Q/A

আল্লাহ কেন আমাকে আমাদেরকে টেস্ট করেন

আল্লাহ যখন ফেরেশতাদের ডেকে বললেন আমি পৃথিবীতে নতুন খলিফা পাঠাতে চাই ফেরেস্তাদের ইমমেডিয়েটে রিএকশন ছিল কি দরকার?
এরা তো পৃথিবীতে খামাখাই রক্ত ঝরাবে! একে অন্যকে কষ্ট দিয়ে বেড়াবে, নৈরাজ্য সৃষ্টি করবে আর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে!
আমরা তো আছি!
আমরা কি যথেষ্ট না?

পরবর্তীতে ঘটনা আনফোল্ড হয় এবং সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে আল্লাহ তাদের ভুল ভাঙান। ভুল ভাঙার পর ফেরেস্তাদের প্রথম স্টেইটমেন্ট কি ছিল?
সমস্বরে সবাই বলে উঠেছিল
সুবহানাকা!
অর্থাৎ হে মহান সত্তা আপনিই পারফেক্ট!

সুবহানা শব্দটি এসেছে সাবাহা থেকে, যার অর্থ হলো সেই জিনিস যা কন্সটেন্টলি এবং পারফেক্টলি সেইম লেভেলে মেইনটেইন করে
অর্থাৎ আল্লাহর নলেজ হচ্ছে কন্সটেন্ট, আল্লাহর ইজ্জত হচ্ছে কনস্ট্যান্ট, আল্লাহর প্ল্যান এর উইজডম হচ্ছে কনস্ট্যান্ট, আমরা বুঝি বা না বুঝি, এতে ফ্ল থাকার কোনো চান্স নেই, কারণ সব কিছুই কনস্ট্যান্ট এবং পারফেক্ট।

ফেরেস্তারা বিষয়টা ইন্সটেন্টলি বুঝতে পেরেছিল, বুঝতে পেছিলো যে যেই ডাউট তারা করছিল, সেই ডাউট করাটাই ভুল ছিল, তাই তো তারা সাথে সাথে ডিক্লেয়ার দিয়েছিলো যে, হে আল্লাহ আপনিই আসলে পারফেক্ট, আর আমরাই হলাম ইমপারফেক্ট, কারণ আমাদের জ্ঞান ইমপারফেক্ট।

এই যে আমার প্রতিদিন তাসবীহ করছি সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ বলে, সেই সুবহানাল্লাহ আসলে একটা ডিক্লেরেশন, ডিক্লেরেশন যে আমরা স্বীকার করছি, আল্লাহ যেই প্লেনই করুক বা না করুক, হোক তা আমার জন্য কিংবা হোক তা দুনিয়াবাসীর জন্য, সেই প্ল্যানকে ক্রিটিসাইস করার কোনো নলেজ উইজডম বা অথরিটি আমাদের নেই, কেন তুললাম এই টপিক?

তুললাম কারণ অনেকেই ইনবক্স করেছেন যে, ভাইয়া আসে পাশে এতো এতো অনাচার! আল্লাহ কেন চুপ?
কেন তিনি এসব হতে দিচ্ছেন?
কি দোষ ছিল ফিলিস্তিনির সেই ছোট ছোট মাসুম বাচ্চাগুলোর?
কি বা দোষ ছিল সেই আসিয়ার?
পৃথিবীতে কেন এতো সাফারিংস?
বুঝার জন্য আগে মূল গল্পটা শেষ করি।

সৃষ্টির সেই আদি গল্পে তিনি জানান, তিনি পৃথিবীতে আমাদেরকে খলিফা হিসেবে পাঠিয়েছেন, খলিফা অর্থ কেয়ারটেকার, খলিফা হলো সেই ব্যক্তি যিনি একজনের অনুপস্থিতিতে আরেকজনকে টেক কেয়ার করে থাকে!
তিনি জানেন যে একজন ভালো কেয়ারটেকার হওয়ার জন্য দরকার তিনটা বিষয়,

  • তার মধ্যে লার্নিং ক্যাপাসিটি থাকতে হবে,
  • তার মধ্যে ভালো আর মন্দের জাজ করার মোরাল কেপাসিটি থাকতে হবে
  • আর তাকে অন্যের প্রতি এমপেথিক হতে হবে

অর্থাৎ তাকে এমন এক বিং হতে হবে যে কিনা কেয়ারিং, যে কিনা প্রতি নিয়ত শিখতে থাকবে, এবং যে কিনা ইন্ডেপেন্ডেন্টলি চুজ করতে পারবে, অতঃপর সে সেই চয়েসের কন্সিকুয়েন্সের ভিত্তিতে গ্রো হতে থাকবে।

আবার বলি, প্রথম প্রয়োজন লার্নিং ক্যাপাসিটি থাকতে হবে, তাই তো দেখেন প্রথমেই আদম আঃ কে লার্নিং কেপাসিটির ট্রেইনিং দিলেন, তাকে বিভিন্ন জিনিসের নাম শিখালেন, অতঃপর তার মেমরি টেস্ট করলেন, যেই টেস্টে তিনি ফেরেস্তাদের পিছে ফেলে একেবারে গোল্ডেন এ+ পেলেন।
দ্বিতীয় প্রয়োজন হলো যে তাকে মোরাল ক্যাপাসিটি থাকতে হবে, অর্থাৎ এমন এক বিং হতে হবে যার ইন্ডেপেন্ডেন্টলি চয়েজ নেয়ার ফ্রিডম থাকতে হবে, আদম আঃ এই ইন্ডিপেন্ডেন্ট চয়েজ নিতে পারে কি পারে না, সেটা দেখার জন্য উনাকে সিম্পল একটা টেস্ট দিলেন, কি ছিল সেই টেস্ট?

“সব গাছ থেকে খাও তবে একটা পার্টিকুলার গাছের কাছেও যেও না”
যেদিন আদম আঃ প্রথম ইন্ডিপেন্ডেন্ট চয়েজ টি নিয়েছিলেন, সেই গাছের কাছে গিয়ে ফলটা খেয়েছিলনে, সেই একশনটা ছিল আসলে তার পাসিং ক্রাইটেরিয়া, আল্লাহ উনাকে একটা ইন্সট্রাকশন দিয়েছিলেন, স্টিল তিনি ইনডিপেন্টলি সেই ইন্সট্রাকশনের বিরুদ্ধে গিয়ে একটা চয়েজ মেক করে ছিলেন, হা তিনি সেটার জন্য পরে অনুতপ্ত হয়েছিলেন, ক্ষমা চেয়েছিলেন এবং উনাকে সাথে সাতে ক্ষমাও করে দেওয়া হয়েছিল।

ব্যাট মেইন পয়েন্ট হলো, তিনি এভাবেই সেকেন্ড টেস্টে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।

এবার আসি তৃতীয় প্রয়োজনে, আর তা হলো তাকে এমন এক বিং হতে হবে যার থাকবে “এম্পেথি“, অর্থাত সে অন্যের দুঃখ দুঃখী হবে, দুঃখী হয়ে অন্যের কষ্ট ফিল করবে, তারপর তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে।

তবে এই এম্পেথি এমনি এমনি ডেভেলপ হয় না, হওয়ার জন্য প্রয়োজন হয় ইমোশনাল ট্রিগারের, আর সাফারিংস হলো একটা স্ট্রং ইমোশোনার ট্রিগার, এই ট্রিগারের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে হলে, খলিফার অপর মিনিং টা বুঝতে হবে, খলিফার অপর মিনিং হলো “রিপ্রেজেন্টেটিভ“, অর্থাৎ যে স্রষ্টাকে রিপ্রেসেন্ট করবে, স্রষ্টার রিপ্রেসেন্টটেশনের বেস্ট উপায় হলো, উনার কোয়ালিটি গুলোকে মানুষের সামনে তুলে ধরা, কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমরা সেই সত্তার কোয়ালিটি গুলো কি ভাবে রিপ্রেসেন্ট করবো?

কারণ তিনি তো ধরা ছোঁয়ার বাইরে, তিনি সময়ের ঊর্ধ্বে আর আমরা সময়ে আবদ্ধ, তিনি অসীম আর আমরা সীমিত, তিনি অবিনশ্বর আর আমরা নশ্বর, তাই আবারো প্রশ্ন, তাকে কি ভাবে আমরা রিপ্রেসেন্ট করবো?

আমরা কাউকে তখনি রিপ্রেসেন্ট করতে পারি, যখন কারো সাথে আমাদের একটা রিলেশনশিপ থাকে, আর রিলেশনশিপ বিল্ড আপের জন্য আমাদের কিছু কমন ইন্টারেস্ট থাকা চাই, আমরা যখন কোরআন পড়ি, দেখতে পাই যে, তিনি স্পেসিফিকালি বলে দিয়েছেন যে, তিনি আমাদের মধ্যে কি কি কোয়ালিটি বা প্রিন্সিপাল দেখতে চান, এনালাইজ করলে দেখবেন যে, তিনি সেই সব কোয়ালিটি দেখতে চান যেই গুলো তিনি নিজে ইনফানাইটলি ভাবে ধারণ করেন, যেমনঃ-

তিনি চান আমরা যেন একে অন্যের প্রতি দয়া প্রদর্শন করি, কারণ তিনি হলেন ইনফানাইটলি দয়ালু, তিনি চান আমরা যেন সদা সত্য কথা বলি, কারণ তিনি হলেন এবসোলিউট ট্রুথ, তিনি চান আমরা যেন জাস্টিস কায়েম করি, কারণ তিনি হলেন ইনফানাইটলি জাস্ট, তিনি চান আমরা যেন একে অপরকে ক্ষমা করে দেই, কারণ তিনি হলেন ইনফানাইটলি ক্ষমাশীল, তিনি চান আমরা যেন একে অপরকে ভালোবাসি, কারণ তিনি হলেন অল লাভিং, তিনি চান আমরা যেন একে অন্যকে সাহায্য করি, কারণ তিনি হলেন সর্বোত্তম সাহায্যকারী, তিনি চান আমরা যেন জ্ঞান আহরণ করি, কারণ তিনি হলেন সর্বজ্ঞানী, তিনি চান আমরা যেন একে অন্যকে প্রটেক্ট করি, কারণ তিনি হলেন সর্বোত্তম প্রটেক্টর, অর্থাৎ তার সাথে ক্লোসনেস বাড়ানোর জন্য আমাদেরকে উনার এই কোয়ালিটি গুলোকে এডাপ্ট করতে হবে।

প্রব্লেম হলো এই কোয়ালিটি গুলো মেক্সিমামই সারকোমস্টেনসিয়াল বা পরিবেশ নির্ভরশীল, খেয়াল করে দেখেন যে, প্রতিটা কোয়ালিটি এক্সারসাইজ করতে হলে আপনাকে ওই তিনটা জিনিস এক্সারসাইজ করতেই হবে, যেমন আপনি ততক্ষণ পর্যন্ত কাউকে সাহায্য করতে পারবেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে কোনো প্রব্লেমে সাফার করছে, সেই প্রব্লেমে তাকে কিভাবে হেল্প করবেন, সেই নলেজ আপনাকে একুয়ার করতে হবে, মোর ইম্পর্টেন্টলি আদো হেল্প করবেন কি করবেন না, সেই মোরাল চয়েজ আপনাকে মেক করতে হবে।

এবার আসি আপনার প্রশ্নে, আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, কারণ তিনি তো আমাদেরকে প্রশ্ন করার ইন্টেলেক্ট দিয়েই পাঠিয়েছেন, তবে প্ৰশ্ন করার সময় একটা রিয়ালিটি মাথায় রাখবেন, তিনি সুবহানাল্লাহ!!!!

প্রশ্ন করতে করতে মাথায় রাখবেন, তিনি পারফেক্ট এবং তার প্লেন পারফেক্ট, আমরা বুঝি বা না বুঝি।

আদম আঃ এর সেই গল্পে ফেরেস্তাদের পাশাপাশি শয়তানও কিন্তু প্রশ্ন করেছিল, ফেরেস্তাদের প্রশ্ন ছিল “তাকে বানানোর কি দরকার?”
আর শয়তানের প্রশ্ন ছিল “তাকে সিজদা করার কি দরকার”?
প্রশ্ন করা প্রব্লেম না, প্রব্লেম হলো সেই প্রশ্ন করার পর আপনার অ্যাটিচুড কেমন হলো সেটা, আপনার অ্যাটিচুড কি ফেরেস্তাদের মত হাম্বলিং, নাকি ইবলিশের মত এরোগেন্ট!

পরিশেষে, আল্লাহ জানিয়েছেন, তিনি আমাদেরকে টেস্ট করবেনই, তিনি সূরা ইয়াসিনে এও জানিয়েছেন যে, যাদেরকে টেস্ট করা হয় তারা খামাখাই সাফার করেনি, তারা তাদের রিওয়ার্ড সাথে সাথেই পেয়ে যায়।

মানুষ হিসেবে অন্যের টেস্টে আমরা কষ্ট পাবো এটাই তো স্বাভাবিক, কারণ আমাদেরকে এই এম্পেথির গুন্ দিয়েই পাঠানো হয়েছে, তবে মোর প্রেসিং রিয়ালিটি হচ্ছে, আমরা কি অন্যের কষ্টে কি স্টেপ নিচ্ছি সেটা হচ্ছে আমাদের টেস্ট!

আবার বলি, আমরা কি অন্যের কষ্টে কি স্টেপ নিচ্ছি সেটা হচ্ছে আমাদের টেস্ট!
আমরা কি আমাদের সেই টেস্ট গুলোতে ঠিক ভাবে পাশ করতে পারছি?
একবার চিন্তা করে দেখেন, রোজ হাশরে যখন আমাদেরকে প্রশ্ন করা হবে, তোমার ভাই বোন গুলো যখন টেস্টের মাঝে যাচ্ছিল, তুমি কী এগিয়ে এসেছিলে?

তুমি তো তাদের কেয়ার টেকার ছিলে, ঠিক ভাবে সিচুয়েশনের টেক কেয়ার করেছিলে তো?
উত্তর যদি হয়
জি আল্লাহ! আমি আমার বেস্ট অফ এবিলিটি দিয়ে চেষ্টা করেছিলাম!

তাহলে আলহামদুলিল্লাহ, আপনি পাশ, আর যদি না পারেন, তাহলে আল্লাহ না করুক, সেটার কন্সিকুয়েন্স না আবার বেশি ভারী পরে যায়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture