Q/AAbdullahil Hadi

পুরুষদের জন্য ব্রেসলেট পরা কি হারাম

হাতে চুরি, ব্রেসলেট, কানে দুল, গলায় মালা, লকেট ইত্যাদি অলংকারাদি পরিধান করা মহিলাদের বৈশিষ্ট্য। তাই এ সব অলংকার পুরুষদের ব্যবহার করা হারাম। আর এগুলো যদি স্বর্ণ বা রৌপ্যের তৈরি হয় তাহলে তা আরও বেশি জটিল। অর্থাৎ এ কারণে দ্বিগুণ গুনাহ হবে। কারণ তা একদিকে নারীদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন অন্য দিকে পুরুষের জন্য স্বর্ণ-রৌপ্য ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত। শুধু তাই নয় বরং পুরুষদের অলংকার পরিধান করার রীতি পাশ্চাত্য ও অমুসলিমদের সাদৃশ্য অবলম্বনের ক্ষেত্রে অন্ধ অনুকরণের আরেকটি উদাহরণ।

ইসলামের দৃষ্টিতে এগুলো সবই কঠিন হারাম

ইসলামের দৃষ্টিতে বিপরীত লিঙ্গের আকৃতি ও বেশভূষা অবলম্বন করা কবিরা গুনাহ:

বিপরীত লিঙ্গের সাদৃশ্য অবলম্বনের ভয়াবহতা সম্পর্কে বহু হাদিস উল্লেখিত হয়েছে। তন্মধ্যে ৩টি হাদিস পেশ করা হল:

ইবনে আব্বাস রা . হতে বর্ণিত। তিনি বলেন:

لَعَنَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُخَنَّثِينَ مِنْ الرِّجَالِ وَالْمُتَرَجِّلَاتِ مِنْ النِّسَاءِ وَقَالَ أَخْرِجُوهُمْ مِنْ بُيُوتِكُمْ قَالَ فَأَخْرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فُلَانًا وَأَخْرَجَ عُمَرُ فُلَانًا
“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষ হিজড়াদের উপর এবং পুরুষের বেশধারী মহিলাদের উপর লা’নত করেছেন।”
(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৮৮৬)

হাদিসের ব্যাখ্যা:
এ হাদিসের ব্যাখ্যা হল, যে সকল পুরুষ কৃত্রিমভাবে নারীর বেশ-ভূষা অবলম্বন করে হিজড়া সাজে অর্থাৎ যারা পোশাক-পরিচ্ছদ, কণ্ঠস্বর, কথা বলার ধরণ, চলাফেরা, রূপসজ্জা ইত্যাদি দিক দিয়ে নারীদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে তাদের প্রতি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে হিজড়া হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।

কিন্তু সৃষ্টিগতভাবে হিজড়াদের কোন দোষ নেই। কারণ এ ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব কোন হাত নেই। বরং মহান আল্লাহ তাদেরকে সেভাবেই সৃষ্টি করেছেন।

অনুরূপভাবে যে সকল মহিলা পোশাক-পরিচ্ছদ, চাল-চলন, চুলের স্টাইল, সাজসজ্জা, কথা বলা ইত্যাদি ক্ষেত্রে কৃত্রিমভাবে পুরুষদের সাদৃশ্য ধারণ করে তাদের প্রতিও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লানত করেছেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,

لَيسَ منَّا مَن تشبَّهَ بالرِّجالِ منَ النِّساءِ ولا من تَشبَّهَ بالنِّساءِ منَ الرِّجالِ
“যে সব নারী পুরুষদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং যে সব পুরুষ নারীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।”
(আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত, সহীহুল জামে হা/৪৫৩৩, সহীহ)

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত,

«لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّجُلَ يَلْبَسُ لِبْسَةَ الْمَرْأَةِ، وَالْمَرْأَةَ تَلْبَسُ لِبْسَةَ الرَّجُلِ»
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেসব পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন যারা নারীদের পোশাক পরে এবং সেসব নারীকে অভিসম্পাত করেছেন যারা পুরুষের পোশাক পরিধান করে।
[আবু দাউদ : ৪০৯৮]

ইসলামের দৃষ্টিতে অমুসলিমদের রীতি-নীতি ও কৃষ্টি-কালচার অনুসরণ করা হারাম:

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
“যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে।”
[সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছেদ হা/৪০৩১-হাসান সহিহ]

পুরুষদের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার করা হারাম:

পুরুষদের জন্য স্বর্ণের তৈরি আংটি, হাত ঘড়ি, ব্রেসলেট, গলার মালা, চশমার ফ্রেম, জামার বোতাম, কলম ইত্যাদি ব্যবহার করা বৈধ নয়।

যায়েদ ইবনে আকরাম রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

أحل الذهب والحرير لإناث أمتي وحرم على ذكورهم
“স্বর্ণ ও রেশমি বস্ত্র আমার উম্মতের নারীদের জন্য বৈধ এবং পুরুষের জন্য হারাম করা হয়েছে।”
(সিলসিলা সহীহা হা/১৮৬৫/৩০৩০)

অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:

‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি ‘আলী ইবনে আবু তালিব রা.-কে বলতে শুনেছেন,

إِنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَخَذَ حَرِيرًا فَجَعَلَهُ فِي يَمِينِهِ وَأَخَذَ ذَهَبًا فَجَعَلَهُ فِي شِمَالِهِ ثُمَّ قَالَ ‏ “‏ إِنَّ هَذَيْنِ حَرَامٌ عَلَى ذُكُورِ أُمَّتِي”‏ ‏
“আল্লাহর নবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ডান হাতে রেশম ও বাম হাতে স্বর্ণ নিয়ে বললেন: এ দু’টি জিনিস আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য হারাম।”
(সুনানে আবু দাউদ, অনুচ্ছেদ নারীদের জন্য রেশমি পোশাক বৈধ, সহিহ)

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আল্লাহর নিষিদ্ধ কৃত সকল কর্মকাণ্ড থেকে বাঁচার তাওফিক দান করুন। আমীন।

আল্লাহু আলাম।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture