Q/AAbdullahil Hadi

শাবান মাসে নফল রোজা রাখার সুন্নতি নিয়ম কী

অর্ধ শাবানের পর কি রোজা রাখা নিষিদ্ধ?
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি পুরো শাবান মাসটাই রোজা রাখতেন?

শাবান মাসে নফল রোজা রাখার সুন্নতি নিয়ম:

শাবান মাসে অধিক পরিমাণে নফল রোজা রাখা মোস্তাহাব। পুরো শাবান মাস রাখা ঠিক নয়। অর্থাৎ শাবান মাসকে রোজা রাখার মাধ্যমে রমজানের সাথে যুক্ত করা উনুচিত।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আমল থেকে আমরা শাবান মাসে রোজা রাখার সুন্নতি পদ্ধতি পাই।

আয়েশা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

لَمْ يَكُنْ النَّبِيُّ -صلى الله عليه وسلم- يَصُومُ شَهْرًا أَكْثَرَ مِنْ شَعْبَانَ، فَإِنَّهُ كَانَ يَصُومُ شَعْبَانَ كُلَّهُ، وَكَانَ يَقُولُ: خُذُوا مِنْ الْعَمَلِ مَا تُطِيقُونَ فَإِنَّ اللَّهَ لا يَمَلُّ حَتَّى تَمَلُّوا، وَأَحَبُّ الصَّلاةِ إِلَى النَّبِيِّ -صلى الله عليه وسلم- مَا دُووِمَ عَلَيْهِ وَإِنْ قَلَّتْ، وَكَانَ إِذَا صَلَّى صَلاةً دَاوَمَ عَلَيْهَا
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসের চেয়ে অধিক রোজা আর কোনও মাসে রাখতেন না। তিনি (প্রায়) পুরো শাবান মাস রোজা রাখতেন। তিনি বলতেন, “তোমরা এমন আমল গ্রহণ করো যা তোমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকে। কারণ আল্লাহ তাআলা বিরক্ত হন না যতক্ষণ না তোমরা বিরক্ত হও।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এমন নামাজই পছন্দনীয় যা নিয়মিতভাবে আদায় করা হয় যদিও তা স্বল্প হয়। তাঁর নিয়ম ছিল, যখন তিনি কোনও নামাজ পড়তেন নিয়মিতভাবে তা পড়তেন। [বুখারি, কিতাবুস্‌ সাওম। মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম]

আয়েশা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

كان رسول الله صلَّى الله عليه وسلَّم يصوم حتى نقولَ: لا يُفطر، ويُفطر حتى نقول: لا يَصوم، فما رأيتُ رسول الله صلَّى الله عليه وسلَّم استكملَ صِيامَ شهرٍ إلاَّ رمضان، وما رأيتُه أكثرَ صيامًا منه في شعبان
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন (নফল) রোজা রাখতে শুরু করতেন তখন আমরা বলতাম যে, তিনি রোজা রাখা আর বাদ দিবেন না। আবার যখন রোজা বাদ দিতেন তখন আমরা বলতাম যে, তিনি আর রোজা করবেন না। তবে তাঁকে রমজান ছাড়া পরিপূর্ণভাবে অন্য কোনও মাসে রোজা রাখতে দেখিনি এবং শাবান মাসের চেয়ে অন্য কোনও মাসে এত বেশি রোজা রাখতে দেখিনি।” [বুখারি, কিতাবুস্‌ সাওম। মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম]

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি পূরো শাবান মাস ব্যাপী রোজা রাখতেন?

উপরোক্ত হাদিসে রয়েছে, মা জননী আয়েশা রা. বলেছেন,
“তাঁকে রমজান ছাড়া পরিপূর্ণভাবে অন্য কোনও মাসে রোজা রাখতে দেখিনি।” এ হাদিসের সমার্থবোধক আরেকটি হাদিসে এসেছে,

فَإِنَّهُ كَانَ يَصُومُ شَعْبَانَ كُلَّهُ
“রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরো শাবান রোজা রাখতেন।”
[সহিহ বুখারি]

এর ব্যাখ্যা মুহাদ্দিসগণ বলেছেন, এ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, প্রায় পুরো মাস। অর্থাৎ আরবি ভাষায় সামান্য বাকি থাকলেও তাকে ‘সম্পূর্ণ’ হিসেবে উল্লেখ করার রীতি প্রসিদ্ধ। এ ব্যাখ্যাটিকে সমর্থন করে নিম্নোক্ত হাদিসটি:

বুখারি (১৯৭০) ও মুসলিম (১১৫৬) হাদিসে আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন,

انَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُ شَعْبَانَ كُلَّهُ، يَصُومُ شَعْبَانَ إِلا قَلِيلا
“রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরো শাবান মাসই রোজা রাখতেন অল্প কিছু দিন ছাড়া।” (সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় এই শব্দগুলো রয়েছে।)

ইমাম নওয়াবি রহ. বলেন, “আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর বক্তব্য ‘তিনি শাবান মাসে প্রায় পুরো মাসই রোজা রাখতেন’ এবং “তিনি শাবান মাসে অল্প কিছু দিন ছাড়া সব দিন রোজা রাখতেন”—এই দ্বিতীয় বক্তব্যটি প্রথম বক্তব্যের ব্যাখ্যা। এটি স্পষ্ট করে যে, ‘পুরো মাস’ বলতে তিনি মাসের বেশিরভাগ সময় বোঝাচ্ছেন।”

শাবান মাস অর্ধাংশ অতিবাহিত হওয়ার পর কি নফল রোজা রাখা নিষিদ্ধ?

আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

إِذَا انْتَصَفَ شَعْبَانُ فَلا تَصُومُو
“শাবান মাস অর্ধেক হয় গেলে তোমরা রোজা রাখিও না।”
[মুসনাদ আহমদ (২/৪৪২), আবু দাউদ, অনুচ্ছেদে, এমনটি করা অর্থাৎ অবিচ্ছিন্নিভাবে শাবান ও রমজান দু মাস রোজা রাখা অনুচিত। শাইখ আলবানি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। দ্রষ্টব্য: সহিহ তিরমিজি, হা/৫৯০]

এ হাদিসের অর্থ হল, যে ব্যক্তি শাবান মাসের প্রথম থেকে রোজা রাখেনি সে যেন অর্ধ শাবানের পর আর রোজা শুরু না করে করে। তবে যে ব্যক্তি শাবান মাসের শুরু থেকে রোজা রেখেছে সে রাখতে পারে।

অনুরূপভাবে যার উপর গত বছরের রোজা কাজা আছে অথবা যার প্রতি সোম ও বৃহ:বার রোজা রাখা অভ্যাস সেও পনের তারিখের পর রাখতে পারে। যেমন হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

لاَ تَقَدَّمُوا الشَّهْرَ بِيَوْمٍ وَلاَ بِيَوْمَيْنِ إِلاَّ أَنْ يُوَافِقَ ذَلِكَ صَوْمًا كَانَ يَصُومُهُ أَحَدُكُمْ
“রমজান মাস আগমনের একদিন বা দুই দিন পূর্ব থেকে তোমরা (নফল) সিয়াম পালন করবে না। হ্যাঁ, যদি বা তোমাদের কারো পূর্ব (অভ্যাস অনুসারে) সিয়াম পালনের দিনে পড়ে যায় তবে সে দিনের সিয়াম পালন করতে পার।” [বুখারি ও মুসলিম]
তাছাড়া পূর্বোল্লিখিত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায় পুরো শাবান মাস রোজা পালন করতেন।

উল্লেখ্য যে, “শাবান মাস অর্ধেক হয় গেলে তোমরা রোজা রাখিও না।”
অনেক মুহাদ্দিস এ হাদিসটিকে জইফ (দুর্বল) বলেছেন।
যেমন: আহমদ বিন হাম্বল ও ইবনে মাইন বলেন, মুনকার। আর জইফ বলেছেন, বাইহাকি, তাহাবি প্রমূখ-যেমনটি উল্লেখ করেছেন ইবনে হাজার তার ফাতহুল বারি গ্রন্থে।

কিন্তু সহিহ ধরা হলেও সকল হাদিস সামনে রাখলে উপরোক্ত ব্যাখ্যার আলোকে অর্ধ শাবানের পরও রোজা রাখা জায়েজ প্রমাণিত হয়।
আল্লাহু আলাম।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture