, সিম কার্ড কেনা, ব্যাংক থেকে টাকা তোলা, এমনকি আপনার নাগরিক অধিকার ভোট প্রদানেও আপনি বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হবেন। সবেমাত্র প্রযুক্তি যাত্রাপথ শুরু, অদূর ভবিষ্যতে বাসা বাড়ি, টাকা পে করা, দোকানে, অফিসে লকার হিসেবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ই ইউজ হবে তাতো সহজেই অনুমেয়।

এমন এক সময়ে এসে যদি হঠাৎ দুর্ঘটনায় ফিঙ্গারপ্রিন্ট নষ্ট হয়ে যায় কতটা বিপাকেই না পড়তে হবে! কিন্তু এমনটা হ‌ওয়া আদৌ সম্ভব কিনা কখনো ভেবে দেখেছেন?
আল্লাহ তায়ালার অতি আশ্চর্য এই সুনিপুণ সৃষ্টির রহস্য জানলে আপনি অবাক না হয়ে পারবেন না। বয়সের সাথে সাথে কারো চেহারা, আকৃতি, কণ্ঠস্বর, স্বাক্ষর এসব পরিবর্তন হতে পারে। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে পরিবর্তন বা নকল করতে পারে কিন্তু প্রত্যেকেটি মানুষের আলাদা আলাদা আঙ্গুলের ছাপ সারাজীবনে কখনো পরিবর্তন হয় না। এমনকি এক‌ই মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেয়া দুটো যমজ বাচ্চার ডিএন‌এ প্রোফাইল এক‌ই হলেও ফিঙ্গারপ্রিন্ট কিন্তু আলাদা আলাদা।

প্রতিটি মানুষের সাথে অপরিবর্তনীয় এই আঙ্গুলের ছাপ ঘষা লেগে, আগুনের তাপে, খানিকটা পুড়ে কিংবা এসিডে দগ্ধ হয়ে নষ্ট হয়ে যায় না। ফিঙ্গারপ্রিন্ট শুধু চামড়ার উপরের‌ই নয়, ভেতরের বৈশিষ্ট্য‌ও বটে। মানুষের চামড়ার বাইরের যে অংশটুকু দেখতে পাই তা এপিডার্মিস, এর নিচে আছে ডার্মিস এবং আরো ভেতরে হাইপোডার্মিস। আঙ্গুলের ছাপ রুপে এপিডার্মিসকেই যদিও আমরা দেখে থাকি কিন্তু তা মূলত সৃষ্টি হয়েছে ডার্মিসের বৈশিষ্ট্যের উপর, যা চামড়ার মধ্যবর্তী অংশ। তাই চামড়ার বাইরের অংশে যেকোন কারণে ক্ষয় হয়, খানিকটা পুড়ে যায় বা ঝলসে যায়, তাতে আঙ্গুলের ছাপ বিলীন হয়ে যায়, যে পরিবর্তন সাময়িক। যখন সেই ক্ষতি আবার হিলিং হয়ে যায় তখন আঙ্গুলের ছাপ আবার পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসে।

শুধু তাই নয় মানুষ মারা যাবার পরেও প্রায় বহুদিন পর্যন্ত ফিঙ্গারপ্রিন্ট অক্ষত থেকে যায়। মানুষের শরীরে পচন ধরে চামড়ার বাইরে অংশ নষ্ট হয়ে গেলেও চামড়ার ভেতরের অংশ থেকে ফরেনসিক বিভাগ হিস্টোলজিক্যাল এক্সামিনেশন এর মাধ্যমে আঙুলের ছাপ নির্ণয় করতে পারেন।
অপরাধ দমনে আজকাল ফিঙ্গারপ্রিন্টের ব্যবহার কতটা কার্যকর তা আমাদের কারো অজানা নয়। পৃথিবীর বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষের ভীড় থেকেও একজন সুনির্দিষ্ট ব্যাক্তির ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর মাধ্যমে খুব সহজেই পরিচয় বের করা সম্ভব। এই পদ্ধতি অপরাধী সনাক্তকরন এবং বেওয়ারিশ লাশের পরিচয় বের করতে ব্যবহৃত হয়।

একজন ইংরেজ চিকিৎসক এবং অনুবীক্ষণ যন্ত্রবীদ Nehemiah Grew সর্বপ্রথম ১৬৬৮ সালে আঙ্গুলের ছাপের ধারণার উত্থাপন করেন। আরো বিভিন্ন বৈজ্ঞানিকদের গবেষণার ফলস্বরূপ ১৮৮০ সাল হতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর ব্যবহার শুরু হয়।

"মানুষ কি মনে করে আমি তার অস্থিসমূহ একত্রিত করতে পারবো না? অবশ্যই। আমি ওর আঙ্গুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত সুবিন্যস্ত করতে সক্ষম।"
কুর‌আন ৭৫:৩,৪

সুরা আল ক্বিয়ামাহ এর ৪ নাম্বার আয়াতে আঙ্গুলের ছাপের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা দিয়েছেন ১৪০০ বছর আগে, সুবাহানাল্লাহ।

বিভিন্ন পন্যদ্রব্য, ইলেকট্রনিক সামগ্রীর গায়ে গায়ে দেখবেন লম্বা লম্বা অনেকগুলো একত্রিত দাগ কিংবা বর্গাকৃতি কিছু সাংকেতিক চিহ্ন দেয়া থাকে যাকে আমরা বার কোড এবং QR code [Quick Response Code] হিসেবে চিনে থাকি। অল্প একটুখানি জায়গার ভেতর অনেক বেশি তথ্য জুড়ে দেবার জন্য এই কোড ব্যবহার করা হয়। যা পণ্যের আইডেন্টি ফিকেশন মার্ক এবং মূল্য, উৎপাদন ইত্যাদি তথ্যের সংরক্ষিত ছোট রুপ।

মহান আল্লাহ কত‌ সুনিপুণ করে আমাদের সৃষ্টি করেছেন। আমাদের শরীরের এমন কিছু বায়োমেট্রিক আইডেন্টি ফিকেশন মার্ক দিয়েছেন যা এতোটাই সতন্ত্র যে, পৃথিবীতে আপনার কাছে যেটা আছে তা আর কারো কাছেই নেই।
এতো সুন্দর, সুনিপুণ, নিঃখুত রুপে যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ।

নিশ্চয় মানুষকে আমি সৃষ্টি করেছি শ্রেষ্ঠতম-সুন্দর আকৃতিতে।"
কুরআন ৯৫: ৪

এতো কিছু জেনে তবুও আমাদের মস্তক কি সৃষ্টিকর্তার সিজদায় অবনত হবে না? আমরা কত‌ই না অকৃতজ্ঞ!

লিখেছেন

Picture of মোরশেদুল আলম মেহরাব

মোরশেদুল আলম মেহরাব

গল্প, উপন্যাসের ভীড়ে হারিয়ে প্রশ্নের বেড়াজালে ঈমান খোয়ানোর আগ মুহুর্তে সত্যের সন্ধান পাওয়া জ্ঞান পিপাসু যুবক।
মেডিকেল সায়েন্সের পড়া ক, খ, গ টুকুই আগলে রেখে বাকিটা জীবন তুলে ধরতে চান ইসলামের সৌন্দর্য্য।

All Posts

গল্প, উপন্যাসের ভীড়ে হারিয়ে প্রশ্নের বেড়াজালে ঈমান খোয়ানোর আগ মুহুর্তে সত্যের সন্ধান পাওয়া জ্ঞান পিপাসু যুবক।
মেডিকেল সায়েন্সের পড়া ক, খ, গ টুকুই আগলে রেখে বাকিটা জীবন তুলে ধরতে চান ইসলামের সৌন্দর্য্য।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture