যেভাবে তিনি জিতে যান
রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর এই উম্মতের সর্বোত্তম ব্যক্তি হলেন আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)। এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের মনে কি প্রশ্ন জাগে, কোন গুণটি তাঁকে সবার চেয়ে শ্রেষ্ঠ মানুষ হিশেবে পরিণত করলো?
দেখুন, আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) আবু হুরাইরা বা আবু যর-গিফারীর (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) মতো দরিদ্র ছিলেন না। তারপরও তিনি তাঁদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। ইসলাম গ্রহণের জন্য তিনি সেভাবে যুলুমের শিকার হোননি, যেভাবে খাব্বাব, বিলাল, সুমাইয়্যা, ইয়াসির (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) যুলুমের শিকার হয়েছিলেন। তারপরও তিনি তাঁদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। তিনি যুদ্ধের ময়দানে সেভাবে আহত হোননি, যেভাবে তালহা, আবু উবাইদাহ, খালিদ (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) আহত হয়েছিলেন। তারপরও তিনি তাঁদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। তিনি ইসলামের পথে সেভাবে শহীদ হোননি, যেভাবে উমর, উসমান, আলী, হামজা, মুসআব ইবনে উমাইর (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) শহীদ হয়েছিলেন। তবুও তিনি তাঁদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।
তাহলে কোন এমন এক গুণ আবু বকরের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) মধ্যে ছিলো, যে গুণটির ফলে তিনি তাঁর যুগের আলেম, মুজাহিদ, ইবাদাতকারীর চেয়েও শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হিশেবে পরিণত হোন? এই রহস্যের সমাধান করেন একজন সালাফ। তাঁর নাম- আবু বকর বিন আব্দুল্লাহ আল-মুজানী (রাহিমাহুল্লাহ)।
“অত্যধিক নামাজ পড়া, অনেক রোজা রাখা আবু বকরকে (রাদিয়াল্লাহু আনহু) শ্রেষ্ঠে পরিণত করেনি। তাঁকে শ্রেষ্ঠে পরিণত করেছে তাঁর ভেতরের অংশ।”
অর্থাৎ, আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) যে কারণে শ্রেষ্ঠ, সেটা বাহ্যিক কিছু না, অভ্যন্তরীণ কিছু। তাঁর ঈমান তাঁকে শ্রেষ্ঠ বানিয়েছে। আমরা জানি, ঈমানের তিনটি উপাদান।
মুখে সাক্ষ্য দেয়া
কর্মে প্রকাশ করা এবং
অন্তরে বিশ্বাস করা।
আমাদের বেশিরভাগই ঈমানের বাহ্যিক বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিই। যেমন: আমল। কিন্তু, ঈমানের আভ্যন্তরীণ বিষয়কে আমরা কম গুরুত্ব দিই।
প্রত্যেক ইবাদাতেরই বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ দিক আছে। নামাজের বাহ্যিক দিক হলো- নামাজে দাঁড়ানো, রুকু, সিজদাহ করা ইত্যাদি। কিন্তু, নামাজের অভ্যন্তরীণ বিষয় কী? খুশুখুজু।
তেমনি, হজ্জ্বের বাহ্যিক দিক হলো কা’বা ঘর তাওয়াফ করা, আরাফায় যাওয়া, পাথর মারা ইত্যাদি। কিন্তু, হজ্জ্বের অভ্যন্তরীণ দিক কী? আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা করা।
দু’আর বাহ্যিক দিক হলো হাত তোলা, কোনো কিছুর জন্য আল্লাহকে বলা। কিন্তু, দু’আর অভ্যন্তরীণ দিক কী? বিনয়াবনত মন।
একইভাবে রোজা রাখারও বাহ্যিক কিছু দিক আছে। যেমন: খাদ্য, পানি থেকে নিজেকে বিরত রাখা। কিন্তু, রোজার অভ্যন্তরীণ দিক কী? সেটা পবিত্র কুরআনে আল্লাহ জানিয়ে দেন-
“যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।”
[সূরা বাকারা ২:১৮৩]
এই আয়াতকে লিটমাস টেস্ট হিশেবে রেখে রামাদ্বান মাসে আপনার সফলতার হিশেব করুন। আপনি প্রশ্ন করুন:
রামাদ্বান মাসে আমার তাকওয়ার অবস্থা কতোটা উন্নতি হয়েছে?
অন্যান্য সময় আমি অভ্যাসবশত যে পাপাচার করতাম, এখনো কি সেগুলো করি?
রামাদ্বান মাসেও কি আমি পর্দা করার ব্যাপারে মনোযোগী হতে পারছি না?
রামাদ্বান মাসেও কি আমি গীবত ছাড়তে পারছি না?
রামাদ্বান পরবর্তী সময়েও একই প্রশ্ন নিজেকে করুন, রামাদ্বানের পূর্বের আমি আর রামাদ্বানের পরবর্তী আমি কি ‘একই’ আমি? যদি নিজের মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখতে না পান, যদি রামাদ্বান আপনার তাকওয়ার অবস্থার পরিবর্তন না ঘটায়, তাহলে রামাদ্বান যে উদ্দেশ্যে আপনার জীবনে আগমন করেছিলো, সেই উদ্দেশ্যটা ব্যর্থ হলো। আপনি একটি ব্যর্থ রামাদ্বান কাটালেন; সেই রামাদ্বান আপনাকে পরিবর্তন করতে পারলো না।
উস্তাদ আলী হাম্মুদার (হাফিজাহুল্লাহ) ‘A Ramadan of Change’ লেকচার অবলম্বনে। পুরো রামাদ্বান মাসে শায়খের লেকচার সিরিজটি ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ করে পোস্ট করা হবে, ইন শা আল্লাহ।
পরিবর্তনের রামাদ্বান (প্রথম পর্ব)
আরিফুল ইসলাম