হযরত জাকারিয়া ও ইয়াহিয়া আ.
হযরত মারিয়াম আ. এর জন্মের পর তার অভিভাবকত্বের দায়িত্ব কে নিবে তা নিয়ে শুরু হয় একধরণের দ্বন্দ্ব। অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো লটারি মারা হবে। যার নাম লটারিতে উঠবে তিনিই হবেন সেই সৌভাগ্যবান। আল্লাহর হুকুমে লটারিতে নাম উঠলো তার খালু হযরত জাকারিয়া আ. এর নাম। আর সেদিন থেকে তার তত্ত্বাবধানেই বায়তুল মোকাদ্দাসের পাশে মেহরাবে বড় হতে লাগলেন মারিয়াম আ.। এভাবে সময় কেটে যেতে লাগলো। মারিয়াম আ. তখন প্রাপ্তবয়স্কা। তিনি মসজিদের খেদমত করতে লাগলেন। হযরত জাকারিয়া আ. মাঝেমধ্যে এসে তার খুঁজ নিতেন।
জাকারিয়া আ. যখনি মারিয়াম আ. এর খোঁজ নিতে আসতেন তখনি দেখতে পেতেন মৌসুম ছাড়াও নানা ফল ফলাদি তার কাছে রয়েছে। তাই তিনি একদিন কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এগুলো কোথায় পাও তুমি? ‘ মারিয়াম আ. জবাবে বললেন, ‘আমার রব আমাকে দেন।’ এই কথা শুনে হযরত জাকারিয়া আ. এর মাঝে ভাবান্তর সৃষ্টি হলো। তিনি মনেমনে বললেন, যে আল্লাহ মৌসুম ছাড়াও মারিয়ামকে ফল দিতে পারেন সেই আল্লাহ তো আমাকে এই বুড়ো বয়সেও সন্তান দিতে পারেন।
হযরত জাকারিয়া আ. নিভৃতে গিয়ে সমস্ত মনযোগ রবের দিকে দিয়ে হাত দুটো উপরে তুলে আরজ করলেন, ‘ হে আমার রব! আমি তো বার্ধক্যের শেষ প্রান্তে উপনীত হয়েছি। আমার চুলগুলো সব সাদা হয়ে গেছে। আমাকে তুমি নেককার সন্তান দান করো। যে হবে আমার পরে আমার উত্তরাধিকারী। হে আমার রব! আমি তো তোমাকে ডেকে কখনো নিরাশ হইনি।’ না, এবারও তিনি তার রবকে ডেকে নিরাশ হোননি। জাকারিয়া আ. এর দোয়ার জবাবে আল্লাহ তার নিকট পূত্র সন্তানের সুসংবাদ দিয়ে ফেরেশতা পাঠালেন।
মানুষ হিশেবে আমরা বড়ই ধৈর্যহারা। একবার, দুইবার, তিনবার ডাকার পরও যখন দেখি আমাদের দোয়া কবুল হচ্ছে না(আদতে হচ্ছে কিন্তু আমরা বুঝতে পারছি না) তখন আমরা হাল ছেড়ে দেই। আমাদের নিজেদের দোয়াতে নিজেরই বিশ্বাস থাকে না। আমরা তখন অভিযোগ ছেড়ে দেই রবের প্রতি। কেন আমার দোয়া কবুল হচ্ছে না? অথচ বার্ধক্যের শেষ পর্যায়ে এসে যখন মাথার চুলগুলো পেকে একদম সাদা হয়ে গেছে তখনও সন্তান কামনায় হাত দুটো উপরে তুলতে দ্বিধা করেননি হযরত জাকারিয়া আলাইহিস সালাম।
সন্তান আগমনের খবর পেয়ে হযরত জাকারিয়া আ. বললেন, ‘এটা কীভাবে সম্ভব, যখন কিনা আমি বার্ধক্যের শেষ সীমায় আছি আর আমার স্ত্রী বন্ধ্যা! ‘ আল্লাহ বললেন, এভাবেই। আল্লাহ যা চান করেন। জাকারিয়া আ. বললেন, ‘তাহলে আমাকে নিদর্শন দিন।’ আল্লাহ বললেন, ‘তুমি তিনদিন কারো সাথে কথা বলবে না। ইশারা ইঙ্গিত ব্যতীত। ‘ হযরত জাকারিয়া আ. তাই করলেন। তিনি দিনরাত আল্লাহর ইবাদতে মশগুল রইলেন। এরপর এলো সেই কাঙ্ক্ষিত দিন। তার কোল জুড়ে এলো এক ফুটফুটে পূত্র সন্তান।
সন্তান জন্মলাভের পর আল্লাহ বললেন, ‘আমি এর এমন নাম রাখবো যা এর আগে আর কেউ রাখেনি। এই সন্তান হবে নেতা, অনুগত, নারী সঙ্গ মুক্তো ও সৎকর্মশীল নবী।’ আল্লাহ তার নাম রাখলেন ‘ইয়াহিয়া’। ইয়াহিয়া আ. বয়সে হযরত ঈসা আ. এর থেকে ছ’মাসের বড় ছিলেন। অবাধ্য জাতির প্রতি ইয়াহিয়া আ. দাওয়াত দিয়ে গছেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। তিনি নারী সঙ্গ মুক্তো অর্থাৎ চিরকুমার ছিলেন।
দাওয়াতি কাজ বেগবান হতেই স্বভাবত ইহুদীরা তাদের নবীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করলো। তারা এমনটা করেছে ঈসা আ. এর বিরুদ্ধেও। এক বর্ণনায় পাওয়া যায় এক নষ্টা মহিলার প্ররোচনায় শাম দেশের বাদশাহ হযরত ইয়াহিয়া আ. কে হত্যা করেছিলো। আর তারপর তারা তার পিতা জাকারিয়া আ. এর পিছনে লাগলে তিনি নিরাপদ দূরত্বে সরে যাওয়ার সময় ইহুদীদের নিকটবর্তী হতে দেখে একটা গাছের ভিতর লুকিয়ে পড়েন। পরে ইহুদীরা গাছ চিড়ে তাকে হত্যা করে।
কিন্ত অনেক উলামা এই বর্ণনাটিকে অমূলক বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের মতে হযরত জাকারিয়া আ. এর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিলো। তবে আল্লাহই ভালো জানেন মূলত কী হয়েছিলো।