Writing

কাছে আসার গল্প

“এক পাহাড় সমান ভালোবাসা নিয়ে এসেছিল সে আমার জীবনে। বলেছিল, এই হাতটা কখনো ছাড়বেনা সে। আজীবন থাকার বারংবার প্রতিজ্ঞা আর তার দেখানো বহু স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে আমি ভুলে গিয়েছিলাম অন্য সবাইকে। আমার জীবন মানেই সে, আমি মানেই প্রিয়তম। কিন্তু সময় – সে যেন এক নির্মম ইতিবৃত্ত! সময় গড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আমাদের মাঝের সম্পর্কে আসে ভীষণ তিক্ততা। এভাবেই তিক্ততার অবসান ঘটিয়ে একদিন সে আমাকে বিদায় জানায়।

অপ্রস্তুত আমি কেঁদে কেঁদে হাজারো বার তাকে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছি, কিন্তু সে আসেনি। সে মিথ্যা বলেছিলো আমাকে! এতগুলো দিন ক্রমাগত আমাকে ঠকিয়েছে! এসব ভাবতে ভাবতে চোখের জলে ভাসিয়ে দেই আমার সকল দুঃখ। দিনের পর দিনের এই প্রণয়কে পরিণয়ে নেবার প্রলোভন দেখিয়ে কতবার যে আমার শরীরে হানা দিয়েছে – সে আর বলে লাভ কী!

নিজের অসম্মান বৈ কিছু তো হবেনা বলে! বন্ধুমহলে সে আজ সাহসী যুবক বলে খ্যাত, আজকের সমাজে তো যে যত বেশি ভোগ করতে পারে, সেই তত বেশি সাহসী। দুই একবার তার বন্ধুদের পাশ দিয়ে রাস্তায় চলাচল হয়েছে আমার, তাদের অট্ট হাসি আর বাঁকানো অঙ্গভঙ্গি বারবার আমাকে পলায়ন করিয়েছে তাদের থেকে। লজ্জা আর ঘৃণায় মাঝেমধ্যে মনে হয় চলে যাই অনেক দূরে। ঘর থেকে বের হওয়াই আজ বিভীষিকা আমার কাছে। কয়েকবার ভেবেছিলাম, ভালোবাসা না থাকলে জীবনে কেমন করে বাঁচব?
এভাবে একটা নিকৃষ্ট অতীত নিয়ে আমি আর বাঁচতে চাই না।”

রাবেয়া, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার দেওয়া এই সুন্দর নেয়ামত “জীবন”-কে তুমি অপাত্রে দান করতে চাও? একটা ছেলের জন্য, কিছু লোকের তুচ্ছতাচ্ছিল্যের জন্য? জীবনের সবটা এখনো শেষ হয়নি। তাওবার দুয়ার আজও খোলা আছে। তুমি ফিরে যাও তোমার রবের কাছে। ওয়াল্লাহি! বিশাল এই ভূবনের রব্ব তোমাকে পরিত্যাগ করেননি; করবেনও না। তিনি নিশ্চয়ই তোমার তাওবা কবুল করে নিবেন। ভুলে যাও অতীতের সব দিন, তাওবা দিয়ে মুছে ফেলো সব কালির দাগ। জানো রাবেয়া, আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন।

তিনি তোমার অনুশোচনা সম্পর্কে জানেন সুতরাং তুমি পিছু হটো না। এটাও শয়তানের ওয়াসওয়াসা। তুমি গুনাহের দিকে তাকিওনা, তাকাও আর রহমানের বড়ত্বের দিকে। যিনার রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে রব তোমাকে সত্যের রাস্তায় আহবান করছেন; সাড়া দাও।

অবনত নয়নে রাবেয়া হঠাৎ বলে উঠলো, “সত্যি বলছো ফাতেমা? আমাকে আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন? এত গুনাহগার বান্দাকে আল্লাহ ক্ষমা করবেন তো? ঠিক আছে, আমি এত গুনাহের বোঝা নিয়েও দাঁড়াবো রবের সামনে। আমি ক্ষমা চেয়ে ফিরে আসব আলোর ভূবনে।”

বহুদিন হাসনাহেনা কুড়াইনি; অযত্ন অবহেলায় আমার প্রিয় গাছটা প্রায় হেলে পড়েছে। গাছে তবুও একটু পানি দিয়ে দিলাম, যদি গাছের শেষ রক্ষা হয়। বারান্দা থেকে রুমে ঢুকতেই ভাবছি, কতদিন হয়ে গেলো দখিনের জানালার পাশে বসে আকাশের তারা গুনিনা। মুঠোফোনের আলাপনের ব্যস্ততায় সময় হয়ে উঠেনি এতোদিন।

তবে, আজ বহুদিন পরে দখিনের জানালার ধারে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছি নানা কথা। কতই না ভ্রমে কেটে গেছে কয়েকটি বছর। ফাতেমা তো বলেছে, সহস্র গুনাহ কাঁধে নিয়ে তাওবার দুয়ারে আসলেও ফিরিয়ে দেননা আমার রব। তিনি নাকি মহা ক্ষমাশীল, অসীম দয়ালু। বহুদিন বাদে জায়নামাজে বসেছি আজ। অন্ধকারাচ্ছন্ন ভূবনে নিন্দ্রায় ডুব দিয়েছে সবাই; কিন্তু এই গুনাহগারীর চোখে আজ একবিন্দুও ঘুম নেই।

“ইয়া রব! আমি ফিরে এসেছি, ফিরে এসেছি তোমার দুয়ারে। আমার ভুলগুলোকে মাফ করে দাওনা আল্লাহ। তুমি ছাড়া আমার আপন কেও নেই। তুমি ছাড়া কেও আসেনি আমার আর্তনাদে সাড়া দিতে। আমি হতে পারতাম সমাজের কাছে লাঞ্চিত এক নারী, অথচ তুমি আমায় হেদায়েতের চাদরে মুড়িয়ে নিলে তোমার বান্দা রূপে। হারামের এই গভীর ফাঁদে প্রকাশ্য দিবালোকে সম্ভ্রম হারিয়ে আমি হতে পারতাম নিকৃষ্ট এক নারী। কিন্তু এর আগেই জীবনে নেমে এসেছে এক ফালি রোদ্দুর, একমুঠো আশার আলো।”

হ্যাঁ এভাবেই আজকের তরুণসমাজ বুঝে না বুঝে হারামের গভীর জলে ডুব দেয়। কখনো-বা সাহসী গল্পের রচনা হয়, কখনো পত্রিকায় ভেসে বেড়ায় নবাগত সন্তানের ডাস্টবিন থেকে পাওয়া লাশের তথ্য। কখনোবা ভালোবাসার মিথ্যে খেলায় মেতে ওঠা যুবতীর সম্ভ্রম হারানোর গল্প রচিত হয় ইন্টারনেটের নানা সাইটে, কখনো ধর্ষনের গল্প অংকিত হয় দেয়ালে দেয়ালে। কখনো ভালোবাসার ইতি ঘটে সাংসারিক পতনের মধ্য দিয়ে। এই গল্পগুলোর খানিকটা প্রকাশিত হলেও বেশিরভাগ গল্পই মিডিয়ার আড়ালে থেকে যায়।

শুধু প্রকাশিত হয় “কাছে আসার সাহসী গল্প“। সাহসী গল্পগুলোর পিছনে লুকায়িত নোংরামো আর হাহাকার কেও দেখেনা। কেও শুনেনা নবজাতকের কান্নার শব্দ, কেও জানেনা যুবতীর প্রতিনিয়ত সম্ভ্রম হারানোর গল্পটা। ক’জন জানে হারাম সেই সম্পর্কের বাঁধন ছিন্ন করে রব্বের কাছে আসার গল্পটা?

লিখেছেন

Picture of কামরুননাহার মীম

কামরুননাহার মীম

A Muslim wayfarer who is trying to walk for the sake of Allah.
Talibul Ilm.

All Posts
Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture