নিজের দাম্পত্য জীবন নিয়ে হীনমন্যতা বোধ না করা
- ছেলেটা সুন্দর স্মার্ট, সে অনুপাতে বউটা কিন্তু একদম মানানসই হয়নি, কেমন বা মোটা !!
- মেয়েটা সুন্দর, কিন্তু জামাই টা এক্কেবারেই ক্ষেত মার্কা, এত সুন্দর মেয়ে এরকম জামাইকে কি দেখে যে পছন্দ করল !
- এত লম্বা ছেলের এত খাটো বউ, চয়েজ কি এদের !!
- এত লম্বা মেয়ের এত খাটো জামাই!
- এত ফর্সা মেয়ে অথচ কী কালুয়া বর। ছেলে পিলে যে কেমন হবে দেখতে!
- ডাক্তার হয়ে বিয়ে করল ইঞ্জিনিয়ার! হব্বে নাহ !
আমাদের পাড়া মহল্লা গুলোতে বিশেষ কিছু গোষ্ঠী আছে, মূলত এক শ্রেণীর আন্টি গোষ্ঠী যাদের কোন ভালো কাজ না থাকায় নিজেদের মত করে দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে যে কার সাথে কাকে মানালো বা কার সাথে কাকে মানাচ্ছেনা এসব আলোচনা করার।
খোঁজ নিয়ে দেখবেন অধিকাংশ সময়ই পারিবারিক ভাবে এরা নিজেদের জীবনে সুখী নয়। হয়ত দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবনে নিজেদের স্বামী/ স্ত্রী নিয়ে এরা অসন্তুষ্ট। আর নিজের চরকা তেল শূন্য রেখে অপরের চরকায় তেল দেওয়া বাঙ্গালির চিরায়ত স্বভাব।
শুধু পাড়া মহল্লা না, কর্ম ক্ষেত্রেও এরকম কিছু মানুষ পাবেন যারা সবসময় গ্রুপিং করেই পরচর্চায় ব্যস্ত থাকে। খোজ নিলে দেখবেন, অধিকাংশ জনই নিজেদের জীবনসঙ্গী পছন্দে ব্যার্থ হয়েছে তাই অন্য কেউ সেই ব্যাপারে সফল হলে তাদের সহ্য হয়না।
এদের থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকুন এবং থাকতেই হবে।
জীবনটা আপনার। তাই ভালো লাগা গুলোও একান্ত আপনারই। জীবন সঙ্গী হিসেবে আপনি কাকে পছন্দ করবেন সে অধিকারও একান্ত আপনার। প্রাইওরিটি একটাই যে দ্বীনদার হতে হবে।
অনেক কে দেখা যায়, বাইরের এসব মানুষের সামনে, বা মানুষের কথায় বিচলিত হয়ে নিজে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগে এবং নিজের স্বামী/ স্ত্রীকে কে অপরের সামনে, অপরের কথায় অপমান হতে দেয়। এমনটা মোটেও কাম্য নয়।
আপনার সংগী বা সংগিনী যেমনই হোক আল্লাহ তায়ালা তাকে আপনার আব্রু রক্ষাকারী পোশাকের মর্যাদা দিয়েছেন (সূরা বাকারাঃ ১৮৭), তার সম্মান মানে আপনারই সম্মান।
হতেই পারে আপনার পোশাক টা ধুলোমলিন বা কম দামী তবুও তা যেমনই হোক তা আপনার সম্ভ্রম রক্ষা করে। তাই তার সম্মান রক্ষার দায়িত্বও আপনার।
একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। রেফারেন্স মনে পড়ছেনা। এক সুন্দরী মেয়ের এক কুতসিত জামাই দেখে জনৈক মেয়েটাকে প্রশ্ন করলঃ
তোমার মনে কখনও হীনমন্যতা হয়না ?
মেয়েটির উত্তর ছিলঃ হীনমন্যতা হবে কেন ?
সকল প্রশংসা আল্লাহ এর! কত মেয়ের বিয়েই হয়না, কত আকাঙ্ক্ষা করেও একজন যেমন তেমন স্বামীও পায়না। আল্লাহ তায়ালা আমাকে একজন দ্বীনদার স্বামী দিয়েছেন।
সে অপ্রত্যাশিত ভাবে আমার মত সুন্দরী স্ত্রী পেয়ে আল্লাহ এর শোকর করে, আর আমিও মনের মত চরিত্রের তাকে পেয়ে শোকর করি এবং চেহারার ব্যাপারে সবর করি।
নিশ্চয় শোকর ও সবর, উভয়ই জান্নাত পর্যন্ত নিয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ।
এই দুনিয়া তো শীঘ্রই শেষ হয়ে যাবে। এই দুনিয়ায় না পাওয়া গুলো বা পাওয়াতে কোন ঘাটতি থাকলেও পরকালে জান্নাতে তার চরম বিনিময় পাওয়া যাবে। আমাদের উচিৎ সর্ববস্থায় আলহামদুলিল্লাহ বলতে শেখা, মনে কোন আফসোস থাকলেও সেই ব্যাপারে জান্নাত পর্যন্ত সবর করা।
মানুষের কানাকানি তে নিজের দাম্পত্য জীবন নিয়ে হীনমন্যতা বোধ না করা এবং নিজের সংগিনীকেও কারোর সামনে ছোট হতে না দেওয়া।
মানুষ তো বলবেই রে ভাই। তাদের মুখে লাগাম টানা আমাদের আয়ত্ত্বে নেই। কিন্তু এটুকু আমাদের আয়ত্ত্বে যে আমরা সেগুলো কানে না লাগাই, গনণায় না ধরি।
লেখাঃ শাহ মোহাম্মদ তন্ময়