কুরআন অর্থ না বুঝে পড়লে সওয়াব হবে কি

কুরআন যদি অনুবাদ ছাড়া অর্থ না বুঝে শুধু কুরআনের ভাষায় তেলাওয়াত করি তা হলে সওয়াব হবে?
কুরআন অর্থ না বুঝে পড়লে সওয়াব হবে কি?
সরাসরি কুরআনের কপি থেকে পড়া আর মোবাইল অ্যাপ থেকে কুরআন পড়লে সওয়াবে ক্ষেত্রে কি কোনও পার্থক্য আছে?
আল কুরআন মহান আল্লাহর মর্যাদাপূর্ণ বাণী সমষ্টির এক অবিস্মরণীয় ও বিস্ময়কর গ্রন্থ। এটি এমন এক গ্রন্থ তা পাঠ করলে প্রতিটি অক্ষরে একটি করে সওয়াব লেখা হয় যা দশটির সমান।
যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا لاَ أَقُولُ الم حَرْفٌ وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلاَمٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ
“যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করবে তার একটি সওয়াব হবে। আর একটি সওয়াব দশটি সওয়াবের অনুরূপ। আমি বলি না যে, “আলিফ-লাম-মীম” একটি হরফ; বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম আরেকটি হরফ। (অর্থাৎ তিনটি হরফে রয়েছে তিনটি সওয়াব যা ত্রিশটি সওয়াবের সমান)।”
[সুনান তিরমিজী, হা/২৯১০, অনুচ্ছেদ: যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পড়বে তার সাওয়াব কী হবে? অধ্যায়: ৪৮/ কুরআনের ফযিলত -সনদ সহিহ]
সুতরাং যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করবে সে উক্ত সওয়াব লাভ করবে ইনশাআল্লাহ- চাই বুঝে পড়ুক অথবা না বুঝে পড়ুক, দেখে পড়ুক অথবা মুখস্থ পড়ুক, মুসহাফ দেখে পড়ুক অথবা মোবাইল, ল্যাপটপ ইত্যাদি ডিভাইস থেকে পড়ুক, নামাজের মধ্যে পড়ুক অথবা নামাজের বাইরে পড়ুক।
অন্যান্য ফতোয়া:
সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতি বিশ্ববরেণ্য আলেম আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বাজ রাহ. কে প্রশ্ন করা হয়: কুরআন অর্থ না বুঝে পড়া জায়েজ হবে কী?
উত্তরে তিনি বলেন,
আলহামদুলিল্লাহ।
হ্যাঁ, কোনও মুমিন পুরুষ বা নারী কুরআন পড়তে পারে যদিও সে তার অর্থ না বোঝে। তবে তার জন্য উত্তম হল, কুরআনের আয়াতগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা (তাদাব্বুর) করা এবং বোঝার চেষ্টা করা। যদি তার বোঝার সামর্থ্য থাকে তবে সে তাফসিরের কিতাব অধ্যয়ন করবে, আরবি ভাষার কিতাব পড়বে, যাতে সে এর দ্বারা উপকৃত হতে পারে। পাশাপাশি যদি কোনও বিষয় বোঝা কঠিন হয়ে যায় তবে জ্ঞানীদের (উলামাদের) থেকে তা জেনে নেওয়া উচিত।
মূল উদ্দেশ্য হল, তাদাব্বুর (গভীর চিন্তাভাবনা)। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِيَدَّبَّرُوا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُوْلُوا الْأَلْبَابِ
“এটি এক বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে এবং বোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা শিক্ষা গ্রহণ করে।” [সূরা সোয়াদ: ২৯]
অতএব মুমিন ব্যক্তি যখন কুরআন পাঠ করবে তখন সে তাতে মনোযোগ দেবে, তার অর্থ নিয়ে ভাববে এবং বোঝার চেষ্টা করবে, যাতে সে এর মাধ্যমে উপকৃত হতে পারে। যদি সে পুরো অর্থ না-ও বোঝে তবুও সে অনেক বিষয় বুঝতে পারবে। তাই কুরআন তাদাব্বুর (গভীর চিন্তাভাবনা) সহ পড়া উচিত। নারী-পুরুষ সবার ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য, যাতে তারা আল্লাহর বাণী থেকে শিক্ষা নিতে পারে, তাঁর উদ্দেশ্য বুঝতে পারে এবং সে অনুযায়ী আমল করতে পারে।
আল্লাহ আরও বলেন:
أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَى قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا
“তারা কি কুরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে না, নাকি তাদের অন্তর তালাবন্ধ?”
[সূরা মুহাম্মদ: ২৪]
সুতরাং আমাদের মহান রব আমাদেরকে তাঁর বাণী নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও গভীর অনুধাবনের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। তাই যখন কোনও মুমিন পুরুষ বা নারী কুরআন পাঠ করে তখন তার জন্য উত্তম হল তাতে মনোযোগী হওয়া, চিন্তা করা এবং বোঝার চেষ্টা করা, যাতে সে আল্লাহর বাণী থেকে প্রকৃত শিক্ষা লাভ করতে পারে, তা হৃদয়ঙ্গম করতে পারে এবং সে অনুযায়ী আমল করতে পারে।
এক্ষেত্রে মুসলিমদের উচিত প্রসিদ্ধ তাফসির গ্রন্থ যেমন—
তাফসির ইবনে কাসির।
তাফসির তাবারি।
তাফসির বাগভি।
তাফসির শাওকানি ইত্যাদি অধ্যয়ন করা।
এছাড়াও আরবি ভাষার জ্ঞান অর্জন করা এবং প্রসিদ্ধ আলেমদের থেকে জ্ঞান গ্রহণ করা উচিত, যাতে কোনও অস্পষ্ট বিষয় থাকলে তারা তা ব্যাখ্যা করে দিতে পারেন।
ফতোয়া প্রদানে: শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বাজ রাহ.
[ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব, ১/৩৩২]
ইসলাম ওয়েবের ফতোয়া:
কুরআন তিলাওয়াত করা কিন্তু এর অর্থ না বোঝা।
কেউ যদি কুরআন তিলাওয়াত করে কিন্তু এর অর্থ বুঝে না তাহলে কি সে এর জন্য সওয়াব পাবে? আর মোবাইল ফোনে পড়া এবং কুরআনের কপি থেকে পড়ার মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি?
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, এবং সালাত ও সালাম রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর, তার পরিবার এবং সাহাবিদের উপর। এরপর—
জেনে রাখুন, একজন মুসলিমের উচিত কুরআনের অর্থ সম্পর্কে চিন্তা করা এবং যা বুঝতে অসুবিধা হয় তা জিজ্ঞাসা করা।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِّيَدَّبَّرُوا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُوْلُوا الْأَلْبَابِ
"এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি নাযিল করেছি, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং বুদ্ধিমানরা যেন তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করে।"
[সূরা সোয়াদ: ২৯]
তিনি আরও বলেছেন:
أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَى قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا
"তারা কি কুরআন সম্পর্কে চিন্তা করে না, নাকি তাদের হৃদয় তালাবন্ধ?"
[সূরা মুহাম্মদ: ২৪]
তবে যদি কেউ আয়াত পড়ে কিন্তু এর অর্থ বুঝে না, তবুও সে এর তিলাওয়াতের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে না। কারণ—
তিরমিজির হাদিসে এসেছে: রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ، وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا
“যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি অক্ষর পাঠ করে, সে এর জন্য একটি নেকি পাবে, এবং একটি নেকি দশটি নেকির সমতুল্য।”
[সহিহ তিরমিজি, হা, ১৯১০]
এ ক্ষেত্রে কুরআনের কপি থেকে পড়া এবং মোবাইল ফোন থেকে পড়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।” (ইসলাম ওয়েব)