ইসলামের দৃষ্টিতে অন্ত:স্বত্বা স্ত্রীর সাথে সহবাস
ইসলামের দৃষ্টিতে অন্ত:স্বত্বা স্ত্রীর সাথে সহবাস এবং তার খাওয়া-দাওয়া ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়। বর্তমানে ডাক্তাররা গর্ভবতী নারীদের উদ্দেশ্যে বলে থাকে যে, গর্ভ ধারণের ১ম তিন মাস এবং শেষ তিন মাস স্বামী সহবাস করা ঠিক নয়। এ সময় বাম কাত হয়ে শুলে গর্ভস্থ সন্তান ভালো থাকে, গর্ভাশয়ে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ হয়। এ ছাড়াও এ সময় দূরে সফর করা এবং ভারি কাজ করা উচিৎ নয়।
তাছাড়া মান সম্মত পুষ্টিকর খাবার খেলে প্রসূতি মা ও গর্ভস্থ সন্তান ভালো থাকে ইত্যাদি। আমার প্রশ্ন হল, ইসলাম কি এ সকল বিধিবিধান সমর্থন করে?
গর্ভবতী নারীদের কি এ সকল নিয়ম-কানুন মেনে চলা উচিৎ?
বৈষয়িক ও স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলো মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতা, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার ওপরে নির্ভরশীল। সুতরাং বৈজ্ঞানিক গবেষণা, ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে সকল আচরণ গর্ভবতী নারীর জন্য ক্ষতিকারক এবং যে সকল কার্যক্রম তাদের জন্য উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে সেগুলো অনুসরণ করতে ইসলাম বাধা দেয় না। ইসলাম বৈষয়িক ক্ষেত্রে সব সময় উপকারী ও কল্যাণকর বিষয়কে সমর্থন করে-যদি না তাতে শরিয়া বিরোধী কোনো কিছু থাকে।
Table of Contents
গর্ভকালীন স্ত্রী সহবাস করা
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষ্য হল, “যদি গর্ভকালীন অবস্থা স্বাভাবিক ভাবে চলমান থাকে তাহলে সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় প্রসব বেদনা শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত সহবাস করা যায়। সহবাসের সময় স্বাভাবিক নড়াচড়া গর্ভের শিশুর কোন ক্ষতি করে না। শিশু তলপেট এবং জরায়ুর শক্ত পেশী দ্বারা সুরক্ষিত থাকে। জরায়ুর মুখ মিউকাস প্লাগ দ্বারা সীল করা থাকে। সহবাসের সময় পুরুষেরে গোপনাঙ্গ গর্ভের শিশু পর্যন্ত পৌঁছায় না। তাই গর্ভে শিশুর ক্ষতির আশঙ্কা নেই।”
আর ইসলামী শরিয়ায় অনুযায়ীও অন্ত:সত্তা নারীর শারীরিক কোন সমস্যা না থাকলে সন্তান গর্ভধারণের প্রথম তিন মাস, শেষ তিন মাস বা এর মধ্যবর্তী সময়ে স্বামী-স্ত্রীর মিলনে সমস্যা নেই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন করা নিঃসন্দেহে উত্তম। এ ব্যাপারে হাদিস বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ جُدَامَةَ بِنْتِ وَهْبٍ الأَسَدِيَّةِ أَنَّهَا سَمِعَتْ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ “ لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ أَنْهَى عَنِ الْغِيلَةِ حَتَّى ذَكَرْتُ أَنَّ الرُّومَ وَفَارِسَ يَصْنَعُونَ ذَلِكَ فَلاَ يَضُرُّ أَوْلاَدَهُمْ ” . قَالَ مُسْلِمٌ وَأَمَّا خَلَفٌ فَقَالَ عَنْ جُذَامَةَ الأَسَدِيَّةِ . وَالصَّحِيحُ مَا قَالَهُ يَحْيَى بِالدَّالِ .
জুদামাহ্ বিনতে ওয়াহব আসাদিয়্যাহ্ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, “আমি গীলা তথা স্তন্য দায়িনী অথবা অন্ত:সত্তা স্ত্রী সঙ্গম নিষিদ্ধ ঘোষণা করার ইচ্ছে করলাম। এরপর আমার নিকট আলোচনা করা হল যে, রোম ও পারস্যের লোকরা এ সময় সহবাস করে কিন্তু এতে তাদের গর্ভস্থ সন্তানের কোন ক্ষতি হয় না।”
(সহিহ মুসলিম, অধ্যায়: বিবাহ ‘গীলাহ্’ অর্থাৎ স্তন্য দায়িনী স্ত্রীর সাথে সঙ্গমের বৈধতা এবং ‘আয্ল মাকরূহ হওয়া প্রসঙ্গে, হা/৩৪৫৬)
অর্থাৎ তৎকালীন রোম ও পারস্য দেশে সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় বা সন্তানকে দুধ পান করানোর সময় স্ত্রী সহবাসের বিষয়টি প্রচলিত ছিলো। কিন্তু এতে তাদের কোন ক্ষতি হয় নি – রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম তা জানতে পেরে এই অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর সহবাস করাকে নিষেধ করেন নি।
গর্ভবতী মহিলার স্বাস্থ্য সম্মত ও পুষ্টিকর খাবার
গর্ভবতী নারীর জন্য অবশ্যই স্বাস্থ্য সম্মত ও পুষ্টিকর খাদ্যের প্রয়োজন। কেননা, এতে মা ও ভ্রূণের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয়েছ: “খাদ্য ঘাটতিতে আক্রান্ত গর্ভবতী মায়ের সন্তান হয় ওজনে কম ও লম্বায় ছোট। বহু ক্ষেত্রে গর্ভেই সন্তান মরে যায়, জন্মের কিছু সময় পর সন্তান মৃত্যুমুখে পতিত হয়, গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে, সময় হওয়ার আগেই সন্তানের জন্ম হয়ে যায়, ফলে শিশু থাকে অপরিণত।”
এ কারণে ডাক্তার ও পুষ্টিবিদরা গর্ভবতী মায়েদের শরীরের যত্ন নিতে এবং পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যপ্রদ খাবার গ্রহণের সব সময় পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
গর্ভাবস্থায় দীর্ঘ সফর
গর্ভ অবস্থায় দীর্ঘ সফর ক্ষতিকারক হতে পারে। তাই যথাসম্ভব এ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে ডাক্তারগণ পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে বিশেষ প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু নিয়ম-কানুন মেনে আরামদায়ক সফর করা যেতে পারে।
গর্ভাবস্থায় পরিশ্রম ও ভারী কাজ করা
গর্ভাবস্থায় একজন মা কতোটা পরিশ্রম করবেন তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়৷ সাধারণভাবে বলা যায়, মা গর্ভাবস্থায় তার স্বাভাবিক সংসারের সব কাজই করবেন৷ তবে প্রথম তিন মাস এবং শেষের দু-এক মাস খুব ভারী বা পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো৷ যেমন- কাপড় কাচা, ভারী জিনিস তোলা, পানি আনা, ধান ভানা ইত্যাদি না করা৷ গর্ভাবস্থায় সিঁড়িতে ওঠা-নামার সময় যথেষ্ট সতর্ক থাকা উচিত৷
অন্ত:স্বত্বা নারীর বাম দিকে শোয়ার বিষয়টি যদি বাস্তব অভিজ্ঞতা ও ডাক্তারি নির্দেশনা মোতাবেক তার জন্য উপকারী হয়ে থাকে তাহলে সে ভাবে শুতে কোন সমস্যা নেই।
আল্লাহু আলম